দুর্ঘটনার ‘ফাঁদ’ এয়ারপোর্ট-কসাইবাড়ি সড়ক

এক কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ সড়কের পুরোটাই এবড়ো থেবড়ো, খানা খন্দে ভরা। বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে এমনই অবস্থা দাঁড়ায়, দেখে বোঝার উপায় নেই সড়কটিতে চলে যানবাহন।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2015, 12:56 PM
Updated : 30 June 2015, 01:33 PM

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উল্টোদিকে বিমানবন্দর স্টেশন ঘেঁষা এই সড়ক কসাইবাড়ি রেলক্রসিং পর্যন্ত বিস্তৃত।

বিমান বন্দরের উল্টোদিকে উত্তরা দক্ষিণখানের সীমানা শুরু। দক্ষিণখান সীমানা ধরে খানিকটা সামনে এগোলে বিমানবন্দর স্টেশন। স্টেশন ঘেঁষেই রাস্তাটি কসাইবাড়ি রেলক্রসিং গিয়ে শেষ হয়েছে। দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে এই পথটি ব্যাবহার করতে হয় দক্ষিণখান, কসাইবাড়ি, গাওয়াইর ও মোল্লার টেকের বাসিন্দাদের।

তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবিহা সুলতানা যেমন কসাইবাড়ি থেকে এই পথ দিয়েই প্রতিদিন কলেজের উদ্দেশ্যে বের হন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “একঘণ্টার বৃষ্টিতে এই রাস্তায় হাঁটু পানি জমে যায়। তখন রিকশা-সিএনজি উল্টে পড়া একটা নিয়মিত ঘটনা। এমনকি বৃষ্টি ছাড়াও শুকনো দিনে গর্তগুলোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।”

সাবিহা যখন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, ঠিক তখন পেছনের চাকা গর্তে পড়ে একটি রিকশাকে উল্টে যেতে দেখা যায়।

দক্ষিণখানের বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিমও এই পথ ধরে গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিন মতিঝিলে নিজের অফিসে যাতায়াত করেন।

বললেন, “এমনিতেই প্রতিদিন বাসা থেকে অফিসে যাওয়ার পথে ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি পোহাতে হয়। তারওপর বৃষ্টি-বাদলের দিনে বাসা থেকে রাস্তায় বেরোলেই এক হাঁটু পানি।”

দীর্ঘ সময় এই সড়ক প্রাণহীন হয়ে পড়ে থাকলেও সংস্কার কর্তৃপক্ষের দেখা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।

মোল্লারটেকের বাসিন্দা গাড়ি ব্যাবসায়ী মো. ইদ্রিস যেমন বললেন, “৯৫ সাল থেইক্কা এই এলাকায় আছি। এই বিশ বছর ধইরা এই রাস্তারে এমুনই দেখতাছি। বৃষ্টির দিনে রাস্তায় যানি (যেন) এক্সিডেন্ট না হয় হেল্লেইগা আমরা মাঝে মাঝে বালু-সুরকি-মাটি দিয়া গর্ত ভরাট করি। কিন্তু একে তো এগুলান তো থাকে না, আবার বৃষ্টি হইলে পুরা রাস্তা কাদা হয়া যায়।”

সড়ক সংস্কারে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে কোন উদ্যোগ এলাকাবাসী নিয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকেরেই কইছি…কাজ হয় নাই। সড়ক ও জনপথের লোকজন কয়, ওগো পারমিশন নাই। আর সিটি করপোরেশনের লোকজনের তো দেখাই পাওয়া যায় না।”

ডিসিসির সুইপারদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি।

“রাস্তার পাশে যে ড্রেইন, ওইটাও যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হইত, তাইলে পানি জইমা থাকতো না। কিন্তু সুইপারগোরও দেখা পাওয়া যায় না।”

সড়কটির এই বেহাল অবস্থার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে কিছু জটিলতা আছে। এ কারণেই রাস্তাটি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “প্রচলিত আইন অনুযায়ী শহরের ভেতরকার রাস্তাগুলো দেখাশোনা করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের এবং হাইওয়ে এবং হাইওয়ের সার্ভিস রোডগুলোর দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের। যে রাস্তাটির কথা এখানে বলা হচ্ছে, সেটা আসলে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের একটি সার্ভিস রোড। সুতরাং আমরা সংস্কার করতে চাইলেও মূল সড়কসহ সার্ভিস রোডগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত আমাদের কিছু করার নেই।”

বনানী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত প্রধান সড়কটি এবং এর সার্ভিস রোডগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে বলে জানান তিনি।

এই সড়ক ও সার্ভিস রোডগুলো সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিলো কি না জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, “আমরা তাদের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ) জানিয়েছি, কিন্তু বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।”