থেমে থাকা গাড়ি থমকে দিচ্ছে পথ

দূরত্ব দুই কিলোমিটার, নেই কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল; গাড়িতে মাত্র কয়েক মিনিটের এই পথ যেতে কখনও কখনও ঘণ্টা পেরিয়ে যায়।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 03:19 AM
Updated : 26 Nov 2015, 03:19 AM

রাজধানীর মহাখালী থেকে গুলশান-১ নম্বরের সংযোগ সড়ক এটি।

শহরের অন্যান্য সড়কের তুলনায় অপেক্ষকৃত প্রশস্ত ও চৌরাস্তামুক্ত সড়কটির ফুটপাতে টঙ দোকানিদের উৎপাত ততোটা নয়। কিন্তু রাস্তার দুইধারে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অফিস ও দোকানের কর্মকর্তা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং নিয়মিত দৃশ্য।

বুধবার গুলশান-১ নম্বর চত্বর থেকে মহাখালী ফ্লাইওভার পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী কভার্ডভ্যান ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক স্থানে দুই সারিতে গাড়ি পার্ক করায় মাত্র একটি গাড়ি চলার মতো জায়গা রয়েছে সড়কে। এতে মাঝে মধ্যেই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।

গুলশান থেকে মহাখালীর দিকে আসতে হাতের বাঁয়ে বিলাসবহুল পোশাক ও গৃহসজ্জা সামগ্রীর প্রতিষ্ঠান জারা, স্টাইল, উদয়ন, ফার্স্ট এভিনিউ, স্টাইলসহ আরও কয়েকটি শো-রুম রয়েছে। এসব দোকানের অধিকাংশ ক্রেতাই ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাফেরা করেন। প্রতিষ্ঠানগুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় অধিকাংশ সময় শো-রুমের সামনের রাস্তায়ই সেগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

এদিন বিকালে গুলশান লেকপাড়ে আড়ং ডেইরির কয়েকটি মিনিবাস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের এক বাসচালক আজিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোম্পানির কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা থাকলেও মিনিবাসগুলোর জন্য কোনো জায়গা নেই। তাই কর্মচারীদের পরিবহনে নিয়োজিত ১২টি মিনিবাস বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে এসে রাস্তার উপরে দাঁড়ায়।

“কী করার আছে ভাই? সারা শহরেরই তো একই অবস্থা। পার্কিংয়ের জন্য পরিকল্পিত কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় পুলিশ এসে গাড়িতে র‌্যাকার লাগায়। তারপরও এখানেই আমাদের দাঁড়াতে হয়,” বলেন তিনি।

লেকপাড়ে ব্র্যাক সেন্টার ইন সংলগ্ন সড়কে দাঁড়ানো ছিল প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তার গাড়ি।

ওই গাড়ির চালক জানান, ব্র্যাক সেন্টারে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে সেখানে শুধু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের গাড়িই রাখা হয়। অতিথি ও মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের গাড়ি বাইরে রাস্তায় রাখতে হয়। 

রাস্তার উত্তর পাশেই রয়েছে কাদেরিয়া টাওয়ার, লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার, গ্রিন ডেল্টা এইমস টাওয়ারসহ আরও কয়েকটি বহুতল ভবন। সড়কের দুই ধারেই রয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস।

কাদেরিয়া টাওয়ারের পাশের একটি ভবনের সামনে বিকালে কয়েকটি প্রাইভেটকার দেখা যায়।

ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী জানান, নিচে যে পার্কিংয়ের স্থান আছে সেখানে আটটি গাড়ি রাখা যায়। নিজস্ব গাড়ি রাখার পর অতিথিদের গাড়ি রাখার সুযোগ নেই। তাই যার যার গাড়ি তার দায়িত্বে থাকে।

মহাখালী থেকে গুলশানের দিকে একটু এগুলোই মোবাইল অপারেটর সিটিসেলের কার্যালয়সহ আরও কয়েকটি বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এসব কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দিনের বেলায় অসংখ্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

ওবায়দুল নামের এক রিকশাচালক ক্ষোভের সুরে বলেন, “যানজটের জন্য শুধু রিকশাওয়ালাদের দোষ দিতে শুনি। কিন্তু ভিআইপি লোকদের গাড়িগুলো যে নিজের খুশি মতো পার্ক করে জটলা বাধাচ্ছে সেদিকে কারও খেয়াল নাই।”

এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের গুলশান অঞ্চলের সহকারী কমিশনার নুসরাত জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলশান থেকে মহাখালীর আমতলী পর্যন্ত এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের গাড়িগুলোকে প্রায় সতর্ক করা হয়। মাঝে মধ্যে রেকারেও বাধা হয়। কিন্তু পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।”