রাস্তা নয়, যেন ধ্বংসস্তূপ

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে যাওয়ার সড়কটি দেখে কেউ বলবে না- মাত্র দু মাস আগেই সংস্কার হয়েছে এই রাস্তা।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2015, 03:34 AM
Updated : 8 Dec 2015, 03:34 AM

সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ সরে গর্ত তৈরি হয়েছে এরই মধ্যে; পুরো রাস্তা যেন একটি বিশাল ধ্বংসস্তূপ।

স্থানীয়রা জানান, বীর উত্তম খালেদ মোশাররফের নামে এ সড়কটিতে গত বর্ষা মৌসুমে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। দুই মাস আগে এর সংস্কার করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘জোড়াতালির’ সংস্কারের কারণে রাস্তা দুই মাসেই আবার ফিরে গেছে পুরনো অবস্থায়।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বেশ কয়েক স্থানে রাস্তার পিচ সরে গিয়ে নিচের ইট দেখা যাচ্ছে। আর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের যে মাঠে বাণিজ্যমেলা হয় তার লাগোয়া সড়কটির অবস্থাও ভগ্নপ্রায়।   

রাস্তার বিভিন্ন অংশ ভেঙে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু ছোট বড় গর্ত। এ কারণে গতি নামিয়ে গাড়ি চালাতে হয় এই সড়কে।

এ পথ ধরেই মোটর সাইকেল চালিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমানের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার অফিস গুলশানে। সাধারণত চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনের সড়ক দিয়ে বিজয় সরণি হয়ে গুলশান যাওয়া সহজ। কিন্তু দেখা যায় বেশির ভাগ দিন অফিস শুরুর সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য সড়কটি বন্ধ করে রাখা হয়।”

“সকালে তীব্র যানজটের কারণে মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে গেলে অনেক সময় লেগে যায়, তাই সময় বাঁচাতে আমার মতো অনেকেই বিকল্প এ সড়ক ব্যবহার করেন। অথচ বছরের ১২ মাসই সড়কের এই অবস্থা।”

একই সড়কে নিজের গাড়ি নিয়ে অফিস করেন মো. মিন্টু।

তিনি বললেন, “বৃষ্টির সময় এই সড়কে আসাই যায় না, রাস্তার অবস্থা এতো খারাপ থাকে যে ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। কয়েকদিন আগে ভাঙা অংশগুলোতে ইট দিয়ে মেরামত করা হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যে আবার পুরনো রূপে ফিরতে শুরু করেছে।”

প্রতিদিন অন্তত কয়েক হাজার গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে বলে জানান তিনি।

গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের এক পাশে রয়েছে গণভবন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অন্য দিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

কলেজ গেইট থেকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কটির অবস্থা আরও খারাপ।

রাস্তার মুখেই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। দুটি হাসপাতালের গেইট সংলগ্ন ফুটপাত দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য দোকান।

রাস্তার একদিকে পড়ে থাকতে দেখা যায় ডাবের খোসা, অন্য পাশে আখের উচ্ছিষ্ট। দখলের কারণে সরু হয়ে গেছে চলার পথ।

এ রাস্তার একটি বড় অংশের ওপর পিচের কোনো আবরণ নেই, বেরিয়ে থাকতে দেখা যায় নিচের ইট। কোথাও কোথাও শুধুই মাটি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহাত আফনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঁচ বছর ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, এখন পর্যন্ত কোনোদিন এটি সংস্কার হতে দেখিনি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, একটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজের অবস্থান এখানে। অথচ এ সড়ক নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।”

আরেক শিক্ষার্থী মেজবাউল করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন কাছেই। গণভবনের অনেক গাড়িও এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। অথচ আমার মনে হয় এই সড়কটি রাজধানীর সবচেয়ে অবহেলিত সড়ক।

“এখান থেকে শুরু করে আপনি যদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পর্যন্ত যান, দেখবেন আমি সত্য বলছি কিনা। রাস্তা দেখে প্রথমেই মনে হবে- পশ্চাৎপদ কোনো এলাকায় এসেছি,” ক্ষোভের সঙ্গে বলেন তিনি।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর জোনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা অজিওর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই সড়কের মালিকানা গণপূর্ত বিভাগের। এ কারণে আমরা সংস্কার করতে পারছি না।”

তিনি বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকার সবগুলো সড়ক তারা সংস্কার করতে চাইলেও এখতিয়ার না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

</div>  </p>