অস্ত্রোপচার ছাড়া মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের চিকিৎসায় সাফল্য

কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের চিকিৎসায় সফল হয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তরুণ চিকিৎসক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2014, 02:39 PM
Updated : 27 August 2014, 07:51 PM

বাংলাদেশে সাধারণত অ্যানিউরিজমের (রক্তনালীর বেলুন আকৃতির জমাট রক্ত) কারণে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর মাথার খুলি কেটে জমাট রক্ত অপসারণ করা হয়।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তরুণ তিন চিকিৎসক এ ধরনের এক রোগীর চিকিৎসায় ‘কুলিং’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছেন।

মঙ্গলবার ৬০ বছর বয়সী এক নারীকে দুই ঘণ্টা ধরে এই চিকিৎসা দেয়া হয়।

চিকিৎসা নেয়া ওই রোগী বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে।

বিএসএমএমইাউয়ের নিউরোলজির সহকারী অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ সবুজ, কনসালট্যান্ট আনিস আহমেদ ও সুভাষ কান্তি দেব এই চিকিৎসা দেন।  

ভারতে এ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ অহরহ হলেও বাংলাদেশে হয়েছে এবারই প্রথম।    

এ ধরনের রোগীদের মস্তিষ্কের ভেতরের ধমনী থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা ওই ধমনীর দেয়ালে জমতে থাকে, এটি সাধারণত বেলুন আকৃতির হয়। এতে ধীরে ধীরে ওই ধমনী সরু এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে এবং যে কোনো সময় তা ফেটে রক্ত নালী থেকে বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

আকস্মিক প্রচণ্ড মাথাব্যথা, দুর্বলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে রোগী।

এ রোগের চিরাচরিত চিকিৎসায় রোগীর মাথার খুলি কেটে যে ধমনী থেকে রক্তক্ষরণ হয়, তাকে একটি ক্লিপ আটকে দেয়া হয়, যাতে সেখান থেকে আর রক্তক্ষরণ না হয়।

কিন্তু ‘কুলিং’ পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা এনজিওগ্রামের পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

চিকিৎসক শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, “এনজিওগ্রাম পদ্ধতিতে চিকিৎসকরা সাধারণত হৃদযন্ত্রে পৌঁছুতে উরুর বড় ধমনী ব্যবহার করেন। কিন্তু আমরা একই পদ্ধতিতে মস্তিষ্কে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি।”

জমাট রক্তের আকারের ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যয় নির্ভর করে বলে জানান সবুজ।

প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির তুলনায় এতে খরচ একটু বেশি হলেও খুশি ওই রোগীর ছেলে সাইদুর রহমান। মায়ের চিকিৎসায় তার দুই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে বলে জানান তিনি।

এক বছর ধরে তার মা প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভুগছিলেন জানিয়ে সাইদুর বলেন, “গত ৮/৯ তারিখে মায়ের হাত-পা অবশ হয়ে যায়। দ্রুত তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়।

“সেখানকার চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমি মায়ের চিকিৎসায় শুধু ওষুধ ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। এরপর একজন চিকিৎসক আমাকে তাদের সঙ্গে (বিএসএমএমইউয়ের তিন চিকিৎসক) যোগাযোগের পরামর্শ দিলে এখানে আসি। তারা কোনো অস্ত্রোপচার ছাড়াই কাজ করেছেন।”

তার মা আইসিইউতে থাকলেও এখন সাড়া দিচ্ছেন, জানান সাইদুর।

চিকিৎসক সবুজ জানালেন, মোট ব্রেইন স্ট্রোকের মধ্যে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার পাঁচ শতাংশ হলেও এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, জমাট রক্তের বেলুনটি ফেটে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয় হাসপাতালে নেয়ার আগেই।

কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিলে যে কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে চিকিৎসা দিতে পারে বলে মনে করেন শহিদুল্লাহ সবুজ।

তারাও বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

“আমরা বিভিন্ন সময় ঢাকাতেই বিদেশি চিকিৎসকদের এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দিতে দেখেছি। কিন্তু এবারই প্রথম আমরা নিজেরা এটি করতে পেরেছি।”

তবে এ ধরনের চিকিৎসা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সুবিধা তার নিজের নেই বলে জানান সবুজ।

মঙ্গলবারের চিকিৎসার কাজটিও তাদের শিশু বিভাগে করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।