পিপলী বেগম

আমাদের দেখা দুনিয়ার বাইরেও একটা দুনিয়া আছে যেটা আমাদের দুনিয়ার থেকেও অনেক মজার।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2016, 08:49 PM
Updated : 28 Nov 2016, 08:50 PM

বই: পিপলী বেগম

লেখক: হুমায়ূন আহমেদ

প্রকাশকাল: ১৯৯৩

প্রকাশক: অবসর প্রকাশনা সংস্থা

মূল্য: ৭০ টাকা

কিছুদিন আগে আমরা অ্যামেইজিং মিস্টার ফক্স নামে একটা বইয়ের গল্প শুনেছিলাম। সেই বইটির লেখকের নাম রোয়াল্ড ডাল। ইংরেজি সাহিত্যে রোয়াল্ড ডাল একজন অনন্য সাধারণ লেখক। কেননা তার দেখার ভঙ্গিটাই আলাদা। পৃথিবীকে উনি একদম অন্য একটা দিক থেকে দেখেন যেদিক থেকে দেখার কথা কেউ কোনোদিন ভাবতেই পারেননি। তাই তাকে বলা অয় সেরা গল্প কথক। বাংলা ভাষায় এই সেরা গল্প কথকের স্থান দখল করে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার লেখা প্রায় সব রকম বইয়ের জনপ্রিয়তা একদম আকাশচুম্বী। কিন্তু তারা লেখা ছোটদের গল্পের জুড়ি মেলা সত্যিই ভার। অদ্ভুত সব গল্প তুলে তুলে এনেছেন ছোট ছোট ছেলে মেয়ের জন্য। তার লেখা গল্পগুলো পড়লে তুমি পৃথিবীকে আসলেই একটা অন্য দিক থেকে দেখতে পাবে। 

পিপলী বেগম ঠিক সেরকম একটি অন্য দিক থেকে পৃথিবীকে দেখানোর বই। এখানে এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটা পিঁপড়া। আমি একদম বানিয়ে বলছি না, সত্যিই এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র একটা পিঁপড়া। তবে এই পিঁপড়াটা কে এটা জানার আগে জানতে হবে তিলু, বিলু ও নীলুর কথা।

তিলু, বিলু ও নীলুর বাবার নাম মতিন সাহেব। ওদের তিনবোনের মধ্যে তিলু সবার বড়, সে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। তার ছোটটা বিলু, সেও একই স্কুলে থ্রি তে পড়ে। সবার ছোট নীলু, এখনও কোথাও ভর্তি হয়নি।

তিলু, বিলু বা নীলু কারও সঙ্গেই অবশ্য তাদের বাবা মতিন সাহেবের তেমন খাতির নেই। মতিন সাহেব ডাক্তার মানুষ। সারাদিন নিজের কাজের ব্যস্ত, ব্যস্ত আর ব্যস্ত। এমন অবস্থায় কারই বা বাবার সঙ্গে দেখা হওয়া সম্ভব বলো? তবে তিলু, বিলু আর নীলুর বাবা ব্যস্ত হলেও মেয়েদের একদম ভুলে বসেননি। উল্টা মেয়েরা যেন তাকে ভুলে না যায় তাই দুই দিনের ছুটি নিয়েছেন বাচ্চাদের সঙ্গে কাটাবেন বলে।

প্রথম দিন যেমন তেমন গেলেও, দ্বিতীয় দিন প্রচণ্ড বৃষ্টি নামল। এদিকে তিলু, বিলু আর নীলুর মা বাসায় নেই, তিনি ওদের মামার বাড়ি একাই গিয়ে আটকে গিয়েছেন, বৃষ্টির জন্য রাতে ফিরতেও পারবেন না। তিন মেয়ে বাবাকে পেয়ে গল্প শোনানোর আবদার জুড়ল। তবে গল্প কীসের হবে এই বিষয়ে কেউ ঐক্যমত্যে আসতে পারছে না। কেউ বলে বাঘের গল্প শুনাতে, কেউ বলে ভূতের গল্প শুনাতে, আবার কেউ বলে হাতির গল্প শোনাতে। সব ভেবে-টেবে মতিন সাহেব শুরু করেন একটা পিঁপড়ার গল্প। নাম তার পিপলী বেগম।

পিঁপড়া বলে আবার নাক সিটকে উঠো না। পিপলী বেগম যেন তেন পিঁপড়া নয়। আর যেন তেন হলেই বা কী? পিঁপড়ারা হল সবচেয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রাণী। বিজ্ঞানীরা বলেন পিঁপড়াদের জীবনে এতই কাজ যে ওদের এক একটা বাসাকে একটা ইন্ডাস্ট্রি বলে চালিয়ে দেওয়া যায় অনায়াসেই।

সে যাই হোক, আমাদের গল্পের পিঁপড়া, পিপলী বেগম রীতিমতো স্কুলে পড়ে। মানুষের মতো তাদেরও স্কুল কলেজ পড়াশোনার বিষয় আছে। শুধু কি তাই, ওদের হাসপাতালও আছে। বাড়িঘরও আছে।যেন তেন বাড়ি না একদম আধুনিক ফ্ল্যাটবাড়ি। যেমন, একরুমের একটা ফ্ল্যাটে পিপলীরা থাকে। পিপলীর বাবা খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে কালো পিঁপড়াদের হাতে বন্দি। পিপলী থাকে তার মা ও দাদীর সঙ্গে। পিপলীর দাদী খুবই অদ্ভুত তার কথার অত্যাচারে পিপলী অতিষ্ঠ। মাঝরাতে তিনি পিপলীকে ডেকে তুলে গল্প শোনান, ছড়া শোনান। তার মতোই অদ্ভুত তার ছড়াও। যেমন একরাতে বলছেন, 

যা বৃষ্টি যা,

যেখান থেকে এসেছিলি

সেইখানেতে যা।

সেইখানে তোর মা আছে

মায়ের কোলের আদর আছে।

যা বৃষ্টি যা,

মায়ের কোলে বসে বসে

মায়ের আদর খা।

কেমন অদ্ভুত কবিতা বলো দেখি!

এদিকে পিপলীকে একদিন তাদের রাণী ডেকে পাঠান। তোমরা তো জানোই পিঁপড়াদের এক একটা সমাজে একজন করে রাণী থাকেন। তারাই সমাজের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। রাণী ডেকে পাঠালে তো অবশ্যই জরুরী কোনো বিষয়। পিপলী রাণীর কাছে যায়, বেশ গল্পও করে। কিন্তু রাণী তাকে অন্ধকার গর্তে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

চমৎকার পিপলীর হঠাৎ এমন পরিণতি কেন হলো, এখন পিপলী কীভাবে মুক্তি পাবে এইসব বিষয়ে জানতে হলে পড়তে হবে হুমায়ুন আহমেদের “পিপলী বেগম” বইটি।

১৯৯৩ সালে প্রথম প্রকাশ হওয়ার পরে ২০১২ পর্যন্ত এই বইটির প্রায় ছয়টি মুদ্রণ বের হয়েছে। ইদানীং বইয়ের দোকানে নতুন করে এই বইটা পাওয়া যায় না এমন অভিযোগও আছে। তবে ভাবনার কিছু নেই। পুরাতন বইয়ের দোকানে অথবা কোনো না কোনো আত্মীয়ের বাসার বইয়ের শেলফে তুমি এই বইটি খুঁজে পাবেই। চাইলে কোনো বন্ধুর সঙ্গে অন্য কোনো বইয়ের বিনিময় পড়তে পারো এই অসাধারণ বইটি।