চিকিৎসকের মৃত‌্যু: ল‌্যাবএইডের ব‌্যাখ‌্যা চেয়েছে মেডিকেল কাউন্সিল

এনজিওগ্রামের সময় এক রোগীর মৃত‌্যুর ঘটনার ব‌্যাখ‌্যা চেয়ে ঢাকার ল‌্যাবএইড হাসপাতালকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2016, 02:29 PM
Updated : 25 Dec 2016, 02:50 PM

রোগী হিসেবে ওই হাসপাতালে যাওয়া ডা. নাইমুল হকের মৃত‌্যুর ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিধিবদ্ধ সংস্থাটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ল‌্যাবএইডে এনজিওগ্রাম করার সময় মৃত‌্যু ঘটে ডা. নাইমুলের। গাফিলতির কারণে তার মৃত‌্যু ঘটেছে অভিযোগ করে তার প্রতিবিধান চেয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর বিএমডিসিতে চিঠি দিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের বিএমএ সভাপতি ডা. সাব্বির হোসেন।

বিএমডিসির সভাপতি অধ‌্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভিযোগের ব‌্যাখ‌্যা চেয়ে আমরা ল‌্যাবএইডকে নোটিস পাঠিয়েছি। আমরা আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ‌্যে জবাব পাব।”

বেসরকারি হাসপাতালটির চিফ অপারেটিং অফিসার আল ইমরান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, তারা নিজেরাও ঘটনাটির তদন্ত করছেন। শিগগিরই তাদের ব‌্যাখ‌্যা বিএমডিসিকে জানাবেন।

ল‌্যাবএইড হাসপাতাল

ডা. নাইমুলের মৃত‌্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, “উনার হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে বেশ কয়েকটি ব্লক ছিল। এর আগেও উনার হার্ট অ‌্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে। তিনি দুবার তার এনজিওগ্রামের তারিখ পিছিয়েছিলেন।

“যখন এনজিওগ্রামের প্রক্রিয়া চলছিল, তখন হঠাৎ তার প‌্যানিক অ‌্যাটাক হয়েছিল, ব্লাড প্রেসার বেড়ে গিয়েছিল, তার ফল হিসেবে উনার কার্ডিয়াক অ‌্যারেস্ট হয়।”  

ডা. নাইমুলের এনজিওগ্রাম করছিলেন কার্ডিওলজিস্ট ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের এই অধ‌্যাপক তার পেশায় সুপরিচিত।

ডা. ওয়াদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি আপনাকে বলতে পারি, আমি আমার চেষ্টার সবটুকুই করছি। আমি বিষয়টি বিএমএ-কেও ব‌্যাখ‌্যা করেছি। এর একটা সুষ্ঠু তদন্ত আমিও চাই।”

ডা. নাইমুলের জটিল ‘ট্রিপল ভেসেল ডিসিজ’ ছিল বলে জানান অধ‌্যাপক ওয়াদুদ। এর অর্থ হচ্ছে হৃৎপিণ্ডে যে তিনটি প্রধান করোনারি ধমনী রক্ত পরিবহন করে, তার প্রতিটিতেই ব্লক রয়েছে।

এনজিওগ্রামে কতটা ঝুঁকি?

হৃৎযন্ত্রের অবস্থা পর্যবেক্ষণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনজিওগ্রাম একটি সাধারণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় একটি সরু নল (যাকে ক‌্যাথেটার বলে) রক্তনালী দিয়ে ঢোকানো হয়, যা ধমনীতে রক্ত প্রবাহের ছবি তুলে আনে। স্পষ্ট ছবি পেতে বিশেষ এক ধরনের রঙিন তরল ব‌্যবহার হয়ে থাকে।

যে স্থান দিয়ে ক‌্যাথেটার ঢোকানো হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেই স্থানটি চেতনানাশক দিয়ে অবশ করা হয়ে থাকে (লোকাল অ‌্যানেস্থেশিয়া)। অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রেই কেবল পুরোপুরি অচেতন (জেনারেল অ‌্যানেস্থেশিয়া) করা হয়ে থাকে।

ডা. নাইমুল হক

বিষয়টি ব‌্যাখ‌্যা করে বাংলাদেশ সোসাইটি অফ কার্ডিওভাসকুলার ইন্টারভেনশনের সভাপতি অধ‌্যাপক আফজালুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এনজিওগ্রামের সময় রোগীর মৃত‌্যুর ঘটনা বিরল।”

“এটায় (এনজিওগ্রাম) কোনো ঝুঁকি নেই যদি না কারও অনেক ব্লকেজ থাকে কিংবা হঠাৎ হার্ট অ‌্যাটাক হয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে এনজিওগ্রামে ঝুঁকি থাকতে পারে। কিন্তু এর কোনো বিকল্পও নেই। জরুরি ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচাতে তখন চিকিৎসকদের এই ঝুঁকি নিতেই হয়।”

২০১৫ সালে বাংলাদেশে ৪০ হাজার এনজিওগ্রাম হওয়ার পরিসংখ‌্যান তুলে ধরে অধ‌্যাপক আফজাল বলেন, “এনজিওগ্রামের কারণে মৃত‌্যুর ঘটনা একটিও পাইনি আমরা।”

বিএমডিসি কী করতে পারে?

রোগীদের অভিযোগ খুব কমই পায় বিএমডিসি, যারা বাংলাদেশে চিকিৎসকদের সনদ দিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল

ডা. নাইমুলের মৃত‌্যুর তদন্তে কী করা হবে- জানতে চাইলে বিএমডিসির সভাপতি অধ‌্যাপক শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ল‌্যাবএইডের ব‌্যাখ‌্যা পাওয়ার পর ডিসিপ্লিনারি বোর্ড বিষয়টি দেখবে।

পাঁচ সদস‌্যের এই ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের প্রধান স্বাস্থ‌্য অধিদপ্তরের এক পরিচালক। তাদের মূল‌্যায়নের পর বিএমডিসি সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে যাবে।

অধ‌্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, “ভুলের মাত্রা বিবেচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমরা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব‌্যবস্থা নিতে পারি, কারণ আমরাই চিকিৎসকদের লাইসেন্স দিয়ে থাকি।

“তবে হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো ব‌্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। সেই বিষয়ে ব‌্যবস্থা নিতে পারে স্বাস্থ‌্য অধিদপ্তর। তবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।”  

বিএমডিসি সম্প্রতি ঢাকার জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের একটি ঘটনা তদন্তে করেছিল, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কোনো গাফিলতি পায়নি তারা।

ল‌্যাবএইড হাসপাতালে ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষক মৃদুল কান্তি চক্রর্ব্তীর মৃত‌্যু হলে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল। তখন আদালতেও দাঁড়াতে হয়েছিল এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। পরে ওই শিক্ষকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে হয়েছিল তাদের।