ধূপখোলা মাঠজুড়ে ‘উন্নয়নের অবিচার’

নামে খেলার মাঠ হলেও উপযোগিতা হারিয়েছে বছর পাঁচেক আগে; সে সুযোগে ছোট-বড় গর্ত আর ইট-সুড়কির স্তূপে ঢেকে থাকা ‘সবার জন্য উন্মুক্ত’ একটি মাঠ হয়ে উঠেছে মাদকাসক্তদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2015, 02:13 PM
Updated : 21 August 2015, 04:46 PM

ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার ধূপখোলা মাঠের এমন দৈন্য দশার জন্য কারা দায়ী সে প্রশ্নে না গিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন এলাকাবাসী।

তারা বলছেন, তারা তাদের শিশুদের জন্য বরাদ্দকৃত এই মাঠ আগের অবস্থায় দেখতে চান।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী রাখার কাজে ব্যবহার করা এই মাঠ ওই ফ্লাইওভার উদ্বোধনের দুই বছরেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করতে পারায় এই দুর্ভোগ।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো মাঠ জুড়ে আছে কংক্রিট-ইট-পাথরের সুড়কির স্তূপ। ছোট-বড় গর্ত তো আছেই। মাঝে বড় আকারের গর্তে জমে আছে কোমর সমান পানি। সেই নোংরা পানিতেই বিনোদন খুঁজে নিয়েছে শিশুরা।

গেন্ডারিয়ার কাঠেরপুল এলাকার রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী মো. শাহীন আলম বলেন, “আমরা এই মাঠে খেলাধুলা কইরা বড় হইছি। ফ্লাইওভার বানানোর সময় এই মাঠ বন্ধ ছিল, কিন্তু ফ্লাই ওভার চালু হইল দুই বছর হয়া গেছে। তারপরও ক্যান এই মাঠটা ঠিকঠাক করা হইতাছে না- কেউ কয়ার পারে না।”

ধূপখোলা মাঠের পাশেই রয়েছে আরো দুটি মাঠ- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ এবং ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠ।

শাহীন আলম জানান, আগে এর পুরোটাই একটি মাঠ ছিল। এরশাদ শাসনামলে ১৯৮৫ সালের দিকে মাঠটিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। মাঠের পূর্বপাশ বরাদ্দ দেওয়া হয় ইস্ট অ্যান্ড নামের একটি ফুটবল ক্লাবকে এবং উত্তর পাশ দেওয়া হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে।

শুধু মাঠের দক্ষিণ অংশটি স্থানীয় জনগণের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

শাহীন বলেন, “এহন তো দিনের বেলা- বুঝা পারতাছেন না। সন্ধ্যা হইলেই এলাকার সব নেশাখোরগো আড্ডার জায়গা হয় এই ধূপখোলা মাঠ।”

পরিত্যক্ত এই মাঠে খেলতে আসা ঢাকা মুসলিম হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আরমান বলে, “আমরা এমনিতে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি আর ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের মাঠে খেলি। গত এক মাস ধরে ওই মাঠে (ইস্ট অ্যান্ড) মেলা হচ্ছে। তাই ওখানে খেলাধুলা করা যাচ্ছে না।”

বিভিন্ন এলাকার ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেন গেন্ডারিয়া ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা কোচ মহিউদ্দিন আহম্মদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কীভাবে প্রশিক্ষণ দেব বলেন- একটা মাঠ নষ্ট, আরেকটা বন্ধ। পুরা সূত্রাপুর এলাকায় এখন খেলাধুলা করার জন্য এই জগন্নাথের মাঠটাই আছে। আজ বৃষ্টি বলে ছেলেপেলের সংখ্যা কম। অন্যান্য দিন এই মাঠে দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া যায় না, খেলাধুলা তো দূরের কথা।”

ক্ষোভের সঙ্গে মহিউদ্দিন বলেন, “গত ৫ বছর ধরে ধূপখোলা মাঠটা ব্যবহারের অনুপোযোগী। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেষ্টা কম করি নাই। এ পর্যন্ত দুইবার সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দিয়েছি, একবার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, মেয়র সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছি। সবাই আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।”   

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “আসলে ফ্লাইওভারের ওপরের দিকের কাজ শেষ হয়ে গেলেও নিচের দিকে এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। যে কোম্পানি কাজ করেছিল তাদের চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে সময়সীমা বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।”

ওই কাজ শেষে হলেই মাঠ সংস্কার করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।