তবে হাসপাতালের ফটকের সামনের ‘অবস্থা’ দেখে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। কারণ ফটকের মুখেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে পুরো এলাকার আবর্জনা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছে, এই ময়লা-আবর্জনা থেকে উল্টো সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আশংকা করছেন তারা।
আওরঙ্গজেব রোড ও তাজমহল রোডের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান বিশেষায়িত এই হাসপাতালের।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেল, মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা নিয়ে আসা ভ্যান গুলো দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালের গেটের সামনে।
অনেককেই দেখা গেল হাসপাতালে ঢুকছেন রুমালে নাক চেপে।
তবে কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে নতুন কর্মযজ্ঞ। হাসপাতালটির প্রবেশ পথের মুখে তৈরি করা হচ্ছে ডাম্পিং স্টেশন।
নির্মাণ কাজের ইট, সুরকি, বালি রাখা হয়েছে সড়কদ্বীপে। নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য একটি টিনের ঘরও তৈরি করা হয়েছে।
এই নির্মাণযজ্ঞের মধ্যে চোখের আড়ালে পড়ে রয়েছে হাসপাতালের মূল ফটক ও সাইনবোর্ড। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি হাসপাতাল রয়েছে।
ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান সিদ্দিকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ নিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন- সব জায়গাতেই অসংখ্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য এখানে এসেও দেখে গেছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
“পরোক্ষভাবে অনেকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যেন এটি নিয়ে কোন কথা না বলা হয়।”
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “একটি হাসপাতালের সামনে এভাবে ডাম্পিং স্টেশন থাকায় এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মা ও শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়াতে পারে।
“অন্যদিকে, এই ডাম্পিং স্টেশনের জন্য এখানে একটি জায়গা তৈরি হয়েছে যেটি এলাকার মাদকসেবী এবং বখাটেদের আড্ডাখানা হবে। আপনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন আমাদের এই হাসপাতালে কোন দালাল নেই, কিন্তু এ ধরনের আড্ডাখানা হলে হয়তো এখানেও দালাল তৈরি হবে।”
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মিত হয় ১৯৭৪ সালে। ২০১০ সালে এর সাথে একটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল চালু করা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, হাসপাতালটিতে সন্তান প্রসবসহ মা ও শিশুদের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
পরিবার পরিকল্পনা সেবা, শিশুদের টিকাদান, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন সেবা নিতে সেন্টারটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জন রোগী আসেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
এছাড়া হাসপাতালটির জরুরি সেবা চালু থাকে ২৪ ঘণ্টা।
ডাম্পিং স্টেশনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচ নম্বর অঞ্চলের নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আজিওর রহমান বলেন, “এটি সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সেকেন্ডারি স্টেশন।”
এ থেকে দুর্গন্ধ বা রোগ জীবাণু ছড়াবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে রাজধানীর বর্জ্য সমস্যা ৭০% কমিয়ে ফেলার লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে সিটি করপোরেশনের, যার অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুর এলাকায় এটি তৈরি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।