মুরগি থেকে ক্যান্সারের ওষুধ

প্রথম ক্লোন করা ভেড়া ডলির কথা খেয়াল আছে? সেই ক্লোনিং এর মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো মানব ইতিহাসের একটি নতুন ধারা। ডলিকে বানিয়েছিলেন যারা সেই রোজলিন বায়োসেন্টারের বিজ্ঞানীরাই শোনাচ্ছেন আরেক আশার বাণী। তাদের দাবি অনুযায়ী জিনগত পরিবর্তন করে তারা এমন এক মুরগির জন্ম দিয়েছেন, যে মুরগির ডিম থেকে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2007, 12:50 PM
Updated : 15 Jan 2007, 12:50 PM

এডিনবার্গে অবস্থিত রোজলিন বায়োসেন্টারের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মূলত একটু অন্যরকম গুনাবলী নিয়ে জন্মগ্রহন করা এই মুরগীগুলোর ডিমের সাদা অংশ থেকে ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি করা হবে।

এই ক্যান্সারের ওষুধে থাকবে মনোক্লোনাল এন্টিবডি। গবেষনাগারে তৈরি করা প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন প্রোটিন এবং মানবদেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি করা এ মনোক্লোনাল এন্টিবডিই যুদ্ধ করবে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে। ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর আগামী সংখ্যায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কথা।

শুনতে অনেক সহজ মনে হলেও গবেষণাগারে এ ওষুধ তৈরি করা চাট্টিখানি কথা না। এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানান, “ইন্ডাস্ট্রিয়াল বায়োরিঅ্যাকটরে তৈরি করা মনোক্লোনাল এন্টিবডির মতো অনেক প্রোটিন রয়েছে যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ করে এটা সত্যি। কিন্তু সমস্যা হলো এগুলো তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।”

সেজন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন থেকেই এই মনোক্লোনাল এন্টিবডির একটি বিকল্প উৎস সন্ধান করছিলেন। প্রাণীদের মধ্যে স্বাভাবিক যে প্রোটিন তৈরি হয় তার বদলে তাদের মধ্যেই আরো অধিক প্রেটিন তৈরির কাজটা সম্পন্ন করতে চাচ্ছিলেন তারা।

এর আগে গবেষকরা আবিষ্কার করেছিলেন গরু, ভেড়া এবং ছাগলের জিনগত পরিবর্তন করা হলে তারা মানব প্রোটিন উৎপন্ন করতে সক্ষম যা মূলত পাওয়া যায় তাদের দুধে। শুধু তাই নয় সেই দুধে পাওয়া যায় ইনসুলিন এবং সিসটিক ফাইব্রোসিস রোগের ওষুধ। কিন্তু রোজলিনের গবেষকরা দেখতে পান ডিম দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন স্বল্পায়ূর মুরগিও বেশ কাজে আসতে পারে এক্ষেত্রে।

রোজলিনের গবেষক হেলেন সাং এবং তার সহকর্মীরা কাঙ্খিত প্রোটিন ওভালবুমিন পাওয়ার লক্ষে মুরগির জিনে একটি নির্দিষ্ট জিন প্রবেশ করিয়ে তার জিনগত পরিবর্তন সাধন করেন। এবং এর ফলে মুরগিটি ডিমের অর্ধেক অংশই সাদা হয়ে যায়। তারা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে তাদের কাঙ্খিত প্রোটিন যেন অবশ্যই ডিমের সাদা অংশেই উৎপন্ন হয়।

সেখান থেকে তারা বেছে নেন এমআইআর২৪ (সরজ২৪)) প্রোটিন এবং বি-- ১এ । এমআইআর২৪ এক প্রকার মনোক্লোনাল এন্টিবডি। এটি মেলানোমা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে বি-- ১এ হলো এমন প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন প্রোটিন যে, ওই প্রোটিন পরিবারভূক্ত অনান্য প্রোটিন টিউমার এবং ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে।

এ গবেষণায় রোজলিন বায়োসেন্টারের সঙ্গে কাজ করছে ভিরাজেন (স্কটল্যান্ড) লিমিটেড। ভিরাজেন মূলত ইউএস বায়োটেকনোলজি কোম্পানি ভিরাজেন এবং অক্সফোর্ড বায়োমেডিকা লিমিটেড এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।