সমুদ্রের নিচের এই আজব জগত নিয়ে জীববিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নাই। বলা হয় এই বিশাল এলাকা এবং গভীরতা জুড়ে এতই প্রাণী আছে যে নতুন প্রাণী খুঁজে পাওয়া কোনো অসম্ভব বিষয়ই না। এই সব প্রাণীদের খুঁজে বের করার জন্য একটা সংগঠনও রয়েছে। নাম, ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পিসিস এক্সপ্লোরেশোন (IISE) বা আন্তর্জাতিক প্রজাতি সন্ধান প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় আঠারো হাজার প্রজাতি খুঁজে পাওয়া যায়। এই পর্যন্ত প্রায় বিশ লক্ষ নতুন প্রজাতির নামকরণই করা হয়েছে। IISC এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কুইন্টিন হুইলার দাবী করেন আরও অন্তত এক কোটি নতুন প্রজাতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাবা যায় কত্ত কত্ত প্রজাতি এখনও আমাদের জানার বাইরে রয়ে গিয়েছে?
এই সংগঠনের জীববিজ্ঞানী এবং ফটোগ্রাফাররা প্রতিনিয়ত মজার মজার অভিজ্ঞতা এবং রহসের মুখোমুখি হন। সাগরের মতো এই রহস্যেরও তল খুঁজে পাওয়া দায়! যেমন গত বিশ বছর ধরে তারা জাপানিজ উপকূলে একটা ছয় ফুট মতো ব্যাসের অদ্ভুত একটি জ্যামিতিক নকশার বৃত্ত লক্ষ করছিলেন। এই বৃত্তটি নিয়ে তাদের চিন্তার অন্ত ছিলো না। তারা সেই বৃত্তের নাম দিয়েছেন ‘ক্রপ সার্কেল’ (crop circle) সমুদ্রের তলায় বালিতে কোন সে শিল্পী এমন একটি নকশা এঁকে যায়? অবশেষে সেই শিল্পীর খোঁজ পাওয়ায় গিয়েছে।
বেলুন মাছ চেনো তো? তোমরা একে পটকা মাছ নামেও চেনো। সারা শরীর ফোলা মজার দেখতে এই মাছের প্রজাতিগুলো বিষাক্ত বলেও পরিচিত। আমাদের এই বেলুন মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Torquigener albomaculosus । এর দেহে সাদা দাগ আছে যেটি দেখলে একে অন্য বেলুন মাছ থেকে আলাদা করা যাবে।
তবে ভেবো না এই বৃত্ত বেলুন মাছগুলো অকারণেই করে। এই বৃত্তের নকশা এবং আকার তাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই জরুরী। অদ্ভুত নকশার এই বৃত্তগুলো আসলে Torquigener albomaculosus প্রজাতির বেলুন মাছগুলোর ডিম পারার সময় হলে ডিমকে রক্ষা করার জন্য তৈরি করা বাসা। এই ডিজাইনের জন্য বেলুন মাছের ডিমগুলো সমুদ্রের স্রোতের মধ্যেও নিরাপদে থাকে। এমনকি সমুদ্রের ঘূর্ণি বা আক্রমণকারী অন্য প্রজাতি থেকেও ডিমগুলোকে রক্ষা করে। এই একটি বাসা এই মাছ একবারই ব্যাবহার করে। হয়তো বিজ্ঞানীরা এতদিন পরিত্যক্ত বাসাগুলোই খুঁজে পেয়েছিলেন তাই বুঝতে পারেননি এগুলোর কারণ কী?