ফিরতি যাত্রার তৃতীয় দিনেও যাত্রীদের ‘উপচে পড়া’ ভিড়

ঈদ শেষে রাজধানীতে ফেরার যাত্রায় তৃতীয় দিনেও কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাটসহ বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের ‘উপচে পড়া’ ভিড় দেখা গেছে।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2016, 04:45 PM
Updated : 29 June 2020, 04:16 PM

ফিরতি যাত্রার এই দিনেও যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভোগান্তি পোহানো আর বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে গত বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। এবার ঈদ, শবে কদর ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মোট নয়দিন বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশের অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এলক্ষ্যে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে কর্মজীবী মানুষের রাজধানীতে ফেরা।

ঈদ ফেরত যাত্রার তৃতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে আসা ট্রেনগুলোয় ছিল উপচেপড়া ভিড়, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের ট্রেনগুলোর ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে ছাদে চড়েছেন।

সরেজমিনে দুপুর ১টার দিকে জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি ছিল যাত্রীতে পূর্ণ দেখা যায়।

অনেক যাত্রী ছাদে চড়ে এসেছেন; কয়েকজন নারীকেও দেখা গেছে ছাদে চড়ে আসতে। স্টেশনে আসার পর ছাদ থেকে নামতে না পেরে তাদের কয়েকজন কান্নাকাটি শুরু করে। পরে রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় ছাদ থেকে নামেন তারা।

এদেরই একজন তেজগাঁওয়ের একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, যেকোনো ভাবেই ঢাকায় আসতে হতো তাকে, তাই ট্রেনের ছাদে উঠেছেন।

“কারখানা চালু হইয়া গ্যাছে। কাইলকা জয়েন করতেই অইব। যেমনেই হউক আসা লাগব, হেরলাইগ্যা ছাদে উঠছি।”

আরেক যাত্রী আরিফুল ইসলাম ইসলাম অভিযোগ করেন, আসনের ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি টিকিট বিক্রি করেছে ট্রেনের ইজারাদার; যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

“ইজারাদাররা একটি সিটের টিকিট কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেছে। ট্রেনে উঠার পর দেখা গেল সিটে আরেকজন বসে আছে।”

জামালপুরের নান্দিনা থেকে আসা যাত্রী মো. শাহ আলম জানান ট্রেনে অতিরিক্ত ভিড়ের কথা।

“এমন ভিড় ভাই, পা রাখার জায়গাও ছিল না।”

শাহ আলমের স্ত্রী মাহিয়া আক্তারের কাছে ট্রেনের এ অভিজ্ঞতা ‘ভয়াবহ’। তারপরও আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দটাই তার কাছে বেশি বড়।

“আসা-যাওয়ার এ কষ্ট সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দের কাছে কিছু না।”

যমুনা এক্সপ্রেসে ময়মনসিংহ থেকে আসা যাত্রী মো. আবদুল খালেক জানালেন সিট না পেয়ে ভোগান্তির কথা।

“মৈমনসিং থাইক্কা কোনোমতে ট্রেইনে উটলাম। ভিতরে কোনোখানে বসার জো নাই। খাড়ায়া থাকতে থাকতে কোমর ব্যাথা হইয়া গ্যাছে।”

ঈদ ফিরতি যাত্রায় গত কয়েকদিনের মতো সোমবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা বেশিরভাগ ট্রেন কমলাপুর পৌঁছতে দেরি করেছে।

সবচেয়ে বেশি দেরি করেছে দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেস; সকাল ৭টা ১০ মিনিটে কমলাপুর আসার কথা থাকলেও ট্রেনটি এসেছে দুপুর পৌনে ১টায়। এছাড়া ধুমকেতু এক্সপ্রেস দেরি করেছে এক ঘণ্টা।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে এসেছেন মতিঝিলের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রুবেল হোসেন। ট্রেন দেরি করায় দুর্ভোগের কথা জানান তিনি।

“রাত ১১টায় গাড়ি আক্কেলপুর পৌঁছার কথা। কিন্তু গাড়ি পৌঁছায় ভোর ৪টায়। কি যে কষ্ট হয়েছে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে, সে কথা বলে বোঝানো যাবে না।”

কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত কমলাপুরে ২১টি ট্রেন এসেছে। এর মধ্যে ছয়টি ট্রেন সময়মতো পৌঁছেছে, বাকিগুলো দেরি করেছে।

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপেই ট্রেনগুলো দেরি করছে বলে দাবি করে এজন্য একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের উদাহরণ দেন এই রেল কর্মকর্তা।

“দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসার পর ১৬টি স্টেশনে দাঁড়ায় ট্রেনটি। প্রতিটি স্টেশনে দুই মিনিট করে সময় দেওয়া থাকে, কিন্তু যাত্রীদের চাপের কারণে কোনো স্টেশন থেকেই নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়তে পারে না।

“এভাবে প্রতিটি স্টেশনেই দেরি করার কারণে কমলাপুর আসতেও দেরি করে। আবার কমলাপুর থেকে ছাড়তেও দেরি করে।”

যাত্রী বেশি থাকে বলে ট্রেনগুলো নির্ধারিত গতিতে চালানো যায় না বলেও ট্রেন দেরিতে আসছে বলে জানান কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু।

বাসে বাড়তি ভাড়া

ফিরতি যাত্রায় রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা মানুষের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।

বাসগুলোয় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীদের অনেকে।

সোহাগ পরিবহনের বাসে যশোর থেকে এসেছেন একটি কম্পিউটার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. আলমগীর হোসেন। ঈদ পরবর্তী যাত্রায় তেমন অসুবিধা হয়নি তার।

“এবার ১ তারিখে ছুটি পেয়েছিলাম। আগেভাগেই বাড়ি চলে গেছি। সবার বাড়িতে বেড়িয়েছি। খুব মজা হয়েছে।”

তেজগাঁওয়ের একটি মুদ্রণ কারখানার কর্মচারী সুমন শিকদার জানান, মাগুরা থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ২০০ টাকা। আবার পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে।

“অন্যান্য ঈদের সময় পাটুরিয়া থেকে গাবতলী পর্যন্ত ১২৫-১৩০ টাকা নিত। কিন্তু এবার ভাড়া খুবই বেশি নিচ্ছে।”

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে এসেছেন একটি ইলেকট্রনিক কোম্পানির সুপারভাইজার সাদেকুল ইসলাম। রাস্তায় যানজট না থাকলেও অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

“মির্জাপুর থেকে গাবতলী পর্যন্ত ভাড়া নিল ৩৫০ টাকা। এটা খুবই বেশি।”

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থেকে আসা মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র রেজোয়ান আহমেদ অভিযোগ করেন পাটুরিয়ায় বিভিন্ন পরিবহনের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও পুলিশ নিষ্ক্রিয়।

“নব্বই টাকার ভাড়া নিচ্ছে ২০০ টাকা করে, এটা চরম অন্যায়। ঘাটে পুলিশের সামনেই এরকম করছে পরিবহনগুলো। কিন্তু পুলিশ তাদের কিছু বলছে না।”

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেউ যেন যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

“আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দু-একটি বাস হয়তো হয়তো অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারে, সেটা আমাদের চোখে পড়েনি।”

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে রোববার দুটি বাসের চালককে জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান ট্রাফিক পুলিশের এই পরিদর্শক।

এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ঈদ ফেরত যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখতে পেয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকের আলোকচিত্রীরা।