কোন ভিটামিন খাওয়া উচিত, কোনটি নয়

কয়েক দশকের গবেষণায় ভিটামিন সেবন কোনো সুনির্দিষ্ট দিক দিয়ে শরীরের জন্য ভালো বলে সুদৃঢ় প্রমাণ না মিললেও সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় বিশেষ বিশেষ ভিটামিন কারও কারও জন্য ক্ষতিকর হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 06:51 PM
Updated : 28 July 2017, 04:35 AM

বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি ভিটামিন কয়েকধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। আবার কিছু কিছু কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়।

কোন ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত, আর কোনটি নয়-

মাল্টিভিটামিন: বাদ দিন-সুষম খাবারের মাধ্যমে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু পাওয়া যায়।

কয়েক দশক ধরে ধারণা ছিল, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য মাল্টিভিটামিন খুব জরুরি- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি, দৃষ্টিশক্তির সুরক্ষায় ভিটামিন এ, শক্তিশালী থাকতে ভিটামিন বি।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এগুলো অতিরিক্ত সেবনে প্রকৃতপক্ষে শরীরের ক্ষতি হয়।২৫ বছরের বেশি বয়সী ৩৯ হাজার নারীর উপর ২০১১ সালে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা দীর্ঘদিন ধরে এগুলো সেবন করেছেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি যারা সেবন করেননি তাদের চেয়ে বেশি।

ভিটামিন ডি:
এটা নিন-হাড় মজবুত করে এবং খাবার থেকে এটা পাওয়া কঠিন।

আমরা যেসব খাবার খাই তার বেশিরভাগেই ভিটামিন ডি থাকে না। কিন্তু ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তার মাধ্যমেআমাদের হাড় মজবুতে এটা খুবই জরুরি। সূর্যের আলো লাগলে শরীরে এটা তৈরি হয়, তবে শীতকালে তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া কঠিন হতে পারে। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নিয়েছে, তারা যারা নেয়নি তাদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে।

এন্টিঅক্সিডেন্ট: বাদ দিতে হবে-শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলে তা কয়েক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে এবং সেবন বাদ দিয়ে আপনি ছোট রসালো ফল খেয়েই এর প্রয়োজন মেটাতে পারেন।

ভিটামিন এ, সি ও ই-এসব এন্টিঅক্সিডেন্ট অনেক ফলেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, বিশেষ করে রসালো ফল ও শাকসব্জিতে।

তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত পরিমাণে নেওয়া হলেএন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।পুরুষ ধূমপায়ীদের উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত ভিটামিন এ সেবন করতেন তাদের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি যারা নিতেন না তাদের চেয়ে বেশি।

বিভিন্ন ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্টসাপ্লিমেন্ট নিয়ে২০০৭ সালের এক পর্যালোচনার সমাপ্তি টানা হয় এভাবে: “বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই-এর মাধ্যমে চিকিৎসায় মৃত্যু হার বাড়তে পারে।”

ভিটামিন সি: বাদ দিতে হবে- সম্ভবত এটা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে সুস্থতায় কাজ করে না এবং লেবু, বাতাবু লেবু, কমলা, আঙুর থেকেই এটা পাওয়া যায়।

গবেষণার পর গবেষণায় দেখা গেছে, ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা রোধে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট তেমন কোনো কাজ করে না। উপরন্তু দুই হাজার মিলিগ্রাম বা তার চেয়ে বেশি কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ফল থেকেই ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করা যায়। স্ট্রবেরি এই পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।

ভিটামিন বি৩: এটা সেবন বাদ দিয়ে স্যামন, টুনা মাছ এবং গাজর খেয়েই এর চাহিদা পূরণ করা যায়।

বছরের পর বছর আলঝেইমার থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত সব কিছুর চিকিৎসায় ভিটামিন বি৩ দেওয়া হত।কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় এর ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে ২৫ হাজারের বেশি হৃদরোগীর উপর পরিচালিত এক গবেষণায়দেখা গেছে, ‘গুড’ বা এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে ভিটামিন বি৩ এর ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যু কমেনি। বরংযারা বিও সাপ্লিমেন্ট নিয়েছেন তাদের সংক্রমণ, লিভারের সমস্যা ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়েছে।

প্রোবায়োটিকস (ব্যাকটেরিয়াল সাপ্লিমেন্ট): বাদ দিতে হবে- দই খেয়ে এর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

২০১২ সালে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি ব্যবসা হয় প্রোবায়োটিকসের, এর প্রতিটি পিলের দাম ১ ডলার পর্যন্ত রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু দই বা গাজনের মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত খাবারে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণে এটা পাওয়া যায় তার চেয়ে ওই পিলে কম থাকে।

জিঙ্ক: এটা সেবন করতে হবে-যেসবে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার প্রশমণ ঘটে সেগুলোর একটি এটা। ‘কমন কোল্ডের’ জন্য দায়ী রিনোভাইরাসের বংশবিস্তারে বাধা দেয় এই খনিজ উপাদান।

ভিটামিন ই: বাদ দিতে হবে- অতিরিক্ত সেবনে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়।

কথিত ক্যান্সার প্রতিরোধ সক্ষমতার কারণে ভিটামিন ই এন্টিঅক্সিডেন্টের বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১১ সালে প্রায় ৩৬ হাজার পুরুষের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সাপ্লিমেন্ট সেবনকারীদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

২০০৫ সালের আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ই সেবনে সামগ্রিকবাবে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে।

উদ্ভিজ্জ তেল, বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও সবুজ শাক-সব্জিতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।

ফলিক এসিড:
গর্ভধারণ করলে বা গর্ভধারণ করতে চাইলে সেবন করতে হবে।

ফলিক এসিড এক ধরনের বি ভিটামিন, যা দেহে নতুন কোষ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গর্ভবতী বা গর্ভধারণে ইচ্ছুক নারীদের দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সেবন করা উচিত।