ওষুধে সহনশীল  যক্ষ্মা: সামনে ‘কঠিন’ পথ

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) পূরণে হাতে আছে আর মাত্র নয় মাস; কিন্তু যক্ষ্মা নিরাময়ে কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্য অর্জনে এখনো বহু দূরে বাংলাদেশে।  

নাজিয়া আফরিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2015, 03:16 PM
Updated : 24 March 2015, 03:16 PM

আর প্রচলিত ওষুধে সহনশীল হয়ে ওঠা যক্ষ্মার (মাল্টি ড্রাগ রেজিসট্যান্ট টিউবারকিউলোসিস- এমডিআর টিবি) জীবাণু সেই লক্ষ্য অর্জনের পথকে আরও কঠিন করে তুলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

মঙ্গলবার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতি এই রোগটি নির্মূলে বাংলাদেশের কিছু অর্জন থাকলেও আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই।

যক্ষ্মা নিরাময়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যর মধ্যে ছোঁয়াচে এ রোগ সনাক্তকরণ (এমডিজি ৬.১০এ) এবং চিহ্নিত ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ে (এমডিজি ৬.১০বি) বাংলাদেশ সাফল্য পেলেও তা যক্ষ্মা পুরোপুরি নির্মূলের লক্ষ্য পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সনাক্ত হয়নি এমন একজন যক্ষ্মা রোগীই আরও দশজনকে এ রোগের ঝুঁকিতে ফেলতে যথেষ্ট। তাছাড়া এমডিজি অনুযায়ী যক্ষ্মা বিস্তার রোধ (এমডিজি ৬.০৯এ) এবং এ রোগে মৃত্যুর হার একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নামিয়ে আনার (এমডিজি ৬.১০বি) লক্ষ্য অর্জনেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যক্ষ্মা বিষয়ক সর্বশেষ (২০১৪) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আংশিকভাবে সুস্থ হওয়া রোগীরাই ওষুধ সহনশীল যক্ষ্মা জীবাণুর শিকারে পরিণত হন। পরে আর প্রচলিত ওষুধে তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

যক্ষ্মাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি বিবেচনার জন্য এ বিষয়টিই যথেষ্ট বলে মনে করেন ব্র্র্যাকের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. শায়লা ইসলাম।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) আওতায় ২০১৩ সালে এমডিআর টিবি সংক্রমণের পাঁচ হাজার ঘটনায় মাত্র ৬৮৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

আর আক্রান্ত রোগীর এই সংখ্যা বাস্তবতার তুলনায় অনেক কম বলে মনে করেন আনা ভাসাল, যিনি কাজ করছেন লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সঙ্গে।

একই মত প্রকাশ করেন যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা হামিদ সেলিম। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে যক্ষ্মা সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান হাতে রয়েছে, তাতে হয়তো রোগটির বিস্তারের প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠে না।

হামিদ সেলিম জানান, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় একটি সমীক্ষা চলছে, যার মধ্যে দিয়ে এ রোগের বিস্তার এবং বাংলাদেশের অবস্থানের আরও স্পষ্ট চিত্র উঠে আসবে।

তবে তার দাবি, ওষুধ সহনশীর যক্ষ্মা সনাক্তে বাংলাদেশের কিছু অর্জনও রয়েছে।

“দেশের ৩৯টি স্থানে এমডিআর-টিবি সনাক্ত করার নতুন ‘জেন-এক্সপার্ট’ চালু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে মাত্র দুই ঘণ্টায় রোগ সনাক্ত করা সম্ভব, যেখানে আগে ১২ সপ্তাহ লাগত।”

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় দেশের সব জেলায় এ পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের মতো কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগীদেরও কেন এগিয়ে আসা উচিত তা বোঝাতে গিয়ে হামিদ সেলিম জানান, তাদের হাতে থাকা প্রায় দেড় লাখ রোগীর নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

আনা ভাসাল জানান, সাধারণ যক্ষ্মা নিরাময় হওয়ার আগেই চিকিৎসা বন্ধ করে দিলে এমডিআর-টিবি হয়। আর এ ধরনের রোগীদের মাধ্যমে পরে অন্যরাও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন।

সুতরাং এ পরিস্থিতি ঠেকাতে সবার আগে যক্ষ্মা রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। 

সাধারণ যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা এমডিআর-টিবির চেয়ে যেমন সহজ, তেমনি এর খরচও কম।

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, এমডিআর-টিবি আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায় ছয় হাজার ডলারের মতো খরচ হয়। তবে প্রকৃত ব্যয় আরও বেশি বলে আনা ভাসাল জানান।

তিনি জানান, সাধারণত একজন যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসায় কমপক্ষে ছয়মাস লাগে। আর মাথাপিছু ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু এমডিআর-টিবির ক্ষেত্রে চিকিৎসার মেয়াদ ২৪ মাসও হতে পারে।

 “বিভিন্ন দেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক পরিবার অর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এটি যদি সংক্রামক হয়ে উঠে তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।”

ব্র্যাকের শায়লা ইসলাম ইথিওপিয়ায় একটি গবেষণার তথ্য উল্লেখ করে বলেন, দেশটিতে এমডিআর-টিবি আক্রান্তদের ৭২ শতাংশ তাদের কাজ হারাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।