Pareidolia: নিজের মতো দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা

তোমরা কখনও ঘোড়ার মতো মেঘ দেখেছো? অনেকক্ষণ আকাশে মেঘ দেখতে থাকলে শুধু ঘোড়ার মতো না আরও অনেক রকমের মেঘই তোমরা দেখতে পাবে। চাঁদের দিকে তাকালে দেখবে একটা বুড়ো মহিলার মুখ দেখা যায়। কেউ কেউ বলে চাদের দিকে তাকালে দেখা যায় একজন মহিলা বসে চরকা কাটছে। কিন্তু আসলেই কি এমন কিছু হয়? সত্যিই কী মেঘ ঘুরে ঘুরে পৃথিবীর বস্তুর আঁকার আকৃতি ধারণ করে?

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2015, 08:12 AM
Updated : 6 Oct 2016, 00:08 AM

আকাশের মেঘ না হয় এমন একটা কিছু করলো কিন্তু একটা পাথরের চাঁই, গাছের গুড়ি এরাও মাঝে মাঝে আমাদের চেনা জিনিসের মতো দেখতে হয়। এমনকি কফির কাপে চুমুক দেওয়ার আগেও কখনও ফেনার মাঝে একটা ব্যাঙ বা মানুষের মুখ দেখে চমকে উঠতে পারো।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এরকম হয়? এ ঘটনাগুলো কি আসলেই দৈবযোগ বা ভূতের কাজ নাকি এর পেছনেও কোনো ব্যাপার আছে। বিজ্ঞানীরা বলেন এ ঘটনাগুলো কোনটাই দৈবযোগ নয়। ভূতের কাজ তো নয়ই। পুরোটাই হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কের খেলা। কেমন খেলা জানো? ধরো তোমাকে যদি আমি একটা গল্প বলি, একটা গ্রামের বাড়ির গল্প তুমি গল্পটার দৃশ্যপট কল্পনা করতে চেষ্টা করবে। তুমিও একটা গ্রামের বাড়ি ভাববে কিন্তু সেই গ্রামের বাড়িটা হবে তোমার দেখা কোনো গ্রামের বাড়ি হয়তো তোমার নানুবাড়ি বা তোমার দাদুবাড়ি। এখন যদি আমি বলি সেখানে ছিলো একটা পুকুর। অথচ তোমার দাদুর বা নানুর কারও বাড়িতেই তুমি পুকুর দেখোনি। তুমি পুকুর দেখেছি অন্য কোথাও। তোমার কল্পনাতে সেই পুকুরটা তোমার দাদু বা নানুবাড়ির কল্পনার সাথে জুড়ে যাবে। মানুষের মন ঠিক এভাবেই কল্পনা করে থাকে।

এভাবে বাস্তবে অস্তিত্ব নাই এমন কিছুকে নিজে থেকে ভেবে নেওয়ার নাম perception বা উপলব্ধি। তো আমরা যখন একটা অচেনা মেঘের কুণ্ডলী দেখি তার আকার আকৃতিকে আমরা আমাদের চেনা একটা কিছুর সাথে মিলিয়ে নেই। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তার অচেনা জিনিসকে বোধগম্য করার জন্য এভাবে নিজের মতো করে ভেবে নিয়েছে। এটা মস্তিষ্কের একটা নিজস্ব সিস্টেমও বলতে পারো। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের এই স্টিমুলেশনের একটা নামও দিয়েছেন তা হচ্ছে Pareidolia। তবে এটি দাড়া শুধু দেখার ভ্রমকেই নির্দেশ করে না তোমার শোনার যদি কোনো ভ্রম হয় তবে এটির কারণও Pareidolia। ধরো রাস্তা দিয়ে একজন ডেকে যাচ্ছে কিছু বলে তুমি শুনলে তোমার চেনা কোনো শব্দ। তোমরা অন্য ভাষার গান এরকম ভিডিও অনেক দেখেছো হয়তো। ভিন্ন ভাষায় সেদেশের মানুষেরা বলছে এক কথা আর আমরা সেই ভাষাটি একদমই না বুঝার দরুন পুরোপুরি আমাদের ভাষার একটা শব্দ বলছি। মিলিয়ে-টিলিয়ে একটা খুব মজার কিছু হচ্ছে।
যাই হোক আমরা কথা বলছিলাম দৃষ্টির Pareidolia’র কথা। আর্ট এর ক্ষেত্রে এর ব্যবহার প্রচুর। মহান শিল্পী লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এই ধরণের আর্ট সম্পর্কে তার নোটবুকে বলে গিয়েছেন। বাংলাভাষার প্রবাদতুল্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের আঁকা একটা বিখ্যাত গাছের ছবি আছে যেটিতে আসলে অনেক বিখ্যাত লোকের চেহারা লুকানো আছে। তুমি খুঁজলে সেখানে মোট ১১জন বিখ্যাত ব্যক্তির ছবি খুঁজে পাবে।

Pareidolia সম্পর্কে অনেক কিছু জানার পরে যেটা জানা তোমার জন্য সবচেয়ে জরুরী সেটা হচ্ছে, তুমি চাইলেও এরকম কিছু করতে পারো। নিজে নিজে নিত্য ব্যবহারের জিনিস একটার সাথে আরেকটা জুড়ে একটা Pareidolia ভাস্কর্য বানাতে পারো। পুরো কাজটা করে তুমি যেমন মজা পাবে তেমন পৃথিবীকে একটা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে চিনতেও শিখবে।