যাত্রাবাড়ীর ‘অতি জরুরি’ পার্কটি এখন ভাগাড়

জমে থাকা নোংরা কাদা-পানি, ছড়ানো আবর্জনা, ফল বিক্রেতাদের ভ্যান আর সরকার সমর্থক কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয়- সবই আছে রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীর একমাত্র পার্কটিতে।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2015, 05:29 AM
Updated : 1 July 2015, 05:29 AM

কয়েকবছর আগে দখলের যে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় পরিচয় হারিয়ে এমন হাল ‘উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কের’। দখল দৃশ্যমান হলেও কর্তৃপক্ষের চোখে যেন কিছুই পড়ে না।

পার্ক ঘুরে দেখা যায়, পার্কের কার্যক্রম নিয়ে একটি সাইনবোর্ড এবং মাঠে ভাঙা দুটি দোলনার কাঠামো ছাড়া বিনোদনের আর কোনো ব্যবস্থা সেখানে এখন আর নেই।

সীমানা বেষ্টনীতে ঝোলানো সাইনবোর্ডে ‘….এলাকাবাসীর জন্য এই পার্ক অতি জরুরি’ লেখাটি যেন এলাকাবাসীকেই উপহাস করছে।

ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্ক। ভাঙা দুটি দোলনার কাঠামো আর সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো চিহ্ন অবশ্য অবশিষ্ট নেই।

ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়।

প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় পার্কের তিন পাশের লোহার প্রাচীরের কোথাও কোথাও ভেঙে ফলের পসরা সাজিয়েছেন হকাররা। পার্কের ভেতরে প্লাস্টিকের ঝুড়ি ও ভ্যানে ফল ছাড়াও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা হয়।

ফলের আবর্জনায় এই পার্ক যেন মশার বংশবিস্তারেরও কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ফল ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হলে শ্রমিকরা এই পার্কে অস্থায়ী আবাস গড়েন। ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষে শ্রমিকরা চলে গেলে পার্কের দখল নেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

“পার্ক তো এখন আর পার্ক নাই, সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। আগে খেলাধুলার জায়গা ছিল, ছেলেপেলেরা খেলত। বছরে দুইটা ঈদের জামাত হইত, এখন আর হয় না।”

সাইনবোর্ডের এই ভাষ্য এখন আর উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কের সঙ্গে মেলে না।

প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কে ফলের পসরা সাজিয়েছেন হকাররা।

হাতেগোণা তিন-চারটি রুগ্ন গাছ, আর বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কাদা-পানি মিলিয়ে এটিই এখন যাত্রাবাড়ী পার্ক।

এর পশ্চিম পাশ দখল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ের জন্য আধাপাকা ঘর উঠেছে। কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে লেখা- ‘আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহ, প্রধান কার্যালয়, যাত্রাবাড়ী পার্ক, ঢাকা’।

আরেক প্রান্তে রয়েছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যালয় ও কয়েকটি চা দোকান। এমনকি নবনির্বাচিত ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ও এই পার্কের ভেতরে।

তবে পার্কের নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে এর সংস্কারে তৎপর হওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকার সমর্থক কাউন্সিলর মো. আবুল কালাম।

প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কে ফলের পসরা সাজিয়েছেন হকাররা।

ঢাকার উত্তর যাত্রাবাড়ী পার্কের পশ্চিম পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়।

তিনি বলেন, “ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় পার্কটি সম্পূর্ণ দখল হয়ে যায়। বিভিন্ন লোকজন, এমনকি আমার দলের (আওয়ামী লীগ) লোকজনও দখল নিয়েছে। অচিরেই তাদের উচ্ছেদ করা হবে।”

দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে পার্কটিকে নতুন করে সাজাতে সিটি করপোরেশনের কাছে বাজেট চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান বলেন, পার্কের ভেতরে যেসব স্থাপনা তা ‘অচিরেই’ উচ্ছেদ করা হবে।

“পার্কগুলোর দিকে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। ঢাকা দক্ষিণের সব পার্ক জনসাধারণের বিনোদন ও অবসর যাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অচিরেই এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ‍শুরু হবে।”