অ্যানিমেশনের দিন

অ্যানিমেটেড সিনেমা আমাদের কার না পছন্দ। শুধু কি সিনেমার? এইসব সিনেমার চরিত্রগুলোও এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জন্মদিনের থিম বলো আর প্রিয় খেলনা বলো সবই অ্যানিমেটেড সিনেমার চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা পায়।

>>মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2015, 09:52 AM
Updated : 28 Oct 2015, 09:52 AM

আমরা কি জানি এই অ্যানিমেশনের শুরু কোথায়? ফ্রান্সে চার্লি-এমিল রিনইয়ু (Charles-Émile Reynaud ) বলে একজন উদ্ভাবক ছিলেন। তিনি ভেবে দেখলেন হাতে আঁকা কার্টুনগুলোকে চেষ্টা করলে নড়ানো চড়ানো যায়। কীভাবে? একটা ছবির কিছু অংশ অল্প একটু বদলে বদলে এঁকে যদি সেগুলোকে খুব দ্রুত গতিতে চালানো যায় তবে মনে হবে যে কার্টুনগুলো চলছে। এই বুদ্ধি মাথায় নিয়ে তিনি একটি মেশিন বানালেন। সেই মেশিনে ছবিগুলো লম্বা করে পর পর এঁকে সেগুলোর সামনে পরপর আয়না বসিয়ে হাতে চালানো একটা চাকা ঘুরিয়ে বানানো হল প্রজেকশন মেশিন। তবে রিনইয়ু এতেও সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি ছবিগুলো একটা ফিল্মে আঁকলেন এবং পিছনে একটা দৃশ্যের ব্যাকগ্রাউন্ড দেওয়ারও ব্যবস্থা করলেন। পুরো জিনিসটা ছিলো বায়স্কোপ বক্সের মতো। সেটাতেও রিনইয়ুর মন ভরলো না। উনি শেষে বানালেন বেশ জটিল একটি যন্ত্র, যেটিতে একই সঙ্গে সামনের ছবি পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং সামনের আয়না একই গতিতে ঘুরে একটা চলমান কার্টুন চিত্র তৈরি করে।

আমি বলছি সেটা ১৮৯২ সালের আগের ঘটনা। কেননা ১৮৯২ সালে রিনইয়ুর সেই যন্ত্র তৈরি হয়ে গেল। শুধু তৈরিই হল না। এই যন্ত্র নিয়ে তিনি প্যারিসের গেরভিন জাদুঘরে (Grevin Museum) ২৮ অক্টোবর ১৮৯২ সালে তার কোম্পানি থিয়েটার অপটিক একটি সিনেমা প্রদর্শন করেন। সেই সিনেমার নাম ছিল পুভার পিউহো (Pauvre Pierrot) এখানে ৫০০টি আলাদা আলাদা স্থিরচিত্র ছিলো। সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় হচ্ছে এই ৫০০টি ছবি হাতে আঁকা ছিলো এবং প্রতিটি ছবি এমনভাবে আঁকা হয়েছিলো যেন পর পর দ্রুত চালানো হলে মনে হয় পর পরের দৃশ্য।
অনেক বছর পর্যন্ত অ্যানিমেশন বিষয়টিই এমন ছিল যে প্রতিটা দৃশ্যের প্রতিটা মুহূর্ত আলাদা আলাদা করে হাতে এঁকে জুড়ে দিয়ে একটা আস্ত মুভি বানানো হতো। এখনকার যুগে কাজটা বেশ সহজ কেননা আমাদের হাতে হাতে একটি করে কম্পিউটার আছে কিন্তু তখন এটা অনেক কঠিন কাজ ছিলো।

চার্লি-এমিল রিনইয়ু’র এই প্রচেষ্টার ফলেই আজকে অ্যানিমেশন এই পর্যায় গিয়ে পৌছাতে পেরেছে। তার সেই কাজের স্বীকৃত সরূপ আজকের দিনকে অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরকে ২০০২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যানিমেটেড ফিল্ম এসোসিয়েশন এই দিনকে আন্তর্জাতিক অ্যানিমেশন দিন ঘোষণা করে।

এই দিনের তাৎপর্য শুধুমাত্র চার্লি-এমিল রিনইয়ুর কাজকে স্বীকৃতি দেয় না। বর্তমান অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত সকল শিল্পী ও প্রকৌশলীর বিষয়েও মানুষের সচেতনতা তৈরি করে। যারা নীরবে আমাদের জন্য একের পর এক চমৎকার অ্যানিমেটেড সিনেমা তৈরি করে যাচ্ছেন।

তোমরা কীভাবে আজকের দিনকে উৎযাপন করতে পারো জানো? খুব সহজেই। একটা অ্যানিমেটেড সিনেমা দেখে ফেলো। নিজের আঁকা কোনো ছবিকে অ্যানিমেশন করার চেষ্টা করো। চার্লি-এমিল রিনইয়ু সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করতেও পারো। অথবা তার বানানো প্রথম অ্যানিমেটেড সিনেমাটাই দেখে ফেললেও মন্দ হয় না।