সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বাংলাবাজার ও ইসলামপুরের সংযোগস্থলে গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়টি নগরীর অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান সড়কে হওয়ায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে।
ওই মোড়ের আশেপাশেই রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুল, সুমনা হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাকেন্দ্র।
কিন্তু উৎকট দুর্গন্ধ আর মাথার ওপর ছড়িয়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারের জঞ্জাল পেরিয়ে কেউ আর ওভার ব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টা করেন না। ঝুঁকি জেনেও পথচারীরা রাস্তার মধ্যে দিয়েই পারাপারের কাজটি সারেন।
অথচ পথচারীদের সুবিধার জন্যই বেশ কয়েকবছর আগে চতুর্মুখী এই ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ছড়ানো-ছিটানো ময়লা, দুর্গন্ধ আর ভবঘুরেদের দৌরাত্মে বাংলাবাজার ফুট ওভার ব্রিজ এখন পরিত্যক্তপ্রায়।
ওভার ব্রিজে ওঠার পথ আর ফুটপাত দখল করে নানা রকম দোকানে চলছে রমরমা ব্যবসা। আর সিঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে দোকানের মালামাল রাখার কাজে।
দখলদাররা তাদের সাইকেল আর দোকানের চৌকি ওই সিঁড়ির সঙ্গেই বেঁধে রাখেন। খাবারের দোকানে আসা রিকশা-ভ্যান চালকরা সিঁড়ির ওপরই উচ্ছিষ্ট ফেলে যান।
ওভার ব্রিজে উঠতেই কয়েকজনকে সিঁড়ি দখল করে শুয়ে থাকতে দেখা গেল। রাতে সেখানে ভাসমান যৌনকর্মীদের ভিড় বাড়ে বলেও স্থানীয়রা জানালেন।
ব্রিজের ওপর দিয়ে দফায় দফায় নিচু হয়ে গেছে বিদ্যুৎ আর কেবল টিভির তার। মাথা সোজা রেখে পেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
ওভার ব্রিজে শুয়ে থাকা কুদ্দুস মিয়া নামের একজন বলেন, “অনেকেই তো থাকে, আমিও থাকি। সারাদিনেও কোনো মানুষ আসে না, তাই থাকতে কোনো সমস্যা নাই।”
ওভার ব্রিজের এক দিকে ওঠার পথের পাশেই দুটি কনটেইনার থেকে উপচে পড়ছে ময়লা। ব্যস্ত এ রাস্তায় কনটেইনার রাখার জায়গাকেই অনেকে আবার বেছে নেন মূত্রত্যাগের জন্য।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে ঢাকায় আসা বরিশালের হারুনুর রশিদ বলেন, “এই ব্রিজ ব্যবহার করতে পারলে পথচারীদের সুবিধা হত। কিন্তু যত্রতত্র মল-মূত্র, এটি এখন পাবলিক টয়লেটে পরিণত হয়েছে।”
বাংলাবাজারের বই বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, “এ রকম ব্যস্ত চৌরাস্তায় ময়লার কনটেইনার রাখার সিদ্ধান্ত জনগণকে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এর মধ্যেই মোড় পার হয়। ফুট ওভার ব্রিজ দেখলে মনে হয় ভবঘুরেদের জন্যই ওটা তৈরি করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী বলেন, পথচারীরা যাতে ফুট ওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য তারা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিয়েছেন।
“কিন্তু বারবার উদ্যোগ নিয়েও আমরা পথচারীদের এটি ব্যবহার করাতে পারিনি।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, রাতেও কিছু ভাসমান মানুষ ওই ওভার ব্রিজে থাকে বলে তারা খবর পেয়েছেন। বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে জানানোও হয়েছে।
“আমরা চিন্তাভাবনা করছি, আসলে কী করা যায়। অবশ্যই এ ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব, যাতে পথচারীরা এটি ব্যবহার করেন; যাতে তারা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারেন।”