পান্থকুঞ্জ পথিকের নয়!

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় একখণ্ড সবুজ। বেঞ্চি আছে, হাঁটার জায়গা আছে, আছে নিরাপত্তাকর্মী, মালি-ঝাড়ুদারসহ পর্য‌াপ্ত জনবল। তারপরও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নানা দোষে আক্রান্ত কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্ক।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2015, 03:12 PM
Updated : 2 August 2015, 07:32 AM

ত্রিভূজ আকৃতির এই পার্কের পেছনের অংশে জমে উঠেছে আবর্জনার স্তূপ। কংক্রিটের বেঞ্চিগুলোতে চলে মাদকসেবী আর প্রতারকদের আড্ডা। সন্ধ্যার পর হাঁটতে গেলে যৌনকর্মীদেরও দেখা মেলে এই পার্কে।

ত্রিভূজের শীর্ষভাগে বসানো একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিলবোর্ড আর স্থাপনার যত্ন নিয়মিত নেওয়া হলেও বৃষ্টি হলেই পান্থকুঞ্জের ভেতরে হাঁটার পথগুলোতে জমে যায় জলকাদা। নিড়ানি না পড়া পার্কের কোনো কোনো অংশে গজিয়ে উঠেছে ঝোঁপজঙ্গল। 

পান্থকুঞ্জ পার্কের একটি ছাউনি, সেখানে ঘুমাচ্ছেন এক ভবঘুরে। বৃষ্টিতে চারপাশে জমে আছে পানি।

পান্থকুঞ্জ পার্কের ভেতরের হাঁটাপথের সঙ্গেই বর্জ্যের স্তূপ

সরেজমিনে দেখা যায়, পশ্চিম পাশের সীমানা প্রাচীর জুড়ে ভাসমান মানুষের বসবাসের পাশাপাশি ভেতরের অংশেও পরিবার নিয়ে থাকছেন পার্কের নিরাপত্তারক্ষীরা। তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে তৈরি যাবতীয় বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে পার্কের এক অংশ।  

পার্কের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গড়ে উঠেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে মাঝপথে এসে এর কাজ বন্ধ রয়েছে।

২০০৫ সাল থেকে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এ পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে আর্ক মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড। পার্কের ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটি চারজন নিরাপত্তাকর্মী, দুজন ঝাড়ুদার এবং সাতজন মালিও নিয়োগ দিয়েছে। তবে দেখভাল না থাকায় কোনো আয়োজনই কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশেই কাঁঠালবাগান, পান্থপথসহ বেশ কিছু আবাসিক এলাকা। অন্যদিকে সোনারগাঁও হোটেল। স্থানীয় প্রবীণদের অনেকেই সকালে এই পার্কে আসেন সময় কাটাতে, ব্যায়াম করতে।

পার্কের এক কোণে অর্ধেক পথে আটকে আছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট নির্মাণে কাজ।

পার্কের রক্ষণাবেক্ষণে মালি-ঝাড়ুদার থাকলেও ছাঁটা হয় না বলে ঘাস বড় হয়ে জঙ্গলের রূপ পেয়েছে।

পাশের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের বাসিন্দা ডলি আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পার্কের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এলাকাবাসী তৎপর হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ভবঘুরে, মাদকাসক্ত লোকের আনাগোনা ও অসামাজিক কাজের ফলে অনেক সময় পার্কে ভদ্রলোকের চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়ে।”

পার্ক পরিচালনা কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে তৎপর হলেও কিছুদিন পর তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

পার্কের ভেতরে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে পরিবেশবাদী সংগঠন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও এলাকাবাসী যৌথভাবে আদালতে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে প্ল্যান্ট নির্মাণকাজ বন্ধ থাকলেও নানান সমস্যায় জর্জরিত এ পার্ক।

“পার্কের কর্মচারীরা সপরিবারে সেখানে থাকছে। বাইরে ফুটপাতে কয়েকশ মানুষ স্থায়ী বসতি গড়েছে। এতোকিছু হলে তো পার্ক আর পার্ক থাকে না। এছাড়া প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পার্কটিকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধচক্র গড়ে উঠলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।”

‘পার্কের ভেতর ধূমপান নিষেধ’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশের ফুটপাত দখল করে ভাসমান মানুষের বসতি।

অবশ্য পার্কের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আর্ক মাল্টিমিডিয়ার কর্মকর্তা জামান আহমেদের দাবি, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান ‘সদা সতর্ক’। কোনো অভিযোগ এলে তড়িৎ ব্যবস্থা নেন তারা।

প্রাচীরের বাইরে ভাসমান মানুষের বসবাস সম্পর্কে তিনি বলেন, “পার্কের পাশের ফুটপাত সিটি করপোরেশনের আওতায়। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করলেও কিছুদিনের মধ্যে ভাসমানরা ফিরে আসে।”

অবশ্য এ বিষয়ে নতুন নির্বাচিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে স্বীকার করেন আর্ক মাল্টিমিডিয়ার কর্মকর্তা জামান।