চিকিৎসা শেষে মায়ের কোলে ‘অপূর্ণাঙ্গ জোড়া‘ শিশুটি

অপূর্ণাঙ্গ জোড়া শিশুটির সফল অস্ত্রোপচারের পর ফিরে পেয়েছেন মা হিরামণি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2016, 10:34 AM
Updated : 20 July 2016, 11:34 AM

টানা চার মাস চিকিৎসা শেষে শিশু মোহাম্মদ আলীকে বুধবার মায়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে হিরামণির হাতে ছেলে মোহাম্মদ আলীকে তুলে দেন প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান।

ছেলেকে স্বাভাবিক অবস্থায় পেয়ে খুশি হিরামণি জানালেন, এই চিকিৎসকদের মতো চিকিৎসক বানাতে চান মোহাম্মদ আলীকে।

অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলীর চিকিৎসাকালীন সময়ের বিস্তারিত তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, যার নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের চিকিৎসক দল শিশুটিকে নিয়ে কাজ করে।

৭ মার্চ অপূর্ণাঙ্গ জমজ দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণের ৩ দিন পর থেকে বিএসএমএমইউর শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা চলে মোহাম্মদ আলীর।

ডা. রুহুল আমিন বলেন, যমজ ভ্রুণের আরেকটি শিশুর শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশ নিয়ে মোহাম্মদ আলী জন্মায়। সে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু। কিন্তু তার উপর ভর করে ছিল আরেকটি শিশুর পেটের নিচের অর্ধেকসহ শরীরের নিম্নাঙ্গ।

“উর্ধাঙ্গের মাথা, বুক ও দুই হাত নেই অর্থাৎ আংশিক বা অপূর্ণাঙ্গ শিশুটি তার আংশিক অস্তিত্ব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশুর উপর ভর করে বেঁচে ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, প্যারাসাইটিক টুইন বা অপূর্ণাঙ্গ যমজ।”

শিশুটিকে ভর্তি করানোর পর থেকে নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। তারা শিশুটিকে ভারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক মাস আগে অপূর্ণাঙ্গ জোড়ার শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়।

ডা. রুহুল আমিন বলেন, “বাংলাদেশে এই রকম আরও অনেক জোড়া শিশু আছে। কিন্তু বাবা-মা তাদের অবহেলা করেন কিংবা লুকিয়ে রাখেন। আমাদের কাছে আনলে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারি।”

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল বলেন, “চিকিৎসকদের নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সফল অস্ত্রোপচার শেষে আমরা সুস্থ মোহাম্মদ আলীকে তার মায়ের হাতে তুলে দিচ্ছি। এর পেছনে যারা কাজ করেছেন সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

বিদেশমুখী না হয়ে দেশে চিকিৎসা করানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে অনেক আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা হয়, ভারত-আমেরিকাসহ নানা দেশ থেকে আমাদের এখানে চিকিৎসার জন্য মানুষ আসে। কিন্তু দেশের মানুষের সেটা জানা নেই।”

অনুষ্ঠান শেষে মোহাম্মদ আলীর মা হিরামণি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি অত্যন্ত খুশি। ডাক্তাররা খুব সুন্দরমতো চিকিৎসা দিয়েছে।

“ছেলেকে এই ডাক্তারদের মতো ডাক্তার বানাইতে চাই। ডাক্তার বানাইতে নিয়ে যাইতেছি।“

হিরামণির তিনটি কন্যাসন্তান স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণের পর এই জোড়া ছেলে শিশুটির জন্ম হয়।

তাদের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। শিশুর বাবা মোহাম্মদ জাকারিয়া একজন দিনমজুর।

“অপারেশন ও চিকিৎসার খরচ মেডিকেল থেকে দিছে। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ওষুধ খরচ মিলে আমাদের আড়াই লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে,“ বলেন হিরামণি।

শিশুটির পরবর্তী চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন এই মা।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: ‍বিকাশ নম্বর: ০১৭০৩৯৪৯৬৪১। অগ্রণীব্যাংক জাতীয় জাদুঘর শাখার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নাম-হিরামণি, যার নম্বর- ০২০০০০৮৮০৯১৩৬।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএসএমএমইউ‘র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শহিদুল্লাহ সিকদার, অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক জাকারিয়া স্বপন, কোষাধ্যক্ষ আলী আসগর মোড়ল উপস্থিত ছিলেন।