টরে টক্কার দিন

টেলিগ্রাফ নামক যন্ত্রটার কথা হয়তো তমরা বইপত্রে পড়েছো, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এই যন্ত্রটা এখন কেউ সেভাবে চিনেই না। তবে একটা সময় ছিল যখন টেলিগ্রাফ যন্ত্রটাই ছিল দ্রুত তথ্য আদান প্রদানের একমাত্র ভরসা।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2017, 01:16 AM
Updated : 11 Jan 2017, 01:27 AM

টেলিগ্রাফ আবিষ্কার করেন স্যামুয়েল মোর্স, সেই ১৮৩৫ সালে। তবে টেলিগ্রাফ যন্ত্র চালানোর জন্য শুধু যন্ত্রটাই যথেষ্ট ছিল না। এটার একটা ভাসার দরকার ছিল। স্যামুয়েল মোর্স যন্ত্র নির্মাণে যেমন পটু ছিলেন সেটার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভাষা তৈরিতে সেরকম পটু ছিলেন না। এই কাজটা মোর্সের হয়ে করে দেন আরেকজন যার নাম আলফ্রেড ভেইল। এই ভাষার নাম মোর্স কোড, আর এইটাই হলো টেলিগ্রাফের ভাষা যেটাকে আমরা টরে টক্কা’র মতো শব্দে শুনতে পাই।

টেলিগ্রাফের মধ্য দিয়ে শব্দ বা কথা পরিচালিত হতো তরঙ্গের মাধ্যমে তরঙ্গ প্রেরণকারী যন্ত্র থেকে গ্রহণকারী যন্ত্রে আসলে কিছু শব্দ আসতো। এই শব্দগুলো কিছু ডট ড্যাশ এবং সংকেত দ্বারা লেখা কতো যেগুলোর পরে পাঠোদ্ধার করা হতো। এই কাজের জন্যও দক্ষ লোকের প্রয়োজন হতো যারা দ্রুত শব্দ শুনে সেটার মানে বের করতে পারতেন।

কিছু কিছু টেলিগ্রাফ যন্ত্রে শব্দের বদলে আলোও ব্যাবহার করা হতো তবে শব্দের যন্ত্রের সংখ্যাই বেশি।

এখন বলি ভেইলের আবিষ্কার করা কোড কীভাবে মোর্সের নাম পায়। বিষয়টা একটু জটিল। মোর্সের যন্ত্রের পেটেন্ট মানে হল স্বত্বাধিকার আগেই মোর্সের নেওয়া ছিল। এই চুক্তির আওতায় যন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত সকল কাজই মোর্সের নাম পায়। তবে মোর্স ভেইলকে অস্বীকার করেননি কখনও।

মোর্সের এই টেলিগ্রাফ যন্ত্র ভেইলের ভাষা নিয়ে ১৮৩৮ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি তারিখে যাত্রা শুরু করে। যেহেতু সে আমলে তথ্য আদান প্রদান খুবই দুরূহ ছিল তাই আবিষ্কারের পর পরই প্রথমে সেনাবাহিনীর লোকদের কাছে এবং জাহাজে এই যন্ত্রের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে যায়। প্লেন চালানোর ক্ষেত্রেও এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।  

বলতে গেলে ১৮৩৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রায় দুইশ বছর এই যন্ত্র আর তার ভাষা পৃথিবী ব্যাপী আধিপত্য বজিয়ে রাখে। তবে উনি বিংশ শতকের শেষের দিকে ইন্টারনেট শেষ পর্যন্ত টেলিগ্রাফের যুগের অবসান ঘটায়। ১৯৯৯ পর্যন্ত তাও অনেক জাহাজে এই যন্ত্রটা ছিল।

টেলিগ্রাফকে নিয়ে কতরকমের গল্প, জীবন আর রেকর্ড আছে এর কোনো সীমা নেই। তবে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন টেরি টারনার ১৯৪২ সালে উনি এক মিনিটে ৩৫টা শব্দ পাঠোদ্ধার করে রেকর্ড করেছিলেন।

ভাবছো, এ আর এমন কী! তাহলে এসো তোমাদের মোর্স কোডে কিছু লিখেই দেখাই, -- .- -.- ... ..- -.. .- / .- --.. .. --.. বলতে পারবে এর অর্থ কী? তোমাদের কাছে নিশ্চয়ই এখানে কতগুলো ডট আর ড্যাশ চিহ্ন ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না? আমার কাছেও না। তবে এখানে লেখা হয়েছে “Maksuda Aziz” এটা আমার নাম। এখানে ডট আর ড্যাশ দিয়ে এক একটা সংখ্যা বোঝায় যেগুলো আসলে এক একটা বর্ণের ক্রম। যেমন, -- মানে M, .- মানে a, -.- মানে k. দেখবে এখানে একটা / চিহ্নও আছে। এটার অর্থ দুইটা শব্দের মধ্যে বিরতি। । বা / চিহ্ন দিয়ে বিরতি বোঝাতে হয়।

যারা মোর্স কোড পাঠাতো বা গ্রহণ করতো তাদের জন্য কাজটা আসলে আরও অনেক কঠিন ছিল কারণ তাদের শব্দ শুনে এই ডট ড্যাশের মান নির্ণয় করতে হতো। বিষয়টা কতটা কঠিন ছিল তা বুঝতে হলে, নিচের ওয়েবসাইটে যেতে পারো। এখানে তোমরা ইচ্ছে মতো কিছু লেখার সাথে সাথে নিজ কানেই শব্দগুলো শুনতে পারবে।

মোর্স কোডের সবচেয়ে মজার জিনিস হলো এটার শব্দের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে মেসেজের দাম নির্ধারণ করা হতো। তাই তখন মানুষ কম কথায় অনেক কিছু বোঝানোর জন্য মজার মজার বাক্য লিখতো। যেমন, ১৯৯৭ সালে  ফ্রান্সের নৌ বাহিনী টেলিগ্রাফ যন্ত্র ব্যাবহার করে শেষ যে মেসেজটি পাঠিয়েছিল তা ছিল, "Calling all. This is our last cry before our eternal silence." এর মানে হলো, “সবাইকে বলছি, চিরতরে থেমে যাওয়ার আগে এটাই আমাদের শেষ চিৎকার।”