স্থূলকায়রা সংখ্যায় ‘ছাড়িয়ে গেছে’ ক্ষীণকায়দের

বিশ্বে ‘স্থূলকায়’ মানুষের সংখ্যা ‘কম ওজনের’ মানুষের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে; একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2016, 01:40 PM
Updated : 1 April 2016, 01:40 PM

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রায় দুই কোটি প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের ‘বডি মাস ইনডেস্ক’ তুলনা করে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষকরা ‘সঙ্কটময় এ পরিস্থিতি’র কথা তুলে ধরেছেন।

বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তারা সরকারগুলোকে এখনি এদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিবন্ধে তারা দেখিয়েছেন, ওই সময়ের মধ্যে পুরুষের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে তিনগুণ; নারীর ক্ষেত্রে দ্বিগুণ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, যাদের দেহের ওজন প্রতি বর্গমিটারে ৩০ কেজির বেশি তাদেরকে ‘স্থূলকায়’ ধরা হয়।

বিশ্বের ১৮৬টি দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বডি মাস ইনডেক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে উচ্চতার তুলনায় বেশি ওজনের মানুষের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৫ লাখ। ২০১৪ সালে তা বেড়ে ৬৪ কোটি ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে।

চার দশকে মুটিয়ে যাওয়া পুরুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০.৮ শতাংশ হয়েছে। আর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৬.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪.৯ শতাংশ।

বেড়েছে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের মানুষের সংখ্যাও। ১৯৭৫ সালে যেখানে ৩৩ কোটি মানুষ ‘আন্ডারওয়েট’ ছিল, সেই সংখ্যা ২০১৪ সালে ৪৬ কোটি ২০ লাখ হয়েছে।

জনসংখ্যা অনুপাতে অবশ্য এ হার কমে এসেছে। চার দশকে কম ওজনের পুরুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ থেকে কমে ৯ শতাংশ হয়েছে। আর নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ১৫ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১০ শতাংশ।

২০২৫ সাল নাগাদ স্থূলকায় ব্যক্তির সংখ্যা ২০১০ এর হারের সমপর্যায়ে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারণ করেছে,  এই পরিস্থিতিতে তা অর্জনের সম্ভবনা ‘শূন্যের কাছাকাছি’ বলে মনে করছেন ইমপেরিয়াল কলেজের গবেষকরা।

গবেষণায় যা এসেছে

>> স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চীনে। দেশটির ৪ কোটি ৩২ লাখ পুরুষ ও ৪ কোটি ৬৪ লাখ নারী উচ্চতার তুলনায় বেশি মোটা।

>> এরপরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এ দেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ পুরুষ এবং ৪ কোটি ৬১ লাখ নারী ‘স্থূলতার’ শিকার।

>> বিশ্বে যত লোক এই সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এক পঞ্চমাংশই ছয়টি দেশে বসবাস করেন। এগুলো হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।

>> ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে স্থূলকায় নারীর সংখ্যা ইউরোপে সবার চেয়ে বেশি হবে।

>> বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের মানুষের সংখ্যা এখনো বেশি। তবে এ বিষয়টিকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।

এই গবেষক দলের নেতা অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি মুটিয়ে যাওয়ার বর্তমান হারকে ‘মহামারি’ আখ্যায়িত করে সরকারগুলোকে দ্রুত এ সমস্যা রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ৪০ বছর আগেও কম ওজনের মানুষের সংখ্যা মোটাদের দ্বিগুণ ছিল, আর এখন মোটারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

নতুন এই গবেষণা কর্তৃপক্ষের সামনে ব্স্তবতা তুলে ধরবে এবং এ বিষয়ে তাদের আরও উদ্যোগী হতে উৎসাহ যোগাবে বলে আশা করছেন তিনি।

তবে ফল ও সবজির মতো স্বাস্থ্যকর খাবারের দাম কমিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা ‘অস্বাস্থ্যকর’ খাবারের দাম বাড়ানো না হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন এই গবেষক।