‘চট্টগ্রামে এইচআইভির অন্যতম কারণ প্রবাসী’

চট্টগ্রাম অঞ্চলে এইচআইভি ভাইরাস বিস্তারের প্রধান কারণ প্রবাসীরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাদের মাধ্যমেই স্ত্রী-সন্তানরাও এ ভাইরাসে সংক্রমিত এবং এইডসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

মিন্টু চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2013, 04:46 PM
Updated : 30 Nov 2013, 04:46 PM

চট্টগ্রামে এইচআইভি আক্রান্ত এবং এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি উন্নয়ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত গত ১০ বছরে এ অঞ্চলের এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৩০২ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬২ জনই বিদেশ ফেরত, যার মধ্যে দুইজন নারীও রয়েছেন।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্তের মধ্যে ৯০ জন হল নারী, এদের বেশিরভাগই তাদের স্বামীর দ্বারা এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এইডস রোগ এবং এইচআইভি ভাইরাস বিষয়ে সচেতনতা না থাকা এবং বিদেশে যাবার সময় তাদের সতর্ক না করায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিরাপদ যৌন মিলনের কারণে নিজেরা যেমন আক্রান্ত হচ্ছেন। তেমনি দেশে ফিরে স্ত্রীদের মধ্যেও সংক্রমিত করছেন এ ব্যাধি। 

চট্টগ্রামে এইডস রোগী ও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা আশার আলো সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী, গত দশ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এইচআইভি ভাইরাস ‘পজিটিভ’ হওয়া ব্যক্তি ৩০২ জন, যাদের মধ্যে ৯৭ জন এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এ বছরে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১১।

সংস্থাটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চলতি বছরেই তাদের কাছে পরীক্ষা করতে আসা ২১৮ জন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাস ‘পজিটিভ’ হয়েছে ৩৯ জনের। এদের মধ্যে ১৯ জন বিদেশ ফেরত এবং গৃহিণী ১৫ জন।

এর বাইরে দুইজন শিশুও এইচআইভি আক্রান্ত, যারা জন্মসূত্রেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। 

আরিফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তরা আমাদের সংস্থা থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও (চমেক) যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদেরকেও আশার আলোতে পাঠানো হয়।

তার মতে, অসচেতনতার কারণে বিদেশে অনিরাপদ যৌনমিলনসহ নানা কারণে প্রবাসীদের মধ্যে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ফেরত ব্যক্তি এবং তাদের মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হচ্ছে বেশি। তারা দেশে ফিরে জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতসারেই তাদের স্ত্রী ও পরবর্তীতে সন্তানের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাচ্ছেন।

আরিফুর রহমান বলেন, যারা চিকিৎসা নিতে বা রক্ত পরীক্ষা করাতে আসছেন তাদের হিসেব অনুয়ায়ী এ অঞ্চলের এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা আমরা পেয়ে থাকি। সে হিসেবে আমাদের সোসাইটি থেকে বর্তমানে ২০৫জন এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন।

চমেক এর চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. মনসুর আলম বলেন, আশার আলো সোসাইটির মাধ্যমে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্তরাই চিকিৎসা নেন বেশি। 

বিদেশ ফেরত ব্যক্তির এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিভাগের সাবেক প্রধান একং এইডস বিশেষজ্ঞ অ্যধাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুধুমাত্র যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের হিসেব করেই এইচআইভি আক্রান্ত নির্ধারণ হয়। এর বাইরে অনেকেই আছেন যারা লোকলজ্জার ভয়ে পরীক্ষা বা চিকিৎসার জন্য আসেন না।

“সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিদেশ ফেরতদের মধ্যে এ ভাইরাসে সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত কয়েক বছরে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৮০ শতাংশই বিদেশ ফেরত এবং তাদের মাধ্যমেই সংক্রমিত।”

ডা. সিরাজ বলেন, “নিরাপদ যৌন মিলন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকা এবং বিদেশ যাত্রীদের এইডস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সতর্কতা না থাকার কারণে তারা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং দেশে ফিরে অন্যদের সংক্রমিত করছেন।”

এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ওষুধ নিয়ে দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাড়ানোর মাধ্যমে প্রবাসীদের মধ্যে এই্চআইভি ভাইরাস সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব।”

তবে এইচআইভি সম্পর্কে দেশে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে বাড়ায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও যেমন কমছে তেমনি আক্রান্তদেরও চিকিৎসা নেয়ার হারও বাড়ছে বলে মনে করেন ডা. সিরাজ।

এক হিসেব অনুযায়ী, বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে ১৫ লাখ ব্যক্তি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। জনশক্তি রপ্তানিতে গত তিন বছর ধরে দেশের 64 জেলার মথ্যে শীর্ষে আছে ‘প্রবাসীদের জেলা’ খ্যাত চট্টগ্রাম।

২০০৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্রই চট্টগ্রাম জেলা থেকেই বিদেশে গেছেন ৩ লাখ ৮৮ হাজার জন। যাদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী।