ক্ষুধার্তদের খাদ্য দিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকার

এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে ঢাকায় শেষ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া খাদ্য অধিকার সম্মেলন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2015, 03:28 PM
Updated : 1 June 2015, 03:29 PM

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ৭৯ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না। এদের একটি বড় অংশ অর্থাৎ প্রায় ২৮ কোটি মানুষই দক্ষিণ এশিয়ার।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলনের শেষ দিনের অনুষ্ঠানে বক্তাদের প্রায় সবাই ক্ষুধা ও অপুষ্টির এই বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

অ্যান্টি প্রোভার্টি প্ল্যাটফর্ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনসহ ৪৩টি সংগঠন তিন দিনের এই সম্মেলন আয়োজন করে।

এই সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সামরিক খাতের ব্যয়ের একটি অংশ দিয়ে বিশ্বের দারিদ্র্য নির্মূল সম্ভব।

সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মানুষের খাদ্য প্রাপ্তির দিকে দিয়ে যে বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনে সবার নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

“এ অঞ্চলের অনেক বড় একটি জনগোষ্ঠী অপুষ্টির শিকার। খাদ্যের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। এজন্য করণীয়গুলো নির্ধারণ করতে হবে, আমরা অবশ্যই সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাব।”

সমাপনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের প্রধান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার দিকে দিয়ে সার্কভুক্তদেশগুলো চরম বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।”

তিনি জানান, বাংলাদেশে ১৬.৮ শতাংশ মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার, ভারতে এ হার ১৭.৫ শতাংশ, নেপালে ১৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৯.৯ শতাংশ, মালদ্বীপে ৫.৬ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ২৪ শতাংশ।

খাদ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে পুরো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজী খলীকুজ্জমানের সভাপতিত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের ঘোষণাও দেওয়া হয় সমাপনী অধিবেশনে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের সাংগঠনিক পরিষদের কো-চেয়ার ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং এন্টি পোভার্টি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক মহসিন আলী।

সম্মেলনের তিন দিনে বিভিন্ন আলোচনার সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন অক্সফাম বাংলাদেশের এডভোকেসি ম্যানেজার মনীষা বিশ্বাস।

সম্মেলন থেকে সব মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত, সার্ক ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, প্রতিবেশগত কৃষি ও চাষাবাদের প্রসার, করপোরেট প্রযুক্তির প্রসার বন্ধ এবং খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।

এছাড়া সম্মেলনের তৃতীয় দিনে দুটি প্লেনারি এবং ছয়টি প্যারালাল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

‘ভূমি, বন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে মালিকানা বিষয়ক সুশাসন’ শীর্ষক প্লেনারি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ভারাতের সেন্টার ফর ইকুইটি স্টাডিজের পরিচালক হর্স মান্দার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিএসএম-দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি ভারতের ড. উজ্জয়িনী হালিম।

‘খাদ্য অধিকার: দক্ষিণ এশিয়ার আইনি কাঠামো’ শীর্ষক অন্য অধিবেশনে পাকিস্তানের রুরাল বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শহিদ মাহমুদ জিয়া।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ বি এম খাইরুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কমিশনারর্স অন রাইট টু ফুড এর প্রধান উপদেষ্টা বিরাজ পট্টনায়েক।