টিকা নেয়া দুই শিশুর মৃত্যু তদন্তে  ৫ কমিটি

সারাদেশে হাম ও রুবেলা টিকা দেয়ার কর্মসূচির মধ্যে গাজীপুর ও ঝিনাইদহে দুই শিশুর মৃত্যুর পর এর কারণ অনুসন্ধানে আলাদা আলাদা পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2014, 05:45 PM
Updated : 27 Jan 2014, 05:45 PM

শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভোগা এই শিশু দুটি সোমবার টিকা নেয় এবং এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়।

গত শনিবার টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর আর কোথায় এই ধরনের ঘটনা না ঘটলেও এই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ কী, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন।

তবে হাম-রুবেলা টিকার কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া নেই বলে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, টিকা দেয়ার আড়াই ঘণ্টা পর মারা যায় হরিণাকুণ্ডু উপজলোয় আরিফুল ইসলাম মাসুম (১৩)।

কালীশংকরপুর গ্রামের মোকাদ্দেস আলীর ছেলে মাসুম ভায়না মাধ্যমিক স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত।

স্থানীয়রা জানায়, বেলা ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে  ভায়না স্কুলের ৪৩৩ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে মাসুমকেও টিকা দেয়া হয়। এরপর সে খেলাধুলাও করে।

দু’ঘণ্টা পর মাসুম অসুস্থ বোধ করলে তাকে হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালে নেয়া হয়, সেখানে বিকাল ৩টায় সে মারা যায়।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন নাসরিন সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাসুমের অ্যাজমা ছিল বলে তার বাবা জানিয়েছে।

তার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধ্যানে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিন শনিবার রাজধানীতে টিকা দেয়া হচ্ছে একটি শিশুকে।

“মাসুমের মৃত্যুর খবর  মন্ত্রণালয়ে জানালে একটি ঊর্ধ্বতন তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে সিনিয়র ডাক্তারদের সমন্বয়ে একটি এবং উপজেলা পর্যায়ে আরো একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।”

তবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মাসুমের বাবা তার ছেলের লাশ নিয়ে গেছে বলে জানান নাসরিন।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, শ্রীপুর উপজেলায় টিকা নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মারা যায় স্কুলছাত্রী আফরোজা (১২)।

প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নে মেন্দিপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদের মেয়ে আফরোজা স্থানীয় প্রতাপপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত।

এই মৃত্যু তদন্তে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ও শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

টিকা দেয়ার সময় কাছে থাকা চাচাত বোন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছে, টিকা দেয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আফরোজা ‘শরীর কাঁপছে ও মাথা ঘুরছে’ বলে তাকে জানায়।

কিছুক্ষণ পর আফরোজা আরো অসুস্থ হয়ে স্কুলের বারান্দায় বসে পড়লে বাড়িতে খবর দেয়া হয়।

আফরোজার বড় চাচা আব্দুল মজিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্কুল থেকেই তারা আফরোজাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাফসা খানম জানান, আনার  আগেই মারা গিয়েছিল মেয়েটি।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম বলেন, মেয়েটি শ্বাসকষ্টের রোগী ছিল। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।

টিকার দেয়ার পর মেয়েটি অসুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান হাসান ইমাম।

তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্তে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের তরফ থেকে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন  শাহ আলম শরীফ  জানান,  ঘটনাটি শোনার পর স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ৫ সদস্যের আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিভিল সার্জন নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে শিশু বিশেষজ্ঞ ও গাজীপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহাও রয়েছেন।