অভিধানের দিন

ইংরেজিতে কিছু কিছু শব্দের দুই রকমের বানান পাওয়া যায়। যেমন – Colour আবার Color হয়, Centre হয় Center. দুটো ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে প্রথম বানানটি পরেরটা থেকে একটু কঠিন। আসলে প্রথম বানানটিকে বলা হয় ব্রিটিশ বানান, পরেরটা আমেরিকান।

>>রাসয়াত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2015, 01:59 PM
Updated : 16 Oct 2015, 01:59 PM

এই যে ব্রিটিশ বানান থেকে যে আমেরিকান বানানটা সহজ হল, এই কাজটি যে মানুষটি করেছিলেন তাঁর নাম, নোয়া ওয়েবস্টার। তার জন্মদিনের দিনই আমেরিকায় পালিত হয় National Dictionary Day বা অভিধান দিবস হিসেবে। কেন জানো? কারণ নোয়া ওয়েবস্টারই প্রথম চিন্তা করেছিলেন আমেরিকানদের নিজেদের অভিধানের কথা। কারণ তার লেখা অভিধানের আগে ইংরেজি সব অভিধানই ছিলো ব্রিটিশদের লেখা।

নোয়া ওয়েবস্টারে অভিধান সম্পর্কে জানার আগে জানতে হবে তারও আগের ইতিহাস। বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন অভিধান লিখেছিলো আক্কাদিয়ান সম্প্রদায়ের লোকেরা, আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে। আক্কাদিয়ান সম্প্রদায় বাস করতো সে জায়গাটিকে এখন আমরা ইরাক ও সিরিয়া নামে চিনি। এটাই মানুষের অভিধান সম্পর্কে প্রথম ধারণা। ইংরেজি শব্দের উপর প্রথম অভিধানটি লিখেছিলেন রবার্ট কাউড্রি নামের একজন স্কুল শিক্ষক। সেটিও সেই ১৬০৪ সালের কথা, প্রায় শেক্সপিয়ারের নাটক লেখার সময়কালে। তবে এইসব অভিধান লেখার আগেও অভিধান লেখার একটা প্রথাও অবশ্য ছিলো। তখন সব ধরণের শব্দ একসাথে লিখে ফেলা হতো।   

ওয়েবস্টার তাঁর জীবনে অনেক কাজই করেছেন একটা সময়ে elementary স্কুলের টিচার ছিলেন।elementary স্কুল হচ্ছে আমাদের প্রাইমারি স্কুলের মতো। যেখানে আসলে বাচ্চাদের শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করা হয়। স্কুলে পড়াতে গিয়ে ওয়েবস্টারের মনে হতো আমেরিকানদের শিক্ষা পদ্ধতি বেশ ত্রুটিপূর্ণ। তখন আমেরিকার স্কুলগুলোর লেখাপড়ার বইগুলো আসতো ব্রিটেন থেকে, যার সাথে আমেরিকার মানুষ এবং সমাজের কোনোই সম্পর্ক ছিলো না। ওয়েবস্টার চাচ্ছিলেন আমেরিকান বাচ্চাদের শিক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ  আমেরিকান নিজস্ব স্টাইলে হোক, কারও থেকে ধার করা না হোক। তিনি মনে করতেন, ইংরেজি কথা বলা লোকদের এটা অধিকার ইংরেজি ভাষা কেমন হবে। সাধারণ লোকেরা ঠিক করবে ভাষাটা কেমন হবে, কোনো প্রফেসর কিংবা ইতিহাসবিদরা নয়। তাই ওয়েবস্টার নিজেই এইসব সমস্যা সমাধান করার চিন্তা করেন। উনি একটি অভিধান লেখেন। ওয়েবস্টারের লেখা সেই প্রথম আমেরিকান অভিধানতে ছিলো ৭০০০০ শব্দ। শব্দগুলোর সাথে সংজ্ঞাও যুক্ত ছিলো। এর মধ্যে ১২০০০ এমন শব্দ ছিলো যা শুধুই আমেরিকান, এর আগে কখনও কোনো অভিধানতে যা কখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

১৮০৬ সালে ওয়েবস্টার যে অভিধানটা প্রকাশ করেন তার নাম ছিলো - A Compendious Dictionary of the English Language এটি প্রকাশ করেই উনি থেমে যাননি, উনি এই অভিধান সম্পূর্ণ করার কাজ হাতে নেন। সেই কাজটা করতে তার লেগেছিলো ২৭ বছর। কেন জানো? প্রতিটি শব্দের বুৎপত্তিসহ আরও অনেক কিছু জানতে শিখতে হয়েছিলো ২৬ টি ভাষা। জার্মান, স্প্যানিশ, গ্রিক, ল্যাটিন এগুলার পাশাপাশি শিখেছেন  হিব্রু, আরবি ও সংস্কৃত।

বর্তমানে ওয়েবস্টারের অভিধানটা অনলাইনে চলমান।  http://nws.merriam-webster.com/opendictionary/  এখানে গিয়ে নতুন শব্দ যোগ করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে যে একটি জনপ্রিয় শব্দ সেলফি, সেটাও এখানে সংযুক্ত হয়েছে। বলা আছে It means taking a picture of yourself maybe on your cellphone and posting it somewhere. A picture of yourself taken by yourself [is] a 'selfie.' "

ইংরেজিতে প্রায় ১০ লাখের মত শব্দ আছে এবং ধারণা করা হয় প্রতি বছর প্রায় ৮৫০০ শব্দ যুক্ত হয় অভিধানতে।  

নতুন শব্দ শেখা সবসময়েই আনন্দের ব্যাপার। তোমরাও চাইলে এই দিনটি পালন করতে পারো। আমেরিকানরা কিন্তু এই দিনটিকে বেশ ঘটা করেই পালন করে। তাদের মতো আমরাও অভিধান দিবস পালন করা যেতে পারে নতুন শব্দ শেখার মাধ্যমে। হোক সেটা ইংরেজি শব্দ কিংবা বাংলা। ভিনদেশী ভাষা শিখতে গেলে তো আসলে মাতৃভাষারও শক্ত গাঁথুনি দরকার। কারণ আমরা বাংলাদেশীরা যদি বাংলা ভাষাই ভালমতো না জানি অন্য ভাষা শিখবো কীভাবে?