পদোন্নতির নিয়মে মেডিকেল শিক্ষার মান ‘উল্টো পথে’

চিকিৎসকদের পদোন্নতির বর্তমান নিয়মে গুণগত মানের চেয়ে চাকরির মেয়াদকে গুরুত্ব দেওয়ায় মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2016, 04:34 PM
Updated : 10 June 2016, 04:48 PM

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) আগে মেডিকেল কলেজগুলোতে পদোন্নতির বিষয়টি দেখভাল করলেও দ্রুততার সঙ্গে শূন্যপদ পূরণ করতে ২০১২ সালের শুরু থেকে অধ্যাপক ছাড়া অন্যান্য পদে বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) মাধ্যমে এ কাজ শুরু করে সরকার।

আর সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপকে পদোন্নতির বিষয়টি দেওয়া হয় প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সচিবদের সমন্বয়ে করা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) হাতে, যারা সরকারি চাকরিতে প্রার্থীর রেকর্ড পর্যালোচনা করে উচ্চ পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে থাকেন।

মেডিকেল বিশেষায়িত শিক্ষা হওয়ায় পিএসসির পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় তা প্রার্থীর প্রকাশনা ও উচ্চতর ডিগ্রির ওপর নির্ভর করত। আর পদোন্নতির পুরো প্রক্রিয়ায় প্রার্থীদের বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সামনে পরীক্ষায় বসতে হত।

তবে বর্তমানে কোনো বিশেষজ্ঞের মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নথির ভিত্তিতেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে থাকে এসএসবি।

এই ব্যবস্থায় ‘গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকবে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সার্জারির জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব। এ প্রক্রিয়ায় ‘রাজনৈতিকভাবে অনুগত চিকিৎসকরাই সুবিধা পাচ্ছেন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পদোন্নতির এই প্রক্রিয়া চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অধ্যাপক পদে চিকিৎসকদের একটি দলকে সুপারিশ করেছে জ্যেষ্ঠ সচিবদের বোর্ড এসএসবি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এসএসবি বৈঠকে তোলার জন্য নতুন আরেকটি তালিকা করেছে, যা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে এসেছে।

এতে দেখা যায়, প্রকাশনার সংখ্যা, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, উচ্চতর ডিগ্রি এবং সহযোগী অধ্যাপকদের জ্যেষ্ঠতার বদলে  চাকরির মেয়াদকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাগত উৎকর্ষের পরিবর্তে চাকরির মেয়াদকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিকে আমলাতান্ত্রিক পদোন্নতির নিয়ম হিসেবে দেখছেন চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অধ্যাপক পিএসসির সময়ে পদোন্নতির এক দৃষ্টান্ত টেনে বলেন, “পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রকাশনা ও উচ্চতর ডিগ্রির পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের ইন্টারভিউয়ে পাশ করায় আমার থেকে তিন বছর পরে চাকরিতে যোগ দেওয়া একজন আমার আগে অধ্যাপক হয়েছিলেন।”

আরেকটি সরকারি মেডিকেল কলেজের এক অধ্যাপক বলছেন, সরকার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করতে পারে, যারা নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করা প্রার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে অধ্যাপক পদের যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবে।

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক দ্বীন মনে করেন, বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় যথাযথ মূল্যায়নের জন্য বোর্ডে অন্তত দুজন বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের জ্যেষ্ঠ সচিবরা অবশ্যই পুরো প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবেন, কিন্তু অধ্যাপক হতে একজনের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হওয়া উচিত।”

তবে বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় এর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন এসএসবিতে থাকা জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে এটাই সর্বোচ্চ বোর্ড। তারা (সচিবরা) অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বোর্ডে এসেছেন। এই বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের থাকার কোনো সুযোগ নেই।”

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করেই তালিকা পাঠায় বলেও দাবি করেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ সচিব এমন কথা বললেও ‘পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ থাকা উচিত’ বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও।

“পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের থাকা উচিত,” এক প্রশ্নের জবাবে বলেন।

এ বিষয়ে নতুন নীতি প্রণয়নে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এটা জন-প্রশাসনের এখতিয়ার।”