বুদ্ধিমান বোতল-নাক ডলফিন

তোমরা ডলফিন বলতে যে প্রাণীটিকে চিনো তাদের পরিবারের নাম হচ্ছে Delphinidae। এই পরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্যের নাম বোতল-নাক ডলফিন। তোমরা প্রায়ই টেলিভিশনে লম্বা নাকের হাসি হাসি চেহারার এই ডলফিনকে সুইমিং পুলের পানি থেকে শূন্যে লাফিয়ে উঠে বা বল নিয়ে খেলা করতে দেখে থাকবে। এরা যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি মজাদার এবং বন্ধুত্বসুলভ প্রাণীও। আর আমরা সবাই তো জানিই, দেখতে মাছের মতো এবং বাস পানিতে হলেও ডলফিন কিন্তু মাছ নয়। তিমির মতো ডলফিনও একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী।

>>নাজিয়া প্রভাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2015, 08:40 AM
Updated : 6 Oct 2016, 00:03 AM

একই রকম দেখতে বোতল-নাক ডলফিনের প্রজাতি হল মোট ৩টি।

১। সাধারণ বোতল নাক ডলফিন, যাদের বৈজ্ঞানিক নাম, Tursiops truncatus। এরা এই গণের সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতি। যত ওয়াটার পার্ক, সিনেমা, ডকুমেন্টরি দেখো সবগুলোতেই এরাই থাকে। উষ্ণ ও ক্রান্তিয় অঞ্চলে এদের বাস হলেও মেরু অঞ্চল ছাড়া প্রায় সব সমুদ্রেই এদের পাওয়া যায়।

২। ইন্দো-প্যাসিফিক বোতল-নাক ডলফিন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Tursiops aduncus। এদের বাস ভারত,অস্ট্রেলিয়া, লোহিত সাগর এবং আফ্রিকা অঞ্চলে। তবে বসবাসের জন্য নয় শুধু, এরা দেখতেও বেশ আলাদা। এই প্রজাতিটি আকারে সাধারণ বোতল-নাকের চেয়ে ছোট, তবে এদের নাক অন্যদের থেকে বড়। ইন্দো-প্যাসিফিক বোতলনাকের শরীর ধুসর আর পেট প্রায় সাদা। এদের গায়ে আবার গাঢ় ধুসর দাগও থাকে। এ কারণে এদের একদম স্পষ্টভাবে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়

৩। বুরুননান বোতল-নাক ডলফিন। এদের বৈজ্ঞানিক নাম Tursiops australis। আকারে এরা বাকি দুই প্রজাতির মাঝামাঝি। মজার কথা হচ্ছে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রজাতির কথা কেউ জানতোই না। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের কিছু অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়। এই পর্যন্ত মাত্র ১৫০টি এই প্রজাতির প্রাণীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।

এখন বলি কেন সবাই এদের বুদ্ধির এত তারিফ করে। পানির নিচের অন্য প্রাণীদের সাথে নানান দিক থেকে এদের আলাদা করা যায়। বোতল-নাকদের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ওদের যোগাযোগ এবং ভাবের আদান প্রদানের প্রক্রিয়া। একটি বোতল-নাক আরেকটি বোতলনাকের সাথে কয়েকটি পদ্ধতিতে ভাবের আদান-প্রদান করে।

আমাদের মতো এত কঠিন শব্দ বা বাক্য দিয়ে হয়তবা ওরা কথা বলে না, তবে ওদের নিজস্ব উপায়টিও কম চমকপ্রদ নয়। ওরা সাধারণত কিচমিচ শব্দ করে বা শিষ এর মতো শব্দ করে। কখনও কখনও নানারকম শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করেও মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও চোয়াল উঠানামা করিয়ে ওরা একরকম শব্দ তৈরি করতে পারে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য যে উপায়ে ওরা কথা বলে সেটি হল, বোতল-নাক ডলফিনরা নিচের চোয়াল নাড়িয়ে, পানিতে মাথা ঠুকে এবং লেজ দিয়ে পানিতে আঘাত করে একরকম তরঙ্গ সৃষ্টি করতে পারে। এই তরঙ্গের পানির নিচ দিয়ে চলার সময় এরা এই তরঙ্গ সৃষ্টি করতে করতে এগিয়ে যায়। চলার পথে কোনো বস্তু যদি বাধা সৃষ্টি করে তবে, সেই তরঙ্গ তাতে বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসে ডলফিনদের কাছে ফিরে আসে। এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় echolocation। মনে করো, বটলনোজ ডলফিনের চলার পথে একটি বড় পাথর পরলো, echolocation system-এর মাধ্যমে ওরা ঠিকই তা বুঝতে পারবে এবং পাথরটি এড়িয়ে যাবে। এই পদ্ধতিতে এরা বস্তুটির আকার, আকৃতি, ঘনত্ব সবই মেপে ফেলতে পারে। বোতলনাকের শ্রবণ ক্ষমতাও কিন্তু খুবই ভালো। মোট কথা পানির নিচে একটি বোতল-নাক হচ্ছে একটি চলমান রাডার। 

বোতলনাকের খুব বন্ধুবৎসলও। ওদের সাথে বন্ধুত্ব করার সুযোগ যদি কখনও পাও সেটা একদম ছাড়বে না। বোতলনাকের মতো মজার বন্ধু পাওয়া বেশ ভাগ্যের ব্যাপার।