বিরাম চিহ্নের দিন

বিরাম চিহ্ন কাকে বলে জানো তো? লেখালেখির সময় আমরা বাক্য এবং শব্দের মাঝে মাঝে কিছু চিহ্ন দিয়ে থাকি। এই চিহ্ন দেখে বুঝতে হয় বাক্যটির কোথায় থামতে হবে এবং কতটুকু থামতে হবে।

মাকসুদা আজীজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2015, 11:46 AM
Updated : 24 Sept 2015, 11:46 AM

এ থামাথামির প্রয়োজন কেন হয় জানো? কারণ, কেউ যখন তোমার লেখা পড়ে সে তোমার গলার আওয়াজ শুনতে পায় না তুমি কোন কথাটা ঠিক কোন অনুভূতির সাথে বলছো সেটা পাঠকের জন্য বোঝা বেশ কষ্টসাধ্য। কখনও কখনও ব্যবহারের ভুলের জন্য ভাষার অর্থও বদল হয়ে যেতে পারে। যেমন ধরো কোনো জায়গায় গায়ে লেখা,

'এখানে আবর্জনা ফেলবেন না, ফেললে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।' 

কেউ হয়তো জায়গাটিকে পরিষ্কের রাখার উদ্দেশ্যে এই নোটিশ লাগিয়েছিলো। এখন সে যদি না জানে বিরাম চিহ্ন কোনটা কোথায় ব্যাবহার করতে হয় আর ভুল করে লিখে দেয়,

'এখানে আবর্জনা ফেলবেন, না ফেললে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।'  

কী ভয়াবহ ব্যাপার হবে বুঝতে পারছো? লোকে এসে তো সে জায়গায় ময়লা ফেলবেই আবার এসে টাকা চাইবে। বলবে, কই ভাই দিন আমার ১০০ টাকা! 

এই ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য লিখিত বাক্যের মধ্যে বিরাম চিহ্ন ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার করা দরকার। 

প্রতিটা ভাষাতেই এইসব বিরাম চিহ্ন রয়েছে। হয়তো ভাষা অনুযায়ী কিছু বেশি কম বা দেখতে অন্যরকমের আছে। যেমন আমাদের বাংলা ভাষার সবচেয়ে লম্বা বিরাম দাড়ি (।) ইংরেজিতে এই বারামটির নাম ফুলস্টপ (.) দুটির ব্যাবহার এক কিন্তু ভাষা অনুযায়ী নাম এবং চেহারা আলাদা। কোনো কোনো ভাষার বিরাম চিহ্ন দেখতে এক রকম হোলেও এর ব্যবহারে ভিন্নতা দেখা যায় যেমন সেমি কোলন (;) বাংলা ইঙ্গেরজিতে এটা ব্যবহার করা হয় দুটি একি রকমের বাক্য যোগ করতে। কিন্তু গ্রীক ভাষায় প্রশ্নবোধক অনুজ্ঞা তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে দেখতে যমেওনই হোক আর ব্যবহার যাই হোক বিরাম চিহ্নের প্রয়োজন সব ভাষাতেই আছে।

এখন বলি বিরাম চিহ্ন নিয়ে দিবসটা কীভাবে আসলো? আমেরিকাতে জেফ রুবিন নামে একজন বক্তা আছেন। উনি লক্ষ করলেন, এখন ফেইসবুক টুইটারের যুগে মানুষ অনেক লিখিত বাক্য ব্যবহার করে কিন্তু যেহেতু অনেকেই কীভাবে লিখতে হবে বা লেখার শুদ্ধতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। এভাবে আস্তে আস্তে ব্যকরণ, বানান ইত্যাদির ভুলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বাড়তে বাড়তে ব্যাপারটা এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছে যে ভাষাটাই বদল হওয়ার পথে। উনি অনুধাবন করলেন এভাবে চলতে থাকলে ভাষার অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তবে তার ধারণাটা আসলেই সত্য নাকি মিথ্যা সেটা বোঝার জন্য উনি কিছু গবেষণা করলেন। গবেষণার ফল এলো, আসলেই ভাষার বেশ ক্ষতি হচ্ছে।   

রুবিন মনে করেন, তুমি তাই যেভাবে তুমি অন্যের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করো। এখন যদি তুমি নিজেকে উপস্থাপনের সময় অন্যের মনে নিজের সম্পর্কে ভুল তথ্য দাও অথবা তোমার বোঝানোর ভুলের কারণে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলো তাহলে তো তোমার উদ্দেশ্যটিই বৃথা যাবে। তাই সঠিক বানান, ব্যকরণ জানার সাথে সাথে এইসব বিরাম চিহ্নের সঠিক ব্যবহার জানাও খুব জরুরী। এই জরুরী বিষয়টি যেন হেলা ফেলায় কেউ ভুলে না যায় তাই উনি চেষ্টা করে একটি দিনকে বিরাম চিহ্নের দিন প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন। ২০০৪ থেকে আজকের দিনটিকে অর্থাৎ ২৪ সেপ্টেম্বরকে আমেরিকাতে  জাতীয়ভাবে Punctuation Day বা বিরাম চিহ্ন দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

তোমরাও যদি নিজেদের লেখা উন্নত করতে চাও তাহলে তোমরাও রুবিনের মতো নিজের বিরাম চিহ্নের প্রতি আর যত্নশীল হতে পারো। আমরা যদি মনে করি বিরাম চিহ্ন খুব সাধারণ বিষয় কিন্তু কোনো কিছুই সাধারণ নয়। প্রতিটি সাধারণ বিষয় যদি তুমি গুরুত্বের সাথে করো তবেই কেবল তুমি অসাধারণ হয়ে উঠতে পারবে। কিন্তু যদি এগুলোকে হেলা ফেলা করো তবে তোমার সব কাজই অপরিচ্ছন্ন ও ভুল ত্রুটি সম্পন্ন হবে। যেটা আমরা কেউই চাই না। তাই আমাদের দেশে আলাদা করে এমন দিবস না থাকলেও, এই ভালো জিনিসটা আমরা আয়ত্ত্ব করতে পারি।