আইফোনের সমান মথ

লাল নীল সবুজ বেগুনি কত রংয়ের প্রজাপতিই না আমরা দেখেছি। আচ্ছা, তোমরা কি কখনও সাড়ে চার ইঞ্চি লম্বা ইয়া বড় বড় পাখাওয়ালা প্রজাপতি দেখেছো? ভাবছো, এত বড় আবার প্রজাপতি হয় নাকি!

>>তাসনিম মৌবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2015, 08:35 AM
Updated : 6 Oct 2016, 00:01 AM

একটা আইফোনের আকারই তো এত বড়। তবে, প্রজাপতি ঠিক না হলেও প্রজাপতির কাছাকাছি এরকম একটা কিছু কিন্তু আছে! তোমাদেরকে যার কথা বলছি একে বলা হয় মথ। এরা কীটপতঙ্গদের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী ‘লেপিডোপ্টেরা’ থেকেই এসেছে, কেবল তাদের পরিবারটা ভিন্ন।

অবাক করা বিষয় হলো, লেপিডোপ্টেরাদের মোট দুই লক্ষ প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১০ ভাগ প্রজাপতি বাদে আর বাকি সবই কিন্তু মথ! প্রসঙ্গ যখন আসলোই চলো আগে আমরা প্রজাপতি আর মথদের আলাদা করার পদ্ধতি জেনে নেই। তোমরা কিছু প্রজাপতি দেখবে ডানাটা ভাজ করে বসে আছে। আর কিছু ডানাটা মেলে। যারা ডানা ভাজ করে রাখে এরা প্রজাপতি আর যারা ডানা মেলা রাখে এরা মথ।

মথদের জগতে সবচেয়ে মাদার নাম, বড় লুনা মথ। এদের বাড়ি উত্তর আমেরিকায়। লুনা মথের প্রজাতি সংখ্যাও অসংখ্য। চলো আজ তাহলে ঝটপট করে জেনে নেই লুনা মথ সম্পর্কে কিছু অজানা কথা।

শুধু ডানা খোলা বা বন্ধ করা নয়, আরও কিছু বিষয়ে প্রজাপতিদের থেকে মথদেরকে আলাদা করে চেনা যায়। যেমন, অন্যান্য প্রজাপতিরা যেখানে দিবাচর, উজ্জ্বল রঙের সরু ও পাতলা দেহ, সেখানে মথরা অনুজ্জ্বল, কম আকর্ষণীয় এবং এদের শরীর কিছুটা ভারী। সাধারণত রাতে কিংবা সন্ধ্যায় চড়ে বেড়াবার স্বভাবের জন্য মথ, প্রজাপতি থেকে ভিন্ন। এছাড়াও মথের সামনের ডানার সঙ্গে পেছনের ডানার সংযোগকারী একটি কাঁটা থাকে। তাহলে বুঝতেই পারছো, মথ হচ্ছে মথ, মথ কিছুতেই প্রজাপতি নয়।  

তবে প্রজাপতি ও মথের জীবনচক্রের ধাপগুলো একই, ডিম, শুঁয়োপোকা, পিউপা, এবং ইমাগো বা পূর্ণাঙ্গ কীট। এদের শুঁয়োপোকার গঠন পূর্ণাঙ্গ মথ বা প্রজাপতির গঠনের চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা। বেড়ে উঠার সঙ্গেসঙ্গেএসব শুঁয়োপোকার চেহারার পরিবর্তন ঘটে এবং ক্রমশ কয়েকটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যায়। পরিপক্ব হয়ে গেলে শুঁয়োপোকা পিউপাতে বিকশিত হয় যাকে প্রজাপতির ক্ষেত্রে ক্রিসালিস এবং মথের ক্ষেত্রে কোকেন বলে ডাকা হয়।

জলবায়ু অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতে লুনা মথ বছরে সাধারণত ১-৩ টি প্রজন্ম উৎপাদন করে। মেয়ে লুনাগুলো আবহাওয়ার ধরণ অনুযায়ী ৪০০-৫০০ ডিম পারে। ১০ দিন পর সদ্য ফোটা শুঁয়োপোকার বাচ্চাগুলো অসম্ভব ক্ষুধার্ত থাকে। এগুলো আখরোট, মিষ্টি আঠা যুক্ত গাছ, ব্রিচ গাছ কিংবা আমেরিকার শক্ত কাঠের গাছের পাতার উপর বসে বসে ক্রমাগত চিবাতে থাকে। শুঁয়োপোকাগুলোর শুধু শুঁয়োপোকা অবস্থায় বৃদ্ধি পাওয়ার জন্যই নয় বরং সেই সঙ্গে পরিণত অবস্থার পুষ্টির জন্যও প্রচুর খাবার খাওয়া দরকার। পরিণত লুনা মথের মুখে কোনও ছিদ্র থাকে না আর তাই তারা কিছুই খায় না! তাই তাদের অল্প সময়ের পরিণত জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এগুলো শুঁয়োপোকা অবস্থায় যে খাবার খায় তার ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করে।

শুঁয়োপোকাগুলো বড় হওয়ার সময় কয়েকবার খোলস বদলায়। ৩/৪ সপ্তাহের মধ্যে ৫ বার এরা খোলস বদলায়। খোলস পরিত্যাগ করে শুঁয়োপোকার পরিণত হওয়ার এক একটা অবস্থাকে ইনস্টার বলা হয়।

শেষবারের মতো খোলস ছাড়ার পর, মাস খানেক পর যখন এগুলো পুরো গাছ ছেয়ে ফেলে তখন প্রায় ২ ইঞ্চি লম্বা এই শুঁয়োপোকাগুলো রেশম সুতার গুঁটি তৈরি করে। লুনা মথরা ২/৩ মাস নিজেদেরকে এভাবে এতে মুড়িয়ে রাখে।  

তারপর কোন একদিন সকাল সকাল এর থেকে সুন্দর হালকা সবুজ রঙের পাখাওয়ালা লুনা মথ বেরিয়ে আসে। যদিও প্রথমে তাদের ছোট ছোট নতুন কোমল পাখাগুলো , ওড়ার জন্য তৈরি থাকে না। তাই প্রথম কিছুদিন তারা পাতার নিচে সাবধানে লুকিয়ে থাকে।  

লুনা মথের যেহেতু খাওয়া দাওয়ার ঝামেলা নেই তাই একটু বড় হলেই এরা সঙ্গী খুঁজতে বেরিয়ে পরে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, পরিণত হওয়ার পর সব মিলে তারা সপ্তাহখানেক বেশি বাঁচে না। গভীর রাতে লুনা মথের গোলাপি রেখা টানা পাখার পিঠে চোখের মনির মতো সাদা স্বচ্ছ বিন্দুগুলো দেখে মনে হতে পারে এদের পাখায় বুঝি শিশির কণা লেগে আছে! ক্ষণজন্মা লুনা মথের নান্দনিকতারও কিন্তু অন্ত নেই!