পেঙ্গুইনের রাজা

পেঙ্গুইন প্রাণীটিকে তোমরা সবাই চিনো। এই অদ্ভুত পাখিটি দুইপায়ে হেলে দুলে বরফের মধ্যে হাঁটে আবার পানিতেও সাঁতার কাটে। তবে উড়তে পারে না মোটেই। পৃথিবীর সব পেঙ্গুইনের বাস হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সংলগ্ন স্থানগুলোতে। সেখানে তারাবিশাল বিশাল দল নিয়ে মজা করে বাস করে, শিকার করে বাচ্চা-কাচ্চা বড় করে। পৃথিবীতে বেশ অনেকগুলো প্রজাতির পেঙ্গুইন আছে। এদের মধ্যে রাজা বা এম্পেরর পেঙ্গুইন হলো পৃথিবীতে বসবাসকারী পেঙ্গুইন প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লম্বা ও স্বাস্থ্যবান। তাই তো এদের নামকরণ করা হয়েছে পেঙ্গুইন সম্রাট।

>>দীপ্তি অদিতি ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2015, 11:14 AM
Updated : 6 Oct 2016, 00:02 AM

অন্য সব পেঙ্গুইনের মতো এরাও দক্ষিণ মেরুর বরফ আর পানিতেই সমগ্র জীবন কাটায়। মেরু অঞ্চলের হিমশীতল বরফে তারা কীভাবে বেঁচে থাকে সেটা একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার বটে। কিন্তু ঠাণ্ডা আমাদের জন্য সমস্যা, ওদের শরীরটি তৈরিই হয়েছেমেরু অঞ্চলে বাস করার জন্য, তারা বেশ কিছু বুদ্ধিদীপ্ত অভিযোজন পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান, লালনপালন ও খাদ্যগ্রহণের চক্রগুলো সম্পন্ন করে।

উড়তে না জানা এই পাখিরা সাধারণত শীতকালে সন্তান জন্মদান করে। পেঙ্গুইনদের পরিবারের নিয়ম বেশ সুন্দর। বাবা এবং মা পেঙ্গুইন নিজেদের মধ্যে বেশ ভাগাভাগি করে পরিবারের সব কাজ করে থাকে। প্রথমে মা  পেঙ্গুইনটি একটি ডিম পেড়ে চলে যায়, বাবা পেঙ্গুইনটি তখন এই ডিমটি নিজের পায়ের উপর ধারণ করে এবং ডিমকে উষ্ণতা দানের জন্য তার শরীরের উষ্ণ পালকযুক্ত বিশেষ থলের সাহায্যে ঢেকে রাখে। ৬৫ দিনের জন্য ডিমটি বরফশীতল তাপমাত্রাআর হিম ধরানো বাতাস আর তুষারঝড়কে উপেক্ষা করে বাবার শরীরের ভিতরেই থাকে।  

এদিকে ডিমটি যখন বাবার কাছে থাকে তখন ডিমের মা যায় সমুদ্রে তার ছানাটির জন্য মজার মজার সব খাবারের সন্ধানে। অবশেষে দুই মাস পর মা পেঙ্গুইনেরা সমুদ্র থেকে ফিরে আসে নবজাতক ছানা পেঙ্গুইনদের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে। মা ফিরে এলেআবার বাবা পেঙ্গুইনেরা মাছ শিকার করতে সমুদ্রে যায়। তখন ছোট্ট ছানা পেঙ্গুইনদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় তাদের মায়েরা।

তরুণ পেঙ্গুইনরা যখন বড় হতে থাকে তখন প্রাপ্তবয়স্ক পেঙ্গুইনরা তাদের কাছে ছানা পেঙ্গুইনদের বিভিন্ন গ্রুপে রেখে মাছ শিকারে যায়। ডিসেম্বরে দক্ষিণ মেরুর আবহাওয়া যখন কিছুটা উষ্ণ হয়ে ওঠে, তখন পেঙ্গুইনদের আবাস্থলের বরফ গলতে শুরু করে। ফলে পেঙ্গুইনদের নীড়ের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে জলাশয় তৈরি হয়।  ছোট পেঙ্গুইনরাও ততদিনে নিজেদের জন্য খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রে যাবার মতো বড় হয়ে যায়।

আকার আকৃতির দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম এই এম্পেরর পেঙ্গুইনের বৈজ্ঞানিক নাম Aptenodytes forsteri. এরা  Spheniscidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এদের আয়ুষ্কাল সাধারণত ২০ বছর এবং খাদ্যাভ্যাসের দিক দিয়ে এরা মাংসাশী। পানির নিচে এরা ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় সাঁতার কাটতে পারে। আর পানির নিচে ওরা কতক্ষণ থাকতে পারে জানো? প্রায় ১৮ মিনিট। পাখি হয়ে পানির নিচে এতটা সময় থাকার সুবিধার্থে ওদের শরীরের হিমোগ্লোবিন বিশেষ ধরণের হয়েথাকে।  এর ফলে ওদের রক্ত অনেকক্ষণ অক্সিজেন ধরে রাখতে পারে। এছাড়াও যখন ওদের অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখতে হয় তখন ওরা শরীরের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ চিহ্নিত করে সেগুলোর কাজ কমিয়ে বা বন্ধ করে রাখে। এভাবে ওদের শরীরের শক্তি, তাপঅক্সিজেন সবকিছুই সংরক্ষণ করে রাখার ব্যাবস্থা আছে।

অন্য পেঙ্গুইনরা কিন্তু প্রচণ্ড শীতে একরকম নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন করে। কিন্তু এই এম্পেরর পেঙ্গুইনরা তখনই ডিম দেয়। এই বিষয়টি প্রাণী বিজ্ঞানীদের বেশ অভিভূত করেছে। তাই এই প্রাজতির পেঙ্গুইনদের নিয়ে তাদের গবেষণার শেষ নেই। আর মজারবিষয় হল গবেষকরা যখন গবেষণা করছে তখন পিছিয়ে নেই কল্পনাপ্রবণ গল্পকার আর পরিচালকরাও। ২০০৬ সালে এম্পেরর পেঙ্গুইনদের নিয়ে একটি অ্যানিমেটেড মুভি বানানো হয়। নাম ছিল হ্যাপি ফিট। এর সাফল্যের পরে ২০১২তে আবার হ্যাপিফিটের একটি সিকুয়্যালও তৈরি করা হয়।

এম্পেরর পেঙ্গুনদের সম্পর্কে মজার গল্প আর কল্পনার রাজ্যে বেড়িয়ে আসতে চাইলে তোমরা দেখে নিতে পারো এই মুভিটি।