কমলা ডুবে কমলা ভাসে

মাঝে মাঝে আমাদের সামনে অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন চলে আসে। যেমন পানি যদি একটা আপেল ফেলা হয় তবে আপেলটা ডুবে যায় আবার একই সমান ভরের একটা কমলা পানিতে কীভাবে ভাসে! তার থেকেও বড় কথা কমলা এমনিতে তো কমলা পানিতে ভাসে, তবে খোসা ছাড়িয়ে সেই কমলাটা পানিতে ফেললে সেটা টুপ করে ডুবে যায়, কেন?

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2017, 08:25 AM
Updated : 1 Jan 2017, 08:25 AM

হুম, বিষয়টা ঘোটালো বটে তবে বিজ্ঞানের কাছে এর জবাব আছে। সেই ব্যাখ্যাটা বেশ মজার। ধরো আমরা যখন কোন বস্তুকে পানিতে ফেলি তখন বস্তুটা তার ওজনের সমপরিমাণ পানিকে অপসারণ করে পানিরে জায়গা করে নেয়। এখন এই বস্তুটা পানিতে ভাসবে না ডুববে এটা নির্ধারণ করতে আরও একটা জিনিস জড়িত তার নাম ঘনত্ব। এখন এই ঘনত্ব কী? তোমরা জানো প্রতিটা বস্তুর একটা আয়তন আছে মানে সে জায়গা দখল করে। প্রতি একক আয়তনে বস্তুটির ভরকে বলে ঘনত্ব। এখন একটা বস্তুর আয়তন যদি পানির আয়তনের চেয়ে কম হয় তবে বস্তুটি ভেসে থাকে। আর যদি বস্তুর ঘনত্ব পানির ঘনত্বের বেশী হয় তবে বস্তুটি পানিতে ঢুবে যায়।

এই তত্ত্বটার একটা মজার উদাহরণ হল লোহার টুকরা আর লোহার জাহাজের উদাহরণ। ছোট এক টুকরা লোহাও যদি পানিতে ফেলো সেটা সাথে সাথে ডুবে যায়। কিন্তু একটা কত বিশাল লোহার তৈরি জাহাজ কত তার ওজন কিন্তু সেটা দিব্যি পানিতে লোকজন, মালপত্র এমনকি বিশাল লোহার টুকরা নিয়েও দিব্যি ভেসে থাকে।

এখানেই বিজ্ঞানের মজাটা। যখন বিজ্ঞান বলছে আয়তন আর ভরের গুণফল হচ্ছে ঘনত্ব তখন মানুষ বুদ্ধি করে লোহাকে পিটিয়ে লম্বা আর পাতলা করে ফেলে। তখন একই ভর অনেক বেশি আয়তনের জায়গা দখল করে। মানে হল একক আয়তনে ভর কমিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে পানির ঘনত্ব তো যা ছিল তাই থাকে। তাই লোহার পাত ঢুবে গেলেও জাহাজ বেশ সহজেই ভেসে থাকে।

তবে আমরা ছিলাম কমলার প্রশ্নে। এইখানে কিন্তু আমরা কমলাকে পিটাতে পারব না। ফলে ঘনত্ব বাড়ানো বা কমানোর প্রশ্নই আসে না। তাহলে খোসাসহ কমলা কীভাবে ভাসে আর খোসা খুলে ফেললে টুপ করে ডুবে যায়?

এর কারণ এতই সোজা যে অত লোহা পাত ঘনত্ব কোনো কিছুই জানার দরকার ছিল না। এগুলোর কোনোটাই খোসাসহ কমলার পানিতে ভাসার কারণ নয়। খোসাসহ কমলা পানিতে ভাসার একমাত্র কারণ কমলার খোসায় খুব ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্রে বাতাস জমে থাকে। পানিতে যখন কমলাকে ছাড়া হয় তখন এই ছিদ্রে থাকা বাতাস কমলাকে ভাসিয়ে রাখে। আপেলের খোসাটা মসৃণ এখানে কোনো বাতাস জমায় জায়গাই নেই। তাই সেটা শুরুতেই টুপ করে ডুবে যায়। আমরা যখন কমলার খোসাটা ছাড়িয়ে দেই। তখন সেই বাতাস জমার জায়গাটাও চলে যায়। তারপর আর কী? যা হওয়ার তাই হয়। কমলাটা খোসা ছাড়িয়ে পানিতে ফেললে সেটা টুপ করে ডুবে যায়।