দুর্গন্ধে একাকার জগন্নাথের শৌচাগার

জ্বলে না বাতি, পানির কলটি শেষ কবে সচল ছিল তাও বলা দুষ্কর। ভাঙা বেসিন, আর কমোডে লেগে থাকা ময়লার দুর্গন্ধে আশেপাশে ঘেঁষাও অসম্ভবের মধ্যেই পড়ে। 

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2015, 12:42 PM
Updated : 3 July 2015, 06:23 PM

এরকমই অবস্থা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শৌচাগারের। দুর্গন্ধে একাকার হয়ে থাকা এসব শৌচাগার শেষ কবে পরিষ্কার করা হয়েছিল তাও অজানা।

ছাত্রছাত্রীদের শৌচাগারের অবস্থা এরকম হলেও ঠিক তার উল্টো চিত্র শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারের জন্য তৈরি শৌচাগারের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ফ্লোরেই বিদ্যমান গুটিকয়েক ভাল শৌচাগার কেবল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার ঠেকাতে সেগুলোতে তালা ঝোলে দিন-রাত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবন, বিজ্ঞান ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, নতুন ভবন, ভাষা শহীদ রফিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অধিকাংশ শৌচাগারই ব্যবহার অনুপযোগী, এর মধ্যে গুটিকয়েক শৌচাগার কেবল শিক্ষার্থীদের নকল ‘বহনের’ জন্য ব্যবহার হয়।

আবার শিক্ষার্থীদের তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় দুর্গন্ধ সয়েও অনেক শিক্ষার্থীকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও শৌচাগারগুলোকে ব্যবহারোপোযোগী করার ভাবনা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

যোগাযোগ করা হলে, বাজেট স্বল্পতাকেই এর প্রধান অন্তরায় হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শৌচাগার অব্যবস্থাপনার কারণে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের সংস্কৃতি কর্মীদের। বিশ্ববিদালয়ের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রস্থল এ ভবনে নিয়মিতই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগীরা আসেন। এছাড়া সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত বিশিষ্টজনরা প্রশিক্ষক কিংবা বিচারক হিসেবে আসা-যাওয়া করেন নিয়মিত।

শৌচাগারের কারণে এসব অতিথিদের কাছে বিব্রত হওয়ার কথা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংসদের সভাপতি রিয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রশিক্ষক বা অতিথিরা শৌচাগার ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের লজ্জায় পড়তে হয়। এছাড়া শুক্রবার আমাদের কর্মশালার ক্লাস থাকে, কিন্তু প্রায় শুক্রবারই শৌচাগারে পানি থাকে না।”

“কালেভদ্রে শৌচাগার পরিষ্কার করা হয়, অধিকাংশ পানির কল খারাপ। লাইটও একই অবস্থা- ডেকে এনে ঠিক করাতে হয়।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাবু শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শৌচাগারের অবস্থা খুবই বাজে, বেশিরভাগ সময়ই পানি থাকে না। আর দুর্গন্ধেতো কেউ যাইতে পারে না, এসব বছরে একবারও পরিষ্কার করা হয় না।”

নতুন ভবনের নিচতলায় মেয়েদের কমনরুমের ডানপাশে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি পৃথক শৌচাগার ছিল ভবনটি তৈরির পর থেকেই। কিন্তু শিক্ষকদের শৌচাগারের ঠিক সামনেই শিক্ষকদের জন্য ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করায় শৌচাগারটির প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে দুটি শৌচাগারই তালাবদ্ধ রয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাবুল আফ্রাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের শৌচাগারের অবস্থা একেবারে বাজে, নাজুক। অন্যদিকে শিক্ষকদের শৌচাগার খুব ভাল, শিক্ষার্থীরা যেন ঢুকতে না পারে সেজন্য তারা ব্যবহার করে তালা মেরে রাখে।”

তিনি বলেন, “শৌচাগারে পানি থাকে না, দরজার সিটিকিনি থাকে না, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। যথাসময়ে পরিষ্কারও করা হয় না। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এমন হতে পারে না।”

বাজেট অপ্রতুলতাই শৌচাগার রক্ষণাবেক্ষণের প্রধান অন্তরায় উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নাসির উদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ কোটি টাকার বাজেটের বেশিরভাগই চলে যায় বেতনে। আর উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ খাতে তেমন কোন বাজেট নেই। এরপরও এখাতে আলাদা আলাদা বাজেট দিয়েছি, কিন্তু এগুলো কোন কাজে আসেনি।

“ছাত্রকল্যাণের জন্য একপয়সাও বরাদ্দ নাই। যেসব কাজ পেয়েছি বেশিরভাগই নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে করিয়েছি।”

তিনি বলেন, “আমরা এক এক করে কাজ করছি। ইতোমধ্যে মেয়েদের জন্য দুটি কমনরুমের কিছু কাজ করেছি। তবে শৌচাগারগুলোর ব্যাপারে আমি নজর দিব।”

যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ আলী আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের বাজেট তুলনামূলকভাবে অনেক কম, এটা একটা কারণ।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি বিষয়গুলো দেখবো। আপনি এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন।”