অত্যাচারে রুগ্ন ফার্মগেইট পার্ক

রাজধানীর অনেক পার্কের মতো ফার্মগেইটের পার্কটিও (শেরে বাংলা নগর পার্ক) ভাসমান আর ভবঘুরেদের মুফতে থাকার একটি অন্যতম স্থান হয়ে উঠেছে। তাদের যথেচ্ছ ব্যবহারের অত্যাচারে এলাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য করা পার্কটি এখন নিজেই রুগ্ন।

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2015, 10:46 AM
Updated : 24 August 2015, 02:50 PM

পুরো পার্কজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা, মাটি ও গাছে পার্কের ‘বাসিন্দাদের’ শুকাতে দেওয়া কাপড়, ভ্রমণে আসা মানুষদের জন্য করা ছাউনির নিচে মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের অলস সময় কাটানো, এখানে-ওখানে অস্থায়ী বসতি, ভাঙা বেঞ্চ- ফার্মগেইট পার্কের ‘অলঙ্কার’ এখন এগুলোই।

ভাসমান মানুষের বিনে পয়সার বসতি ফার্মগেট পার্ক। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ভাসমান মানুষের বিনে পয়সার বসতি ফার্মগেট পার্ক। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

খামারবাড়ী সড়ক ও ইন্দিরা রোডের মাঝে লম্বালম্বি পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, সীমানা প্রাচীরের লোহার রেলিং উধাও। পার্ক ঘেঁষা ফুটপাতে কাঠ-বাঁশ-পলিথিনের খুপরি তুলে সংসার সাজিয়ে বসেছে ১০-১২টি পরিবার। ফুটপাতে বেশ কয়েকটি অস্থায়ী দোকানও গড়ে উঠেছে। অস্থায়ী দোকান রয়েছে পার্কের অভ্যন্তরে, এমনকি প্রবেশপথেও।

পার্কের ঢুকলেই মনে হতে পারে, এটি বুঝি ময়লার ফেলারই জায়গা। দিনভর কুড়িয়ে আনা কাগজ, পলিথিন পার্কে এনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে ভবঘুরেরা। পার্কের ভেতরেই আখের রস ও আমড়ার দোকানিরা বর্জ্য ফেলছেন। স্তূপাকার আবর্জনা পচে দুর্গন্ধ ছড়ালেও দেখার কেউ নেই।

পার্কে কাগজ ও পলিথিন শুকানোর সময় কথা হয় মনির হোসেন নামে একজনের সঙ্গে। কোনো বাধা না থাকায় এখানে অনেকেই এসব শুকাতে আসেন বলে জানান তিনি।

প্রাকৃতিক কর্মটিও অনেকে পার্কেই সারেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

বিশ্রামের বেঞ্চ, ছাউনি সবই ভবঘুরেদের দখলে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পার্কের ভেতরে পলিথিন ঘর তুলে বসবাস করছে ১৫টির বেশি পরিবার। এসব পরিবারের কাপড় শুকানো হয় পার্কের মাঠে ও গাছে। রান্না এবং মলত্যাগ- সবই চলে এখানে। অথচ পার্ক লাগোয়া পাবলিক টয়লেট রয়েছে।

পার্কে বসতি গড়া মাদারীপুরের সুফিয়া বেগম জানান, স্বামীর সঙ্গে সিলেটে থাকলেও মনোমালিন্যের কারণে তিনদিন হলো ঢাকায় এসেছেন কাজের সন্ধানে। তবে কাজ পাননি।

“এখানে যারা থাকেন তারা অনেকেই মাদারীপুরের, পাশের ঘরে যে বুড়া-বুড়ি থাকেন তারা আমার এলাকার। তাই থাকতে দিছেন। একদিন পুলিশ এসে তাদের জিগাইছিল আমি কে, এছাড়া আর কোনো সমস্যা হয়নি। কাজ পাইলে চইলা যাব,” বলেন তিনি।

বিশ্রামের বেঞ্চ, ছাউনি সবই ভবঘুরেদের দখলে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

চলছি কুড়িয়ে কাগজ শুকানো। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পার্কে বসার অধিকাংশ বেঞ্চ ও বিশ্রমা ছাউনি ভাঙ্গা। এসব স্থানে আবার ভবঘুরেরা ঘুমিয়ে থাকেন ভরদুপুরেও। এছাড়া পার্কে নিয়মিত চলে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা। বর্ষা মৌসুমে খেলাধুলার কারণে পুরো পার্কই কর্দমাক্ত।

এতো গেল ফার্মগেইট পার্কের দিনের বেলার চিত্র। অন্ধকার নামতেই পার্কের চেহারাও বদলে যেতে থাকে। রাতে এই পার্ক চলে যায় ভাসমান যৌনকর্মী আর দালালদের দখলে। গভীর রাত অবধিও থাকে এদের আনাগোনা।

এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক জানান, পার্কটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদ ভূইয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।