এই ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আর থানা-পুলিশকে ‘ম্যানেজ করেই’ তারা গাড়ি চালাচ্ছেন। আর আওয়ামী মোটর চালক লীগের স্থানীয় একজন নেতা বলেছেন, তিনি টাকা নিয়ে পুলিশকে দেন, তবে নিজে নেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুই পাশে সারি করে রাখা গাড়ির কারণে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে দিন-রাত যানজট লেগে থাকে। পারত পক্ষে গাড়ির যাত্রী ও পথচারীরা ওই সড়ক এড়িয়ে চলেন।
তাদের কয়েকজন বলছেন, ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় তাদের স্থায়ী দোকান নেই। অবশ্য তার প্রয়োজনও নেই। উত্তরা মডেল থানা আওয়ামী মোটর চালক লীগের সভাপতি খোকন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের ‘তত্ত্বাবধানে’ তারা নির্বিঘ্নেই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন।
“এখানে ব্যবসা করতে কাগজপত্র লাগে না, ২০-২৫ হাজার টাকা আর অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে বোঝাপড়া হলেই টং দোকান দিয়ে বসা যায়। আসল ব্যাপারটা হল নেটওয়ার্কিং,” বলেন এক ব্যবসায়ী। বোধগম্য কারণেই তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
২০-২৫ হাজার টাকা কাকে দিতে হয় জানতে চাইলে আওয়ামী মোটর চালক লীগের দুই নেতার কথা বলেন তিনি।
“হাবিব ভাই, খোকন ভাই আছেন, সব দিক তারাই দেখেন। মাসিক একটা নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিই আমরা। এখানে সবাই ভাই ভাই, দোকান রাখতে হলে সবার সাথেই খাতির রাখতে হবে,” বলেন তিনি।
ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন করলে ওই ব্যবসায়ী তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, “ট্রেড লাইসেন্স আর এমন কি! দুই-আড়াই হাজার টাকা দিলেই ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়।”
“হাবিব ভাইরা সব ম্যানেজ করেন,” হাসতে হাসতে বলেন শামীম।
রেজা নামের আরেক ব্যবসায়ীর ভাষ্য, কেবল তারাই নন, অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও’ এভাবে রেন্ট এ কারের ব্যবসা করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী মোটর চালক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানের অফিসে গিয়ে সেখানে ‘সততা রেন্ট এ কার’ এর মালিক ছগির হোসেনকে পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে হাবিবের ‘ছোট ভাই’ বলে পরিচয় দেন।
ছগির বলেন, ব্যবসা করতে চাইলে হাবিবুর রহমান ‘সব ব্যবস্থাই করে দেবেন’। তবে ‘লাইন-ঘাট’ জানা থাকা লাগবে।
রাস্তায় কার অনুমতি নিয়ে গাড়ি রাখা হয় জানতে চাইলে একটি টালি খাতা বের করেন তিনি।
সেটি দেখিয়ে বলেন, “থানায় প্রতি মাসে গাড়ি প্রতি ২০০ টাকা করে দেই আমরা। তাছাড়া সবাই সবাইকে সাহায্য করে। এজন্য এই ব্যবসায় ট্রেড লাইসেন্স কোনো ব্যাপার না।”
অফিসে না পেয়ে হাবিবুর রহমানকে ফোন করলে তিনি অনুমোদনহীন রেন্ট এ কার ব্যবসায় জাড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও টাকা লেনদেনে হাত থাকার কথা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, গাড়ি আর দোকানের জন্য পুলিশকে ‘কিছু টাকা দিতেই হয়’; ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ে তিনি সেই টাকা থানায় দেন, নিজে কিছু নেন না।
“আমি কোনো টাকা খাই না, এটা মিথ্যা অভিযোগ। দোকানের জন্য, গাড়ি রাখার জন্য থানায় কিছু টাকা দিতে হয়। তবে কাকে টাকা দিই, কোন থানায়- তা বলব না।”
হাবিব দাবি করেন, ওই রাস্তায় যত গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা দেখা যায়, তার বেশিরভাগই বিভিন্ন অফিসের গাড়ি, রেন্ট এ কার ব্যবসায়ীদের নয়।
অনুমোদনহীন রেন্ট এ কারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশের টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি আলি হোসেন বলেন, হাবিবুর রহমানকে তিনি চেনেন না।
পুলিশের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জোন-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন বলেন, বেশ কয়েকদফা রেন্ট এ কার ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। পরে তারা আবারও বসেছে।
“এরা তো ভ্রাম্যমাণ, ট্রেড লাইসেন্স পাবে কি করে। তাদের আমরা উচ্ছেদ করি, আবার বসে। সামনে পুলিশ সাথে নিয়ে আবার উচ্ছেদ করব।”
করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের প্রধান রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়াও বলছেন, অনুমোদনহীন রেন্ট এ কারের ব্যবসা বন্ধে তারা ‘সচেষ্ট’।
“এগুলো সব অবৈধ দোকান, ব্যবসাও অবৈধ। সিটি করপোরেশন যে কোনো সময় এগুলো উচ্ছেদ করবে।”