তোমাদের কি ‘ফাইন্ডিং নিমো’ সিনেমার নিমো আর তার বাবার কথা মনে আছে? রঙিন, মজাদার দেখতে নিমো যে জাতের মাছ তাদের বলা হয় ক্লাউন ফিস। সাগরের তলার মেঝেতে উনেমউনি (anemone) নামের এক ধরণের জীব দেখা যায়। উনেমউনিরা দেখতে যদিও গাছের মতো আর তাদের কর্ষিকাগুলো মিলে একটি ফুলের মতো গঠন তৈরি করে কিন্তু আসলে তারা নিডারিয়া পর্বের একটি প্রাণী। ফুলের মতো দেখতে বলেই এদের নামটাও এসেছে উনেমউনি নামক ফুলের নাম থাকে। এই উনেমউনি নামক প্রাণীর সাথে সম্প্রতি ক্লাউন ফিসদের একটি মজার বন্ধুত্বের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে।
এমনিতে উনেমউনিরা দেখতে বেশ হলেও এদের স্বভাব খুব ভালো নয়। বলা যায় এরা সাগরের সন্ত্রাসী। এদের সুন্দর কর্ষিকাগুলো রীতিমতো হুল ফোটায়। কী ভয়াবহ! সাগরের বাসিন্দারা উনেমউনির এই খল চরিত্র বেশ ভালোভাবেই জানে। তাই সবাই উনেমউনিদের একদম এড়িয়ে চলে।
সবাইকে হুল ফোটালে কী হবে? ক্লাউন ফিসদের উনেমউনিরা বেশ ভালোবাসে। তাদের এইসব হুল ফোটানোর আওতায় ক্লাউন ফিস কক্ষনও পরে না। বরং ক্লাউন ফিস উনেমউনিদের কর্ষিকার মাঝে নিজেকে বেশ নিরাপদে রাখতে পারে। ধরো, যদি কোনো আক্রমণকারী একটা ক্লাউন ফিসকে আক্রমণ করতে আসে। ক্লাউন ফিস দৌড় দিয়ে উনেমউনির কর্ষিকার মাঝে ঢুকে গেলেই একদম নিরাপদ। এখন কার সাহস আছে উনেমউনির ছোবল খাওয়ার? তারপরও কেউ যদি সাহস করে উনেমউনির ভিতরে লুকানো ক্লাউন ফিসকে তাড়া করে ঢুকেই যায় তাহলে বাকি দায়িত্ব উনেমউনির।
শুধু কি তাই? উনেমউনিরা যখন কিছু খায় তখন অতিরিক্ত খাবার ক্লাউন ফিসের সাথে ভাগ করে খায়। তাই ক্লাউনফিসরা তাদের বাসাও উনেমউনির ভিতরে গিয়ে বানায়। বলতে পারো উনেমউনি ক্লাউন ফিসকে একদম খাইয়ে পড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখে। তবে এটা তো শুধু এক তরফার সাহায্য হলো। একে তো আর বন্ধুত্ব বলা যায় না, বন্ধুত্ব হতে হলে তো ক্লাউন ফিসের পক্ষ থেকেও কিছু দায়িত্ব পালন করা লাগবেই।
সেই জন্যই তো ক্লাউন ফিসও একটা দারুণ কাজ করে। উনেমউনির গায়ে কিছু পোকা হয় যেগুলোকে ক্লাউন ফিস খুঁটে খুঁটে বের করে ফেলে তাদের আরাম দেয়। মাঝে মাঝে উনেমউনিদের কর্ষিকার মাঝে খাবার আটকেও যায়। সেটি সরানোর কাজও ক্লাউন ফিস খুব দায়িত্বের সাথে করে।
এই সুন্দর ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের জন্য ক্লাউন ফিসকে কেউ কেউ ‘উনেমউনি ফিস’ নামেও ডাকে। কী মজার না তাদের বন্ধুত্বটি!