দ্যা সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অফ অ্যারিয়ারটি

প্রতিদিন আমাদের বাসা থেকে কত কিছুই না হারিয়ে যায়। কখনও ভেবে দেখেছো কি জিনিসগুলো কোথায় যায়? আচ্ছা জিনিসগুলোর তো আর হাত-পা নেই। নিশ্চয়ই কেউ না কেউ সেগুলো নিয়ে যায়, কিন্তু তারা কারা?

>>অগ্নিলা রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2015, 01:19 PM
Updated : 5 Oct 2016, 07:59 PM

এই কখনওই জবাব না পাওয়া প্রশ্নের রেশ ধরে ছোটদের কল্পনার জগতকে উস্কে দিতে ১৯৫২ সালে ম্যারি নরটনের একটা কাল্পনিক উপন্যাস প্রকাশ পায়। নাম হল দ্যা বরোয়ারস (The Borrowers) বা বাংলায় বললে ধার নেয় যারা। ম্যারি নরটন তাঁর উপন্যাসে একটা অদ্ভুত প্রাণীর গল্প শুনিয়েছেন যাদের উনি বরোয়ার (borrower) বলেছেন। ওরা একদম তোমার আমার মতো দেখতে মানুষ কিন্তু ছোট্ট সাইজ। এই ধরো তোমার পুতুলগুলোর সমান। ম্যারি নরটনের এই উপন্যাসটি এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে পরে এটির আরও চারটি সিরিজ লেখা হয়।

আমাদের আজকের গল্প অবশ্য উপন্যাস বা এর সিরিজ নিয়ে নয়। আমরা আজকে বলব এই উপন্যাসটিকে নিয়ে বানানো অ্যানিমেটেড মুভি নিয়ে। ইয়রোমাশা ইয়োনেবাইয়াশি নামের একজন জাপানিজ নির্দেশক সেই উপন্যাসটি নিয়ে একটা অ্যানিমেটেড মুভি তৈরি করেন। নাম দেন দ্যা সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অফ অ্যারিয়ারটি। অ্যারিয়ারটি এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র, সে নিজেও একজন ছোট মানুষ।

মুভিতে গল্পটিকে দেখানো হয়েছে একটা স্বাভাবিক মানুষ শন এর দৃষ্টি থেকে। শন তোমাদের বয়সী একটা ছেলে। তবে তোমাদের মতো প্রাণোচ্ছল জীবন শনের নয়। ওর একটা কঠিন অসুখ হয়েছে। ওর একটা অপারেশন হবে। কিন্তু তাঁর আগে ছুটি কাটাতে শন তার মায়ের ছোটবেলার বাড়িতে এসে। সে বাসায় শনের সঙ্গে থাকে ওর মায়ের একজন খালা, আন্ট জেসিকা, ওদের রাঁধুনি হারা এবং একটা মোটকু-পাজি বিড়াল নিয়া। শন বাড়িটায় পা দিয়েই বুঝতে পারে এদের বাইরেও বাড়িতে আর কেউ থাকে এবং তারা শনের মতোই মানুষ।

শনের ধারণা কিছু ভুলও নয়। আসলেই ওদের এই বাড়িটাতে আরেকটা পরিবার থাকে। পরিবারটির নাম ক্লক। ওরা বরোয়ার মানে হল ওরা অন্যের কাছ থেকে জিনিসপত্র ধার করে জীবন ধারণ করে। দেখতে অবিকল মানুষের মতো শুধু ব্যতিক্রম ওদের আকারে। ওরা মানুষের মিনিয়েচার সংস্করণ। ক্লক পরিবারে আছে বাবা পড ক্লক, মা হোমলি ক্লক এবং তাদের ফুটফুটে মেয়ে অ্যারিয়ারটি ক্লক।

বরোয়ারদের জীবন কাটে মানুষের আশেপাশে ছায়ার মতো লুকিয়ে গোপনে। ওরা আমাদের সঙ্গেই থাকে তবে আমরা ওদের দেখতে পাই না কখনওই। ওরা চেষ্টাও করে যেন কোনোভাবেই আমাদের সামনে না পরতে হয়। তাই আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি ওরা চুপি চুপি এসে প্রয়োজনীয় জিনিস যোগার করে আবার লুকিয়ে যায়। তবে অ্যারিয়ারটি এইসব নিয়মের ধার ধারে না। সে খুবই স্বাধীনচেতা। চাইলেই সে বের হয়ে মাঠ থেকে তাজা পাতা ফুল তুলে নিয়ে আসে। চাইলেই সে বের হয়ে যায়। আর এভাবেই সে বার বার শুধু বিড়াল নিয়ার চোখে পরে।

অ্যারিয়ারটির এই কাজের জন্য ওর মা হোমলি সব সময় ভয়ে কাটা হয়ে থাকে আর মেয়েকে বার বার নানাভাবে সাবধান করে। কিন্তু চাইলেই তো আর মেয়েকে মানুষ থেকে দূরে রাখা যাবে না। বেঁচে থাকার জন্যই ওকে মানুষের কাছে যাওয়া শিখতে হবে। এই শিক্ষা নিতেই অ্যারিয়ারটি এবং তাঁর বাবা এক রাতে শনদের ঘরে ঢুকে।

শনদের বাড়িতে যে ছোট মানুষ আছে এই সন্দেহ কিন্তু শুধু শনের নয়। শনের নানা অনেক আগে থেকেই জানেন যে বাড়িতে ছোট কেউ থাকে। তিনি মানুষটা শনের মতোই ভালো ছিলেন। তাই তিনি অবিকল নিজের বাড়ির মতো করে ছোট মানুষদের জন্যও একটা ডলস হাউজ সাজিয়ে রেখেছেন। অ্যারিয়ারটি আর তাঁর বাবা ঘুরতে ঘুরতে সেই ডলস হাউজে ঢুকে যায়। অ্যারিয়ারটির খুব শখ জাগে এই বাড়িটিতেই সে থাকবে কিন্তু ওর বাবা ওকে সাবধান করেন এটি একটা ফাঁদও হতে পারে।

সেদিনই টিস্যু নেওয়ার সময় শন অ্যারিয়ারটিকে দেখে ফেলে। এভাবে মানুষের চোখে ধরা পরে যাওয়া খুব বিপদজনক। অ্যারিয়ারটির বাবা তাই দ্রুত তাঁর পরিবারকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে চায়। তবে অ্যারিয়ারটি বিশ্বাস করে মানুষ মাত্রই বিপদজনক না, ও যায় শনের সঙ্গে কথা বলতে। এই সুযোগে শনদের বাড়ির রাঁধুনি হারার চোখে অ্যারিয়ারটিদের গোপন আবাস্থল ধরা পরে যায়। হারা সেখান থেকে অ্যারিয়ারটির মা হোমলিকে ধরে এনে একটা বয়েমে আটকে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে আটকে রাখেন শনকেও যেন সে কিছুতেই হোমলিকে মুক্ত করতে না পারে। হারা স্থানীয় পোকা-মাকড় নিধন করার কোম্পানিকে খবর দেয় কীটনাশক দিয়ে বাড়িতে লুকিয়ে থাকা অন্য সব বরোয়ারদের মেরে ফেলার জন্য।

এরপরে কী হবে শন আর অ্যারিয়ারটির জীবনে তা জানতে হলে তোমাকে দেখতে হবে মুভিটি। এই মুভিটি ইংরেজিতে ডাব করা হয়েছে। উত্তর আমেরিকার জন্য এই ডাব করার কাজটি করেছে ওয়াল্ট ডিজনি পিকচারস।