গত প্রায় তিন মাস ধরে সড়কে পানি জমে থাকায় এই ভোগান্তিতে রয়েছেন রাজধানীর পূর্ব দোলাইরপাড়ের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা জানান, কুতুবখালী খাল দিয়ে বৃষ্টি ও গৃহস্থালীর ব্যবহার্য পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে।
এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর এ সমস্যা আরও বেড়েছে।
তারা বলছেন, সকালে সড়কে পানি কম থাকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পানি। সন্ধ্যার দিকে তা চরম আকার ধারণ করে। আর বৃষ্টি হলে পুরো সড়কে হাঁটু পানি জমে যায়।
পানি জমে গেছে দোলাইরপাড় ১, ২, ৩ এবং কবিরাজবাগ গলিতে। এসব গলিতে সিমেন্টের বস্তা, ইট ফেলে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। নোংরা পানি থেকে বাঁচতে এলাকার দোকানগুলোর বেশিরভাগের সামনেই ছোট দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে।
হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় এ সড়কে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। দুই-একজন হেঁটে যাচ্ছেন কাপড় গুটিয়ে। সড়কের এ অংশে রিকশা ছাড়া চলাফেরা করা যায় না।
রিকশা ভাড়াও অনেক বেশি জানিয়ে স্থানীয় গৃহিনী হোসনে আরা বলেন, “রিকশাওয়ালারা আসতে চায় না। ডাবল ভাড়া চায়।”
“পানি এত নোংরা। পানি পাড়াইয়া অনেকের চুলকানি, খোসপাঁচড়া হয়ে গেছে।”
সড়কে পানি জমে থাকায় এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বিপাকে পড়ে বলে জানান চা বিক্রেতা মরিয়ম।
প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, “স্কুলের বাচ্চারা তো সবাই রিকশায় যাইতে পারে না। যারা হাঁইটা যায়, পানি ছিট্টা অনেক সময় হেগো কাপড় নষ্ট হয়। আর মাজে-মইদ্দে এইহানের গর্তে রিকশার চাক্কা পইরা উল্টাইয়া যায়।”
পানি থেকে বাঁচতে এ সড়কের পাশের প্রায় সব দোকানের সামনের অংশে এক-দেড় ফুট উঁচু দেয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও বেশি বৃষ্টি হলে কিংবা বেশি গতিতে যানবাহন যাওয়ার ফলে সৃষ্ট ঢেউয়ে পানি উপচে দোকানের ভেতর চলে আসে।
“এই সড়ক দিয়ে লোকজন চলাফেরা করে কম। পানি পাড়াইয়া লোকজন জিনিসপত্র কিনতে আসতে চায় না। বেচাকেনা খুব কম। গত সপ্তায় ঘরে পানি ঢুকে আমার চারটি ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে।”
পাটোয়ারি ট্রেডার্সের বিক্রেতা মো. খলিলুল্লাহ বলেন, “কাস্টমারই তো আসে না। বেচাকেনা হইবো ক্যামনে? বৃষ্টি বেশি হলে দোকানে পানি আসে।”
খালে পানি আটকে জলাবদ্ধতা
কুতুবখালী খালের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সরতে না পারায় তা সড়কে উপচে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
“গত বছর খাল পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু লোকজন ময়লা ফেলে ভরাট করেছে। এ কারণে পানি যেতে পারে না।”
কুতুবখালী খালের দোলাইরপাড় ঢাল থেকে কুতুবখালী বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশ ঘুরে তাদের কথা সত্যতা পাওয়া যায়।
দোলাইরপাড় বাজারের কাছে খালের কোনো চিহ্নই নেই। পুরো খালই ভরাট করে ফেলা হয়েছে আবর্জনা দিয়ে। একপাশ দিয়ে পানির সরু একটি প্রবাহ বইছে। বাজারে কালভার্টের কাছে বাঁশের খুঁটির বেড়া দিয়ে মাটি ফেলে খাল ভরাট করা হয়েছে।
পুরোনো ফ্রিজের কাঠামো, সোফার কাঠামো, উচ্ছিষ্ট নির্মাণ উপকরণ এনে ফেলা হয়েছে খালে।
কুতুবখালী মাদ্রাসাতুল কুরআন বাংলাদেশ- এর সামনে থেকে কুতুবখালী বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশে শতশত পলিথিনের ব্যাগে ভরে গৃহস্থালীয় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে খালে। ফেলা হয়েছে দোকানের উচ্ছিষ্ট।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা না দিয়ে ময়লা খালে ফেলে দেয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কুতুবখালীর বাসিন্দা আয়নাল হোসেন।
“গতবার মাত্র খাল পরিষ্কার কইরা গ্যালো। কিন্তু মাইনসে এ্যামনে ময়লা ফেইল্লা খালডা আবার ভইরা ফালাইল।”
কুতুবখালী থেকে দোলাইরপাড় পর্যন্ত খালের দুপাশের বাড়ির মালিকরা খালে টংদোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ কারণেও খালে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দোলাইরপাড় বাজারের কাছে খালের ওপর টংদোকান চালাচ্ছেন মোবারক হোসেন। খালের পাশের বাড়িওয়ালা এসব টং দোকান তুলে ভাড়া দেন বলে জানান টংয়ের এই চা-সিগারেট বিক্রেতা।
“বাড়িওয়ালা না কইলে তো এইখানে দোকান তুলতে পারতাম না। প্রতিমাসে বাড়িওয়ালারে এক হাজার টাকা দেই। তারা উঠাইয়া দিলে চইল্লা যামুগা।”
এ বিষয়ে কথা বলতে ওই বাড়িতে গিয়ে রাহাউদ্দিন সর্দারকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী জানালেন, আগে তাদের পাঁচটি দোকান ছিল খালের ওপর। গত বছর খালের পাড় দিয়ে সড়ক তৈরির সময় চারটি দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছে।
খালের ওপর দোকান দিয়েছেন কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আরও অনেক মাইনসে দোকান দিছে। হেরলাইগ্যা আমরাও বাড়ির সামনে দোকান দিছি।”
খালের ওপর দোকান দিলেও তাতে পানি প্রবাহ বাধা পায় না বলে দাবি করেন দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ৩০৭ নম্বর বাড়ির মালিক ইসমাঈল হোসেন।
“টং বানাইছি বাঁশ দিয়া। বাঁশের খুঁটিতে পানি আটকাইয়া রাহে না, পানি আটকায় ময়লায়। ময়লা পরিষ্কার করলে দোকান কোনো সমস্যাই না।”
কুতুবখালী খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
বরাদ্দ না থাকায় খালটি এবছর সংস্কার করা যায়নি বলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষন) মো. আবদুল আউয়াল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান।
তবে খাল খনন এবং দখলদার উচ্ছেদে একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা জানালেন তিনি।
“গত বছর এ খাল খনন করা হয়েছিল। এ বছর বরাদ্দ না থাকায় এ খালের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারিনি। আমরা একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছি। এটি অনুমোদন হলে দখলদার উচ্ছেদ করে খালটি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে।”