আলো জ্বলা প্রবাল

পৃথিবীর মোট আয়তনে তিন ভাগই পানি। তবে পানির এই এলাকাটা যে কত বিশাল তা শুধু এর বিস্তৃতি দিয়ে বুঝানো সম্ভব নয়। কেননা সমুদ্রের এলাকা শুধু এর বিস্তৃতিতে সীমাবদ্ধ নয়। এর গভীরতা বিস্তৃতির থেকে অনেক বেশি। এই গভীরতাও আবার অনেক স্তরে বিভক্ত। প্রতিটি গভীরতার ধরণ আবার আলাদা। তাই বিশাল সমুদ্রের অতলে কোথায় কোন প্রান্তে কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে তা কেউ জানে না।

>>মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2015, 12:49 PM
Updated : 6 Oct 2016, 00:02 AM

সমুদ্রের প্রাণীদের নিয়ে যেসব জীববিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন তাদের জীবন তাই খুব বর্ণিল। প্রায় প্রতিদিনই তারা নতুন নতুন রহস্যের সম্মুখীন হন। এই রহস্যগুলো ভেদ করতেও খুব মজা। কেননা রহস্যের জট খুললে মজার মজার নতুন তথ্য বের হয়ে আসে। সম্প্রতি লোহিত সাগরের তলায় বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন খুব মজার একটি প্রবাল প্রাচীর। প্রবাল প্রাচীর তোমরা সবাই চেনো, তোমাদের অনেকের বাসাতেই মৃত প্রবাল প্রাচীর শো পিস হিসেবে শোভা পায়। কিন্তু বিজ্ঞানীদের পাওয়া এই প্রবাল প্রাচীরের জীবিত প্রবালগুলো মিলে চমৎকার আলোকসজ্জা করে রেখেছে। আমরা আমাদের বাড়িতে উৎসব হলে যেমন রঙিন আলো দিয়ে সাজাই সেইসব প্রবাল প্রাচীরগুলোও সবুজ-কমলা আলোকসজ্জা করেছে। 

বিজ্ঞানীরা আগেও এরকম আলো জ্বলা প্রবাল দেখেছেন। তবে সেগুলোর বাস ছিলো সমুদ্রের কম গভীরতার স্থানে। নতুন পাওয়া আলো জ্বলা প্রবালগুলো সমুদ্র পৃষ্ঠের ১০০ থেকে ৩০০ ফুট গভীরে পাওয়া গিয়েছে। কম গভীরতার আলোক প্রবালগুলো আসলে সেই প্রবালের সান ব্লক বা সূর্য রশ্মির প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। এ প্রবালগুলোতে অবস্থিত কিছু রঞ্জক উপাদান সূর্যের আলোকে আটকে দেয় এবং সেই আলোকে আবার প্রতিফলিত করে। এই প্রতিফলনের ফলেই সেই প্রবালগুলো জ্বলে। এভাবে কম গভীরতার প্রবালগুলোর ভিতরে বাস করা শৈবালদের সূর্যের আলোর তীব্রতা থেকে রক্ষা করে। গভীর সমুদ্রের প্রবালগুলোর ক্ষেত্রে ঘটনা কিন্তু অন্যরকম। এগুলো সমুদ্রের এতই গভীর স্থানে থাকে যে অতদূর পর্যন্ত সূর্যের আলো পৌছায়ই না। তবে এই প্রবালগুলো কীভাবে জ্বলে?

বিজ্ঞানীরা এই প্রবালগুলোকে নিয়ে ল্যাবে গেলেন। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেলো ঘটনা খুবই অভিনব। এই নতুন আবিষ্কৃত গভীর সমুদ্রের আলো জ্বলা প্রবালগুলোতে একদম অন্য ধরণের রঞ্জক উপাদান আছে। এই রঞ্জক উপাদান আসলে সমুদ্রের নিচের অন্ধকার জগতের লাইট সোর্স হিসেবে কাজ করে। এরা শুধু অন্ধকার সমুদ্রে আলোর উৎস হিসেবেই কাজ করে না বরং ঐ প্রবাল প্রাচীরগুলোতে যে সব শৈবাল বাস করে তাদের খাবার তৈরির জন্য সালোকসংশ্লেষণের সময় যে আলো লাগবে সেই আলোর যোগান এই গভীর সমুদ্রের আলোজ্বলা প্রবালগুলো দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই রঞ্জক উপাদানগুলো মানুষের উপকারে আসতে পারে। যেমন ক্যান্সারের কোষগুলোকে ভালো করে দেখার কাজে এদের ব্যবহার করা যেটে পারে বলে তারা মনে করছেন।