অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন: সাফল্যের এক বছর

বাংলাদেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও একটি সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের অস্থিমজ্জা (বোন ম্যারো) প্রতিস্থাপন ইউনিট বলছে ভিন্ন কথা।

নূরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 March 2015, 06:46 AM
Updated : 11 March 2015, 08:23 AM

এক বছর আগেও ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা পেতে বিদেশে পাড়ি দিতে হতো রোগীদের।

তবে ঢাকা মেডিকেলে স্থাপিত বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে ‘সফলতার’ সঙ্গে ১৩ জন রোগীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের কথা জানিয়ে বুধবার বাংলাদেশে এই অত্যাধুনিক চিকিৎসার বছরপূর্তি পালন করছেন চিকিৎসকরা।

‘একটি উন্নয়নশীল দেশে এটি বিরল ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এমএ খান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবগুলো প্রতিস্থাপনই সফল হয়েছে।”

বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) সহযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে প্রথম রোগী ছিলেন ৫২ বছর বয়সী ওমর আলী।

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ওমর আলীর অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ১০ মার্চ।

প্রায় একমাস পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ওমর আলী রংপুর থেকে জানান, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের পর তিনি ভালো আছেন।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি

অস্থিমজ্জা হচ্ছে হাড়ের মধ্যে থাকা একধরনের নরম টিস্যু। আর স্টেমসেল হচ্ছে অস্থিমজ্জায় থাকা অপরিণত কোষ, যা শরীরে প্রয়োজনীয় রক্তকণিকা বাড়াতে কাজ করে।

ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায় ক্যান্সার রোগীর আক্রান্ত বোনম্যারো কেমোথেরাপির মাধ্যমে নষ্ট করে দাতার শরীর থেকে নেওয়া স্টেমসেল রক্তে প্রবেশের মতো করেই শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্টেমসেলগুলো থেকে নতুন রক্তকণিকা তৈরি হতে শুরু করে।

থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়ার মতো রোগে আক্রান্তদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়।

শৈল্যচিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট আমরা শুধু বইয়ে পড়েছি, কিন্তু কখনো দেখিনি। অবিশ্বাস্য হলেও এটা এখন সত্যি, বর্তমানে এটা একটি নিয়মিত বিষয়।”

লক্ষ্য আরো এগোনোর

বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে এক বছরে শুধু ‘অটোলোগাস’ পদ্ধতিতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে রোগীর নিজের সুস্থ বোন ম্যারো তার নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কিন্তু ‘অ্যালোজেনিক’ পদ্ধতিতে, অর্থাৎ ভাই-বোন কিংবা দাতার কাছ থেকে নেওয়া স্টেমসেল প্রতিস্থাপনে যেতে চায় ইউনিট।

অধ্যাপক এমএ খানের পাশে ওমর আলী, প্রথম অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হয়েছিল যার

অধ্যাপক খান বলেন, “আমরা শিগগিরই আরো অগ্রসর (অ্যাডভান্সড) ট্রান্সপ্লান্ট প্রক্রিয়ায় যেতে চাই।”

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) সহযোগিতায় অ্যালোজেনিক প্রতিস্থাপনের সক্ষমতা তৈরিতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

রয়েছে চ্যালেঞ্জ

এখন পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিস্থাপনে এমজিএইচের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।

গত বছর প্রথম প্রতিস্থাপনের আগে ভারতের ভেলোর ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ ইউনিট পরিদর্শন করে এমজিএইচে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। বোস্টনের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রতিস্থাপনের সংকেত দিয়েছিলেন।  

এমজিএইচ তাদের বোস্টনে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

পরে তারা জানায়, ওই প্রশিক্ষণই যথেষ্ট নয়। অত্যাধুনিক এই চিকিৎসা সেবা দিতে দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রেও তাদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

তবে এ ব্যাপারে এখনো সরকারের কোনো দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি।