ইন্টারনেটের আগমনের দিন

তোমরা যারা এখন এই ফিচারটি পড়ছো তাদের জন্য ইন্টারনেট খুবই সাধারণ, অনেক ব্যবহার করা একটি শব্দ। ইন্টারনেট হচ্ছে দুইটা আলাদা এবং অন্য জায়গায় থাকার কম্পিউটারকে সংযুক্ত করার একটা নেটওয়ার্ক। এখন আধুনিক প্রযুক্তি এই সংযুক্তি শুধু কম্পিউটারে সীমাবদ্ধ রাখেনি। তোমরা চাইলে মোবাইল ট্যাবলেট কম্পিউটার এসব দিয়েও একে অন্যের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারো। প্রতিদিনের তথ্য আদান-প্রদানের কাজে, শিক্ষায় অথবা শুধুই যোগাযোগ রক্ষার জন্য ইন্টারনেট ছাড়া উপায় কী!

>>অগ্নিলা রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2015, 01:21 PM
Updated : 29 Oct 2015, 02:10 PM

কিন্তু একটা সময় এমনও ছিলো যখন পৃথিবীতে ইন্টারনেট বলে কিছুই ছিলো না। তখন কম্পিউটারগুলোও ছিল একটা আস্ত রুমের সমান বড়। কিছু কিছু তো আবার একটা হলরুমের সমান বড়। প্রয়োজনীয় কাজ-টাজ যদিও কম্পিউটার করে ফেলা যেতো কিন্তু একটা কম্পিউটার থেকে আরেকটা কম্পিউটারে কোনো তথ্য আনা-নেয়া করতে গেলে আলাদা হার্ড ড্রাইভের প্রয়োজন হতো।

লিওনার্ডো ক্লেইনরক

এরপর ১৯৬৯ সালে একটা ঘটনা ঘটলো। এটা মানব সভ্যতায় খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর। সে বছরই মানুষ চন্দ্র জয় করে। একদল মানুষ যখন চন্দ্র জয় করে আবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে তখন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এ্যাঞ্জলেসের (UCLA) কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন প্রফেসর ভাবলেন আচ্ছা এই কম্পিউটারগুলো জুড়ে দিলে কেমন হয়? প্রফেসর নাম ছিলো লিওনার্ডো ক্লেইনরক। উনার কম্পিউটারটি কিন্তু মোটেই তোমার কম্পিউটারের মতো এত রঙের ছিলো না। উনার কম্পিউটারে শুধু একটা স্ক্রিন ছিল যার রং ছিলো সবুজ। তো ক্লেইনরক স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির আরও দুই গবেষক চার্লি ক্লেইন ও বিল ডুভালকে ফোন করে জানালেন যে তিনি ওদের একটা একটা মেসেজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠাতে চান। এত মানুষ থাকতে ক্লেইনরক এই দুইজনকে কেন মেসেজ দিলেন জানো? উনারা আসলে ইউএস ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের অর্থায়নে একটা প্রোজেক্টে কাজ করছিলেন সেই প্রোজেক্টের নাম ছিলো, ARPANET (Advanced Research Projects Agency Network)। এই প্রোজেক্টের আওতায় উনারা চারটা ট্রান্সমিনাল ইন্সটল করলেন একটা UCLA-তে, দ্বিতীয়টা স্ট্যানফোর্ডে, তৃতীয়টি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-সান্টা বারবারাতে এবং চতুর্থটি ইউনিভারসিটি অফ ইউটাহ (university of Utah)-তে।

ইন্টারনেটের উদ্ভাবকেরা

চার্লি ক্লেইন UCLA থেকে স্ট্যানফোর্ডে বিল ডুভালকে লগইন (login) মেসেজ দিতে চাচ্ছিলেন। ক্লেইনর কাজটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন কিন্তু যেই না তিনি L এবং O পাঠালেন অমনি ট্রান্সমিনালের মধ্যের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তাই ইতিহাসের পাতায় প্রথম ইন্টারনেট মেসেজ হয়ে LO অমর হয়ে গেলো। যদিও একঘণ্টা পরে ক্লেইনরক Login মেসেজটি সফলভাবে পাঠাতে পেরছিলেন, তারপরেও প্রথম মেসেজের মর্যাদা সেই অর্ধেক পাঠানো মেসেজ LO-ই পেয়েছে।

বিল ডুলভাল

এই দিনটিকে স্মরণের রাখার জন্য ২০০৫ সাল থেকে আজকের দিনকে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এখন সবচেয়ে জরুরি যেই বিষয়টি জানা তা হলো। ক্লেইনরকদের সেই ইন্টারনেট কিন্তু ২০ বছর পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসেনি। ২০ বছর পরে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) যেটাকে সহজে আমরা www নামে চিনি প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পর ইন্টারনেট সবাই ব্যাবহারের উপযোগী হয়। এই প্রোজেক্টের রচয়িতা ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নাস-লি। এরপর কম্পিউটারেও অনেক পরিবর্তন এবং উন্নয়ন সাধন হয়। এতসব উন্নয়নের ফল তো তোমরা হাতেনাতেই পাচ্ছো।

যে কথাটা বলার লোভ মোটেই সামলাতে পারছি না, আজ কিন্তু বিখ্যাত সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার বিল গেটসের জন্মদিনও। তবে সালটা আলাদা ছিল। ইন্টারনেট বিল গেটসের থেকে ১৪ বছরের ছোটো।