গুলিস্তান থেকে নয়াবাজার, তালগোলে স্থবির

নতুন ও পুরান ঢাকার সংযোগস্থল গুলিস্তান থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত যানবাহনে ১০-১৫ মিনিটের পথ হলেও এ এলাকায় এসে কারও উদভ্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক না।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 06:00 AM
Updated : 25 Nov 2015, 01:03 PM

সুই-সূতা থেকে নিত্যদিনের বাজার-সদাই- কি নেই এই এলাকায়। রাস্তা, ফুটপাত- সবই ঢাকা পড়েছে দোকান, গ্যারেজ, আর পার্কিং করে রাখা যানবাহনে। বিশাল এই এলাকা এখন বিশৃঙ্খলা আর যানজটের আরেক নাম।

হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে, রাস্তা-ফুটপাতে ছড়িয়ে থাকা মালামাল মাড়িয়ে পথ চলা আর যানজটকে ভবিতব্য বলেই মেনে নিয়েছেন পথচারী-এলাকাবাসী।

দখলদার, দোকানি, ব্যবসায়ী- সবারই এক কথা ‘এখানে ব্যবসা ভালো’। তাই, মাটি কামড়ে পড়ে থাকা। অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।    

গুলিস্তান থেকে সিদ্দিকবাজার, সুরিটোলা, বংশালসহ নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুইপাশে ফুটপাতে ব্যবসায়ীরা রড, পাইপসহ বিভিন্ন পণ্য রেখে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ ফুটপাতে ছাউনি দিয়ে পণ্য সাজিয়েছেন। চলছে জমজমাট কেনাবেচা।

পণ্য নিয়ে গন্তব্যে ছোটার অপেক্ষায় ঠেলাগাড়ি, ভ্যানগাড়ি, কভার্ড ভ্যান আর রিকশাও আছে ফুটপাত ঘেঁষে। রাস্তার ওপরই চলে ট্রাক থেকে পণ্য নামানো, ট্রাকে তোলা। আছে ব্যবসায়ী, ক্রেতাদের যানবাহনও। কোথাও আবার রাস্তার ওপরই চলে যানবাহন মেরামতের কাজ।

খাবারের দোকানের চুলাও ফুটপাতে বসানো, যার পাশ দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করেন পথচারীরা।

ফুটপাতে পণ্য রাখার কারণ জানতে চাইলে ‘জে সি ট্রেডিং’য়ের বিক্রেতা আলমগীর জানান, এটা সাময়িক।

“পণ্য তো আমরা রাখি না, যিনি কেনেন, তিনিই গাড়িতে তোলার জন্য দোকানের সামনে রাখেন। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই সরিয়ে ফেলেন, আর রাখার অন্য জায়গাও তো নাই,” বলেন তিনি।

দোকানের সামনে ভ্যানচালক কামরুল জানালেন, এখানে পাঁচ মিনিট বসলেই মেলে ‘খ্যাপ’।

দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতও। সেখানে বসানো হয়েছে রিকশা মেরামতের অস্থায়ী দোকান, মুদি দোকান।

স্কুলের ঠিক সামনেই একটি গলিপথের সংযোগস্থলেই রাখা হয়েছে রয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্যের দুটি কনটেইনার। এসব কনটেইনারের আশপাশে রাস্তার প্রায় অর্ধেকটাজুড়ে গড়ে ওঠেছে অস্থায়ী দোকান। ফলে প্রতিনিয়তই থাকছে যানজট।

স্কুলের সামনে রিকশা মেরামতকারী হাসান আলী বলেন, “অল্প একটু জায়গায় আমি বসছি। ময়লার কনটেইনারের পাশে ফাঁকায় রিকশা মেরামত করি। এতে যাতায়াতের কোনো অসুবিধা হয়না।”

“রাস্তার এ অংশ তো দোকানের মালামালের জন্য বন্ধই থাকে। তার এক ফাঁকে দোকান বসাইছি,” যুক্তি বংশাল মোড়ের ফুটপাতের ফলবিক্রেতা শামসুদ্দীন মিয়ার।

পরিস্থিতি আর বদলাবে না- এমনটা ভেবে বর্তমান অবস্থা অনেকটা মেনেই নিয়েছেন পথচারী ও এলাকাবাসী।

সুরিটোলার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, “বছরের পর বছর এসব এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, রাস্তায় বেচাকেনা করাটাই নিয়ম। এর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছে না, দেখারও কেউ নেই। আপনি বলতে যান, দেখেন সবাই ক্ষেপে যাবে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান নিয়মিত এ পথেই চলাচল করেন। তার গন্তব্য ১৫ মিনিটের পথ, কিন্তু যানজটের কারণে অনেকসময় দেড়ঘণ্টাও লেগে যায়।

“এ এলাকায় কোর্ট, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিটফোর্ডসহ কয়েকটি হাসপাতালও রয়েছে। ফলে ব্যস্ত এ রাস্তাটি দখলমুক্ত রাখা উচিত।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দখলদারদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা ভাবছে।

করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল বলেন, “আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি, মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা ভাবছি, এখানে যারা আছে, তাদের কিভাবে পুনর্বাসিত করা যায়।”

ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোকেই যানজটের অন্যতম কারণ হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এ সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”