গত ১ ফেব্রুয়ারি এই সেবা শুরু করে বেসরকারি এই হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ, যা মঙ্গলবার শেষ হয়।
এই উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান হয় এই হাসপাতালে, যেখানে বিনা খরচে চিকিৎসা পেয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান রোগীরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আফিকুর রহমান, এডভাইজার (অধ্যক্ষ) ও সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এ আশরাফ আলী, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এম এন নাগ, পরিচালক (রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) ডা. আনোয়ার হোসেন মুন্সী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে সেবা নিতে আসা মোহাম্মদ আলী জানান অর্থের দুর্ভাবনা কীভাবে দূর হল আদ্-দ্বীন হাসপাতালের খবর পেয়ে।
“ডাক্তার বলেছিল অপারেশন করতে হবে। খরচ পড়বে ৫০ হাজার টাকা। অথচ আমার কাছে ৫০টাকাও নেই।”
পরে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের মাসব্যাপী এই কার্যক্রমের খবর পত্রিকায় জেনে ছুটে আসেন মোহাম্মদ আলী।
“এই হাসপাতাল বিনামূল্যে সেবা দিল, আমি এ ঋণ কোনোদিনও শোধ করতে পারব না। সরকারকে অনুরোধ করব আদ্-দ্বীন হাসপাতালকে যেন সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন।”
আদ্-দ্বীন হাসপাতালে আসার আগে ১৭ দিন অন্য হাসপাতালে ছিল চাঁদপুরের আইয়ুব আহমেদ। বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে আসে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে।
“এখানকার চিকিৎসা সেবা, ওষুধ, খাবার মানসম্মত। আমি বড় খুশি হয়েছি।”
ঢাকার রোগী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, “কোনো হাসপাতালে বিনামূল্যে এ অপারেশন হয়, তা কখনও শুনি নাই। আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম থাকলেও এ ধরনের সেবার ব্যবস্থা নাই। সরকারের কাছে অনুরোধ প্রত্যেকটি বৃদ্ধাশ্রমে এ ধরনের সেবা চালু করা হয়।”
রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারার এই সমাপনী দিনকে নিজের জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ দিন’ উল্লেখ করেন এই উদ্যোগের প্রধান অধ্যাপক আফিকুর রহমান।
তিনি তার চিকিৎসক হয়ে ওঠার পেছনের গল্প বলেন অনুষ্ঠানে, যাতে আবেগাপ্লুত হন রোগীরা।
অধ্যাপক আফিকুর বলেন, তার বাবাকে এই রোগে ভুগতে হয়েছিল, তখন তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ করছিলেন। বাবার উপদেশেই তিনি ইউরোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেন।
বাবার প্রোস্টেটজনিত কষ্ট অনুভব করেন বলেই বয়স্ক রোগীদের পিতৃতুল্য ভেবে সেবা দেন বলে এই চিকিৎসক জানান।
শয্যা স্বল্পতার কারণে অনেক রোগীকে সেবা দিতে না পারার বেদনাও অনুভব করেন অধ্যাপক আফিকুর। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতি মাসে অন্তত দুইন রোগীকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করবেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় মাসব্যাপী এই চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে ৪০০ জনের বেশি রোগী সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অধ্যাপক আফিকুর নিজের তত্ত্বাবধানে ৭৫ জন রোগীর অস্ত্রোপচার করেন।