নিরাপদ খাবার: নজর চাই ‘খামার থেকে প্লেটে’

দূষিত খাবারের কারণে ডায়রিয়া থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত দুই শতাধিক রোগ ছড়ানোয় এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে নিরাপদ খাদ্যের ওপর নজর দিতে আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 April 2015, 04:31 AM
Updated : 7 April 2015, 04:51 AM

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। নিরাপদ খাবার এখানকার জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে সরকারও স্বীকার করেছে।

দিবসের আগের দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিমও ‘খামার থেকে প্লেট পর্যন্ত’ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ‘সম্মিলিত উদ্যোগের’ আহ্বান জানিয়েছেন। এবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও এটা।

এর মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়েছে, কৃষক থেকে শুরু করে খাবার প্রস্তুতকারীর কাছে পৌঁছানো এবং যিনি সেটা পরিবেশন করবেন-এ পর্যায়গুলোর যে কোনোটি থেকে খাবার অনিরাপদ হয়ে উঠতে পারে।

তবে ধারণা থেকে নয়, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) জ্যেষ্ঠ সায়েন্টিফিক কর্মকর্তা এম সুলতান আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, কৃষকের হাতেই সবজিতে কীটনাশক দূষণ ঘটতে দেখছেন তারা।

“তবে এর অর্থ এই নয় যে, কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করবেন না। জাপানে কৃষকরা বাংলাদেশের চেয়ে সাত গুণ বেশি কীটনাশক ব্যবহার করেন, তারপরেও জাপানিজরা নিরাপদ খাবার খাচ্ছে।

“বিষয়টি হচ্ছে এ সম্পর্কিত জ্ঞানের ঘাটতি।”

তিনি বলেন, “কীট-পতঙ্গ থেকে শস্যকে নিরাপদ রাখতে কৃষকরা অবশ্যই কীটনাশক ব্যবহার করবেন। তবে তারা জানেন না, কীটনাশক ব্যবহারের পর কখন শস্য সংগ্রহ করতে হবে এবং সে কারণেই তারা যখন শস্য সংগ্রহ করেন তাতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থেকে যায়।”

ঢাকায় জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ডেপুটি প্রতিনিধি ডেভিড ডুলানও একই ধরনের কথা বলেন।

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কীটনাশক ব্যবহার থেকে শস্য আহরণের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সময় দিতে হয়। এই সময় আবার কীটনাশকের গ্রুপ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি বলেন, “কৃষক যদি কোনো শস্যে অর্গানোক্লোরিন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করেন তাহলে ফসল সংগ্রহের তাদের ৩০ থেকে ৫০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে সিনথেটিক পাইরেথ্রোইড গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করলে এ সময় দিতে হবে চার থেকে সাত দিন।

“কী কীটনাশক আপনি ব্যবহার করবেন তার ওপর ভিত্তি করে ফসল সংগ্রহের নির্দিষ্ট সময়ের আগে তা ব্যবহার করা যাবে না।”

কীটনাশকের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে তিনি বলেন, “এটা শিক্ষকদের শিক্ষার এবং তা তদারকির একটি প্রক্রিয়া।”

এফএওর ডেপুটি প্রতিনিধি বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে একটি দেশের অবশ্যই আইন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ পেতে ল্যাবরেটরি থাকতে হবে।

এরইমধ্যে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য আইন পাশ হয়েছে এবং জাতীয় নিরাপদ খাদ্য নীতি আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, খাবার প্লেটে পৌঁছানো পর্যন্ত অনেকগুলো হাত পেরিয়ে আসায় নিরাপদ খাদ্য নীতি ‘বহুখাত’ ভিত্তিক হওয়া প্রয়োজন।

কেবল পরামর্শ অনুযায়ী সার-ওষুধ ব্যবহারে কৃষকদের অভ্যস্ত করে দূষণ ঠেকানোর পাশাপাশি খাবারের গুণাগুণ ও নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করতে হবে।

খাদ্য নিরাপদ করতে মানসম্মত সংরক্ষণাগার, পরিবহনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতা ও রেস্তোরাঁয় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া খাবার প্রস্তুত করার সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদ পানি, ভালোভাবে রান্না এবং সংরক্ষণের সময় কাঁচা ও প্রস্তুত খাবার একসঙ্গে না রাখার পরামর্শ রয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর।