মিরপুরের কালশী রোড এবং দুইপাশে ‘বি’ ও ‘ধ’ ব্লক ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
১১ নম্বরের ‘বি’ ব্লকের ২ ও ৭ নম্বর রাস্তার দুই পাশে খোলা নালা আর প্রায় সব বাসাবাড়ির সামনে জমে থাকা আবর্জনার দুর্গন্ধ নাকে হাত চেপেও ঠেকানো যায় না।
স্থানীয় মুদি দোকানি আমজাদ হোসেন জানালেন, মূল সড়ক থেকে অপেক্ষাকৃত নিচু রাস্তায় বর্ষা মৌসুমে নিয়মিতই কাদাপানি জমে থাকে।
“দুই পাশের রাস্তা উঁচু, কিন্তু ভেতরের রাস্তা নিচু। ফলে বৃষ্টির ৪-৫ দিন পরও পানি সরে না। বৃষ্টি শুরু হলে রাস্তার খোলা ময়লায় ড্রেন বন্ধ হয়ে যায়।”
আমজাদ জানান, এই এলাকায় কিছুদিন আগে সংস্কার কাজ করে গেছে ঢাকা ওয়াসা। রাস্তায় তাদের ফেলে রাখা বালুতে কাদা আরও বেড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, সিটি করপোরেশন অনেকদিন নালা পরিষ্কার না করায় কয়েকদিন আগে স্থানীয়রা মিলে চাঁদা তুলে সাফ করিয়েছেন।
“কিন্তু নালার পাশে তুলে রাখা ময়লাও সিটি করপোরেশন পরিষ্কার করছে না, অথচ এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত ময়লার গাড়ি যায়। জমে থাকা ময়লার কারণে রাস্তায় হাঁটা যায় না, বাড়িতেও দুর্গন্ধে টেকা যায় না।”
বিহারীদের মিল্লাত ক্যাম্পসহ গোটা এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় রাস্তার এমন দশা চলছে বছরের পর বছর ধরে।
‘বি’ ব্লকের মূল রাস্তায়ও দেখা গেছে সিটি করপোরেশনের আবর্জনার কনটেইনার উপচে পড়ছে। পথে রয়েছে সেই কাদাপানির ভোগান্তি।
রাস্তা পেরিয়ে ১২ নম্বরের ‘ধ’ ব্লকে ঢুকতেও একই চিত্র চোখে পড়ে। রাস্তাজুড়ে খানাখন্দ, জমে থাকা পানি, আর দুর্গন্ধ।
বেহাল রাস্তার ছবি তুলতেই পথচারী মিনা বেগমের প্রশ্ন- “যাক এইবার কাজ হবে, রাস্তার মাপ নিতে আইছেন?”
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, “লেখলে কিছু হইব না। তবে আমাগো দুর্দশার কথা মানুষ জানব।”
একটু এগোতেই দেখা যায়, রাস্তার পাশে চলছে ওয়াসার পানির পাম্পের কাজ। আর সে কারণে পুরো রাস্তাজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে বালু, পাইপসহ অন্যান্য সামগ্রী। পথচারীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
কেবল গলিপথ না, পূরবী থেকে ক্যান্টেনম্যান্ট যাওয়ার প্রধান সড়ক কালশী রোডেও চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারিরা।
রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল করে ফার্নিচার ও ওয়ার্কশপের কাজ চলছে। লাকড়ি, ফল আর সবজি বিক্রেতারাও ফুটপাত ও রাস্তার কিছু অংশ দখল করে আছেন। আবর্জনার স্তূপ তো রয়েছেই।
কালশী রোডে দেখা গেল রাস্তা দখল করে চলছে বাস মেরামত। ফুটপাতে প্রাইভেটকার রেখে মেরামত করায় পথচারীদের রাস্তা দিয়েই চলতে হচ্ছে।
মেরামতকারী কর্মী সুজন হালদার অবশ্য বেশ স্পষ্টবাদী।
তিনি বললেন, “যাদের গাড়ি মেরামত করি তারা প্রভাবশালী না হলে ব্যবসা চলত না। তাদের গাড়ি মেরামত করলে কে কি বলবে? আর বাংলাদেশে রাস্তা দখল করেই কাজ করতে হয়।”
পুরো পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “আসলে বিষয়টি আমি জানতাম না, আপনি জানালেন।”
এনামুল হক বলেন, তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে হয়তো কাজ ঠিকমতো হয়নি।
“তবে এটা অজুহাত হতে পারে না। নাগরিকদের ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের।”
এনামুল হক বলেন, “আসলে এসব এলাকায় নতুন নগরায়ন হচ্ছে। তাই একদিনে সবকিছু করা সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”