বক্সার রতন

বইয়ের নাম: বক্সার রতন লেখক: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স (কলকাতা) মূল্য: ১৮০ টাকা

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2016, 11:59 AM
Updated : 20 Dec 2016, 11:59 AM

রতন বেশ গরীব ঘরের ছেলে। আয় রোজগার বলতে তার ছোট একটা চাকরি। সে চাকরিও পেয়েছে বক্সিং করার সুবাদে। হ্যাঁ ছোট চাকুরে হওয়ার পাশাপাশি রতনের একটা বড় পরিচয়ও আছে। সে একজন বক্সার। এবং বেশ দুঁদে বক্সারই। এ বছরই সে লাইট হেভিওয়েটে জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাও এলেবেলে কাউকে হারিয়ে না। সুব্বার মতো শক্তিশালী ও কৌশলী বক্সারকে হারিয়ে যে কিনা অলিম্পিকে প্রায় ব্রোঞ্চ জিতে ফেলেছিল।

বক্সিং রিং-এ রতন যতই সবার মাথায় উঠে থাকুক না কেন। দিন শেষে রতনের জীবনে সবচেয়ে বড় সত্য কথা হলো, রতন খুব গরীব এবং খুব একাও। আপন বলতে রতনের শুধু এক বড় বোন আছে সেও বিয়ে করে কর্ণাট চলে গিয়েছেন। কর্ণাট পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক দূরে। একদম দক্ষিণ ভারতে। এত দূর থেকে দিদি আর সেভাবে খবর নেওয়ার সময় অথবা সুযোগ করে উঠতে পারেন না।

বাড়িতে রতন থাকে তার বাবার সঙ্গে। ভাবছ বাবা তো আছেই তবে রতনকে একা বললাম কেন? রতনের বাবা বাঞ্ছারাম বিরাট বিজ্ঞানী ছিলেন। বাবা যখন বিরাট বিজ্ঞানী ছিলেন রতনদের জীবনও অন্য রকম ছিল। ওরা গরীব ছিল না। জীবনে আনন্দের অভাব ছিল না। বাঞ্ছারাম শুধু যে বিরাট বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি নাকি ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু কীভাবে যেন এর পরেই তিনি পাগল হয়ে যান। কেউ কেউ বলে তার সহকারী তাকে ওষুধ খায়িয়ে পাগল করে ফেলেছেন। কেউ জানে না এখন সেই ফর্মুলা বা সহকারী কোথায় আছে।

এদিকে রতন কিছুদিন থেকে লক্ষ করছে দুইজন বিদেশি লোক তার প্রতিটা ফাইট দেখছে। তাদের উপস্থিতি খুব অস্বস্তিতে ফেলে রতনকে। জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন সুব্বার সঙ্গে লড়াইয়ের আগে রতনের মাথায় দুশ্চিন্তা দুই বিদেশিকে নিয়ে। সুব্বাকে হারিয়ে জাতীয় বক্সিং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রাতে রতন যখন একা একা তার বাবা, দিদি আর মৃত মায়ের কথা ভাবছিলো তখন সেই রহস্যময় দুই বিদেশি রতনের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তারা নিজেদের পরিচয় দেয় জন ও রোলো নামে। তারা অভয় দেয় তারা রতনের বন্ধু ভয়ের কিছু নেই।

জন আর রোলো যদিও রতনকে আমেরিকা নিয়ে বক্সার বানানোর বিরাট সম্ভাবনার কথা বলে কিন্তু সহসাই বের হয়ে আসে তাদের আসল উদ্দেশ্য। তারা আসলে রতনের বাবা বাঞ্ছারামের বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

এই দুই বিদেশির কাছেই রতন জানতে পারে তার বাবা বিজ্ঞানী বাঞ্ছারামের সেই হারিয়ে যাওয়া ফর্মুলা সম্পর্কে। বর্তমানে পৃথিবীর জ্বালানী সমস্যা দুর করার জন্য বাঞ্ছারাম একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন, যেটা দিয়ে শব্দ অ্যামপ্লিফায়ার করার মতো তাপ অ্যামপ্লিফায়ার করা যাবে। এর মানে হলো, অল্প তাপকে অ্যামপ্লিফাই অর্থাৎ বাড়িয়ে প্রচুর তাপ উৎপাদন করা যাবে। যা পৃথিবীর শক্তি অভাব দূর করতে সাহায্য করবে।

বাঞ্ছারাম পাগল হওয়ার ১২ বছর পর জন ও রোনো এসেছে রতনের কাছে। বাঞ্ছারামের ফর্মুলার প্রতি তাদের আগ্রহ। কিন্তু রতন তো জানে না ফর্মুলা কোথায়। বাঞ্ছারাম তার যন্ত্রের কাজ শেষ করেছিলেন সেটাই কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। জন ও রোলোই বা কেমন মানুষ শত্রু না মিত্র তাই বা কে বলবে রতনকে?

রোলো আর জন রতনকে বলে গেল সে বাড়ি ফিরলে ওরা আবার আসবে। কিন্তু রতন বাড়ি ফেরার আগেই গুম হয়ে গেল ওর বাবা বাঞ্ছারাম। অসহায় রতন আরও নিরুপায় হয়ে গেল। কীভাবে এই সব সমস্যা থেকে নিজেকে আর বাবাকে রক্ষা করবে সে? জন আর রলাই বা কে? কথায় গেল রতনের বাবার সেই সহকারী আর এত ঝামেলার পিছনে কারণই বা কী এই সব জানতে হলে পড়তে হবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের “বক্সার রতন” নামে এই বইটি।

শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ বইয়ে খুব বেশি অদ্ভুত ভূত পাওয়া যায়। মধ্যে মধ্যে অদ্ভুত ডাকাত আর গুপ্তধনও পাওয়া যায়। এই বইটা অন্যদের থেকে বেশ আলাদা। এটাকে বরং বলা যায় সায়েন্স ফিকশন থ্রিলার। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের আগ্রহ টান টান থাকে। এমনকি বই শেষ হয়ে গেলেও পাঠকের মুগ্ধতা শেষ হতেই চাইবে না।