বাঘ নিয়ে যদি আলোচনা শুরু করতে হয় তবে খুব মজার একটা বিষয় শুরুতেই বলে রাখি, জাগুয়ার মোটেই বাঘ নয়। আমরা যাদের বাঘ বলি তারা সবাই মোটামুটি Panthera গণের প্রাণী কিন্তু তাদের প্রজাতি আলাদা আলাদা। তাই তারা বস্তুত আলাদা রকমের প্রাণী। ঠিক যে কারণে বানর, শিম্পাঞ্জি নয় আবার শিম্পাঞ্জি মানুষ নয় ঠিক সেই কারণেই জাগুয়ার বাঘ নয়। তুমি সাধারণভাবে এদের বড় বিড়াল বলতে পারো বড়জোর।
বাঘ বলতে বিজ্ঞানীরা যাদের বোঝেন তারা জাগুয়ার থেকে অনেক আলাদা। কারণ বাঘের শরীরে লম্বা লম্বা ডোরা কাটা থাকে আর জাগুয়ারের গোল গোল ছোপ থাকে। মজার কথা হচ্ছে আমরা জাগুয়ার এবং লেপার্ডকে একটা সাধারণ নামে চিনি তা হচ্ছে চিতা বাঘ। কারণ উভয়ের গায়েই গোল ছোপ থাকে। আসলে এরা তো এক নয়ই উপরন্তু এরা একে অপরের উপপ্রজাতিও নয়। তাদের প্রজাতিই পুরোপুরি আলাদা। জাগুয়ারের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Panthera onca আর লেপার্ডের Panthera pardus
এই দুইজনের মধ্যে পার্থক্য নাহয় আরকেদিন জানবো আজ চলো আগে জেনে জাগুয়ার আর বাঘ আর কী কী কারণে আলাদা।
আগেই বলেছি জাগুয়ারের বৈজ্ঞানিক নাম কী, এখন বলি বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম কী, বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম হলো, Panthera tigris। এই বৈজ্ঞানিক নামের বাঘের প্রায় ৭টি উপ প্রজাতি রয়েছে। গত শতাব্দীতেও উপপ্রজতির সংখ্যা ছিল ৯টি। আমাদের অসাবধানতা এবং অসচেতনতার কারণে ২টি উপপ্রজাতি ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে। বাঘের এই উপপ্রজাতিগুলোর মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় প্রজাতি হলো সাইবেরিয়ান বাঘ আর সবচেয়ে ছোট হলো সুমাত্রান বাঘ। এরা দেখতে সবাই প্রায় একই রকম। সহজভাবে বললে এরা সবাই আমাদের রয়েল বেঙ্গলের মতোই দেখতে। আমাদের রয়েল বেঙ্গলও এদের একটি উপপ্রজাতি। এই বাঘেরা তাদের বাসস্থান অনুযায়ী দেখতে এবং আচরণে আলাদা হয়। অভিযোজন প্রক্রিয়া তাদের এই ভিন্নতা তৈরি হয়।
গায়ের রঙের ছোপ ছাড়াও জাগুয়ার এবং বাঘের একটা অনন্য বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বাঘের গায়ের রং হলুদ হয়, কমলা হয়, সার্বিয়ান বাঘেদের গায়ের রং হালকা হলুদ হয়, বেঙ্গল বাঘদের আবার সাদা রংও পাওয়া যায়। কিন্তু জাগুয়ারের গায়ের রং সাধারণত হলুদই হয় ছোপ থাকে হলুদের উপরে। মধ্যে মধ্যে জাগুয়ারের রং একদম কালো হয় এই কালোর উপরে আবার কালো ছোপ থাকে। এই ছোপগুলো খুব কাছে না গেলে দেখা যায় না। কালো জাগুয়ারকে আমরা কালো চিতা বলি। লেপার্ডেরও এমন কালো গায়ের রং হয় কখনও কখনও। কিন্তু এদের প্রজাতি আলাদা না এরা আসলে জাগুয়ার বা লেপার্ড প্রজাতির এক ধরণের ব্যতিক্রম মাত্র।
এছাড়াও বাঘ লেপার্ডের থেকে আকারে বেশ বড় হয়। বাঘের সবচেয়ে ছোট প্রজাতি সুমাত্রান বাঘেরও গড় ওজন ১৪০ কেজি। সাইবেরিয়ান বাঘেরা ৩০০ কেজির হয় সেখানে জাগুয়ারের সর্বোচ্চ ওজন হয় ১৫০ কেজি মাত্র। এই বিশাল ওজনের জন্য বাঘকে বিড়াল প্রজাতির সবচেয়ে বড় প্রাণী বলে আখ্যায়িত করা হয়।