জাহাজভাঙা শ্রমিকদের ৩৩% ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত: সমীক্ষা

জাহাজভাঙা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ৩৩ শতাংশ ভাগই ফুসফুসের রোগে (অ্যাজবেস্টসিস) আক্রান্ত বলে দাবি করেছে পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে কর্মরত একটি সংগঠন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Feb 2017, 01:13 PM
Updated : 2 Feb 2017, 01:23 PM

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের এ বিষয়ে সমীক্ষার প্রতিবেদন তুলে ধরে বাংলাদেশ অক্যুপেশনাল সেইফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)।

ওশির চেয়ারপার্সন সাকি রিজওয়ানা বলেন, ১০১ জন শ্রমিকের ওপর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ৩৩ জনের শরীরে এবং এদের মধ্যে আট জনের ফুসফুসের ৬০ শতাংশের বেশি জায়গায় অ্যাজবেস্টজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

গত বছরের ২৬ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই ও চলতি বছরের ২৮ থেকে ২৯ জানুয়ারি দুই ধাপে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা করা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শিপব্রেকিং ইয়ার্ড পর্যায়ের সাধারণ শ্রমিক, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিল্পে কাজ কর্মরত এবং বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতায় আক্রান্তদের ওশির পক্ষ থেকে চিকিৎসা নিতে ডাকা হয়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্দেশিত মাত্রা (১/১ রেটিক্যুলার অপাসিটি) ও গত ১০ বছরে শ্রমিকদের পেশাগত কর্মকাণ্ডের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অ্যাজবেসটোসিস রোগ নির্ণয় করা হয়।

সমীক্ষা চলাকালীন এই রোগে আক্রান্তদের স্পাইরোমেট্রি টেস্ট করার পাশাপাশি নেবুলাইজেশন দেওয়া হয়। সাপ্তাহিক চেক-আপ ও প্রতিমাসে রোগীদের ফুসফুস একবার করে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

সমীক্ষাটির গবেষক চেন্নাইয়ের শ্রী বালাজি মেডিকেল কলেজর সহযোগী অধ্যাপক ড. মুরালি ধর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অ্যাজবেস্টজ একটি ক্ষতিকর প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান, যা জাহাজভাঙা শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এর একটি ফাইবার শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করলেই অ্যাজবেস্টসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

“এই অ্যাজবেস্টজ ফুসফুস ধ্বংস করে দিতে পারে এবং এর ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তবে ‘রেসপিরেটর’ ব্যবহারের ফলে কিছুটা সুরক্ষায় থাকতে পারে শ্রমিকরা। তবে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এটি বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।”

ওশির ভাইস চেয়ারপার্সন ড. এস এম মোর্শেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “জাহাজ মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা মানতেই চান না যে, যে জাহাজগুলো ভাঙা হয়, সেগুলোতে অ্যাজবেস্টস আছে।

তিনি বলেন, “বিশ্বের ৫০টি দেশ অ্যাজবেস্টস আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। আর বাংলাদেশে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭২৫ কেজি অ্যাজবেস্টস আমদানি করা হয়েছে, যার মূল্য দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫ ডলার।”

২০১৬ সালের আমদানি আইনে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানান তিনি।

গবেষণা দলটির চিকিৎসক ফাইজুল আহসান শুভ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের ফুসফুস ৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চিকিৎসার মাধ্যমে তাদেরও রোগটি নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব।

“শ্রমিকরা যেন ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত না হয় সেজন্য শ্রমিকদের সুরক্ষায় জাহাজ-মালিকদের সচেতনতা প্রয়োজন।”

প্রথমবারের মতো পরিচালিত এই সমীক্ষার দুই পর্বে ১০১ জন জাহাজ শ্রমিকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও মোট ৫০০ জনের ওপর সমীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে অ্যাজবেস্টসিস নির্ণয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, শিপইয়ার্ডের অন্য শ্রমিকদের শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের সমস্যা এবং অ্যাজবেসটোসিস রোগীদের জন্য সরকারের পরিচালনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।