অটিজমের বিরুদ্ধে ‘যৌথ’ লড়াইয়ের ঘোষণা

অটিজমের বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে শুরু হলো একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2014, 10:48 AM
Updated : 11 Sept 2014, 02:33 PM

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের ৩২তম সভা এবং আঞ্চলিক কমিটির ৬৭তম বার্ষিক সম্মেলনের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে এই উদ্যোগ শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় বিশ্বজুড়ে অটিজমের চ্যালেঞ্জ মেকাবেলায় একটি ‘সমন্বিত ও বিস্তৃত উদ্যোগ’ নেয়ার এই প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই বৈঠকে তুলে ধরা হয়। 

ঢাকায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও অটিজম বিশেষজ্ঞরা বৈঠকে এই বৈশ্বিক উদ্যোগকে সমর্থন জানান। 

পরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শক সায়মা হোসেন পুতুল বলেন, “আমরা (আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে) সফল হয়েছি।” 

পুতুলই বাংলাদেশের পক্ষে এ প্রস্তাবটি বৈঠকে তুল ধরেন। তিনি বলেন, অটিস্টিক ব্যক্তি, তাদের পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে অটিজমের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে কাজ করাই এ উদ্যোগের মূল ধারণা।  

পুতুলের মা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। 

অটিজম নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন মনোস্তত্ত্ববিদ সায়মা হোসেন পুতুল, যিনি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।

সংবাদ ব্রিফিয়ে তিনি বলেন, “অটিজম নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সব সময়ই নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল। এই ভূমিকা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।”

শৈশবের কোনো পর্যায়ে বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে বলা হয় ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার’।

এ ধরনের শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন হয় অন্যদের চেয়ে আলাদা। ফলে তারা অন্যদের মতো করে নিজের যত্ন নেয়া শেখে না। নিজে নিজে খাওয়া বা টয়লেট করা কিংবা অন্যদের কাছে নিজের প্রয়োজন বা ইচ্ছার কথা প্রকাশ করা শিখতেও তাদের সমস্যা হয়।

সাধারণত তিন বছর বয়সের মধ্যেই এর লক্ষণগুলো ধরা পড়ে যদিও এর সঠিক কারণ বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো অজানা। তবে এর পেছনে জিনগত কারণ থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা। 

বাংলাদেশে অটিস্টিকদের জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পুতুল বৈঠকে বলেন, “অটিজমের বিষয়টি নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনার শুরুর কাজটি আমরা খুব ভালভাবে করতে পেরেছি। মানুষ এখন জানে অটিজম কী? অন্যান্য প্রতিবন্ধীতার সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়।”

অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশে কোনো সরকারি হিসাব নেই। তবে একটি বেসরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ শিশুর মধ্যে ২৫০ জন অটিস্টিক।

আর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৮৮ জনের একজন এবং সারা বিশ্বে মোট ৭০ মিলিয়ন অর্থাৎ সাত কোটি মানুষ অটিজমে আক্রান্ত।

ছবি: তানভীর আহমেদ/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বৈঠকে পুতুল বলেন, অধিকাংশ দেশেই অটিজম নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য, সেবার জন্য অবকাঠামো বা গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। বিভিন্ন দেশ যার যার মতো করে এ বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করলেও দেশগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় বা যোগাযোগ নেই।

“সবার স্বার্থে আমরা এই যোগাযোগ আর সমন্বয় তৈরি করতে চাই। আমরা কাজ করতে চাই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে।”

সরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি ‘কার্যকার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এখন আমাদের সমন্বয়মুখী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। প্রত্যেকেটি দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিতে হবে, যাতে অটিস্টিকদের সেবার খরচ কমিয়ে এনে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়।”

মূলত সায়মা হোসেনের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সেই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে ‘সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক’, যে সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তা দিতে অবকাঠামো গড়তে কাজ করছে।

এছাড়া গত বছর মে মাসে অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদেও সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।