পার্বত্য সিংহ

তোমরা কি কখনও এমন কোনো ক্যাপ মাথায় দিয়েছো বা টি-শার্ট পরেছো যেখানে ছোট্ট করে লাফিয়ে পড়তে প্রস্তুত এমন একটি সিংহের ছবি থাকে। তাহলে হয়তো এও দেখেছো এর সঙ্গেই লেখা থাকে ‘পুমা’ (puma)? পুমা পৃথিবীর সেরা স্পোর্টস ব্রান্ডগুলোর একটি।

>>নাজিয়া প্রভাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2015, 01:52 PM
Updated : 6 Oct 2016, 00:04 AM

কিন্তু তুমি কি জানো  পুমা আসলে একটি সত্যিকারি প্রাণী, সবাই একে পার্বত্য সিংহ নামে চিনে। পুমার সায়েন্টিফিক নাম Puma concolor.  এরা Felidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। পার্বত্য সিংহরা প্রায় নয় থেকে বারো বছর পর্যন্ত বাঁচে। অন্য সব সিংহের মতো এরাও  মাংসাশী প্রাণী। যদিও এদের নাম পার্বত্য সিংহ,  কিন্তু পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও ওদের মরুভূমি, তৃণভূমি এবং বনাঞ্চলেও দেখতে পাওয়া যায়।

পার্বত্য সিংহ ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- কুগার, ক্যাটা-মাউন্ট, প্যান্থার, লাল বাঘ, হরিণ বাঘ এবং পুমা। তোমরা যদি বিভিন্ন এডভেঞ্চার বই পড়ো তাহলে হয়তো এই নামগুলো চোখে পরে যাবে। এই বিড়াল প্রজাতির প্রাণীটিকে সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে পাওয়া যায়।

এক সময় সমগ্র আমেরিকাতেই এদের বিস্তৃত ছিলো। এখন কমতে কমতে ওদের এখন শুধু পশ্চিম আমেরিকাতেই পাওয়া যায়। তবে এখনও ফ্লোরিডাতে একটি বিপন্ন প্রজাতি টিকে আছে। এই বিড়াল জাতীয় প্রাণীটির অভিযোজন ক্ষমতা বেশ চালো। ওরা নানাও রকম পরিবেশে নিজেদের আবাস বানাতে পারে।  বলে হয়ে থাকে,  মানুষদের পরে এরাই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রজাতি যারা কিনা পশ্চিম গোলার্ধের সর্ববৃহৎ এলাকা জুড়ে বাস করে।

উত্তর আমেরিকার পার্বত্য সিংহরা প্রধানত হরিণ শিকার করে খেয়ে থাকে কিন্তু অন্যান্য ছোট প্রাণী যেমন ইঁদুর আর খরগোশও শিকার করে থাকে। তোমাদের হয়ত জেনে খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই প্রকৃতির নিয়ম। এদের খেয়েই যে সিংহদের বাঁচতে হবে। পুমাদের ঘ্রাণশক্তি খুব দুর্বল হলেও এদের আছে প্রবল শ্রবণশক্তি এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি। তাই তাদের ভোরবেলা এবং সন্ধ্যাবেলা অনায়াসে শিকার করতে পারে। পার্বত্য সিংহ কিন্তু অনেক লম্বা লম্বা লাফ দিতে পারে। এক একটি লাফ দিয়ে ওরা প্রায় ৪০-৪৫ ফিট দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলে। এই কারণেই পুমা ব্র্যান্ডে ওদের অমন লাফ দেয়ার ভঙ্গিটা দেখতে পাই। তবে পুমারা এমন লম্বা লাফ দিতে পারে কেন জানো? কারণ ওদের পিছনের পা দুইটি খুবই শক্তিশালী। তোমরা কিন্তু আবার এভাবে লাফ দিয়ে পরীক্ষা করতে যেয়ো না। আমাদের যে শুধু অত শক্তিশালী পেছনের পা নেই তাই নয়। আমাদের সামনের হাতও এত লম্বা লাফ ব্যালেন্স করার মতো শক্তিশালী হয়।

ভয়ংকর এই শ্বাপদেরা ঘাপটি মেরে বসে শিকারকে অনুসরণ করতে থাকে, ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগের অপেক্ষায়। যখন শিকারকে কব্জা করতে সক্ষম হয় তখন তাকে লুকিয়ে রাখে নির্দিষ্ট গুপ্তস্থানে অথবা পাতা আর মাটির নিচে যেখানে তারা কয়েকদিন ধরে ঘুরে ঘুরে এসে শিকার করা প্রাণীটিকে খেতে পারবে। বুঝতেই পারছো ওরা শুধু শক্তিশালী নয়, বুদ্ধিমানও বটে।

সিংহ বলতেই কিন্তু আমরা আশা করি গুরুগম্ভীর গর্জনের। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানো, পার্বত্য সিংহরা কিন্তু পিলে চমকানো গর্জন করে না। শুধুমাত্র সিংহীরা জোরে চিৎকার করে। তবে সেটা শুনে পুরুষ সিংহরা ভয় পাওয়ার বদলে খুশি হয়ে যায়।

পার্বত্য সিংহীরা প্রতি বছর গড়ে ২-৪টি বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। নিজেদের ডেরায় এদের জন্ম হয়। জন্মের পর ছোট ছোট এই শাবকদের গায়ে কিছু দাগ থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা যখন একটু বড় হয়, এই দাগগুলো মিলিয়ে যায়, বাচ্চাগুলোর বয়স নয় মাস হওয়ার মধ্যেই এই প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে। একটি মজার ব্যাপার শোনো জন্মের সময় কিন্তু বাচ্চাগুলোর চোখের রঙ নীল থাকে, ১৬-১৮মাসের মধ্যে তা বদলে হয়ে যায় হলুদ রঙের। এই ছোট ছোট শাবকগুলো একটু বড় হলেই মাকে ছেড়ে বেরিয়ে পরে নিজেদের মত করে। আমাদের জন্য বিষয়টি চিন্তা করাও কঠিন কিন্তু জঙ্গলে যারা বাস করে তাদের ছোটবেলা থেকেই নিজের খেয়াল রাখা শিখতে হয়।