বাংলাদেশেও জিকা

বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করা জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে এক বাংলাদেশির রক্তের পুরনো নমুনায়। 

নুরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2016, 05:24 PM
Updated : 17 March 2016, 05:08 PM

গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি।

বাংলাদেশে কখনও জিকা ভাইরাস ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর-এ সংরক্ষিত রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই মিলেছে জিকার অস্তিত্ব।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ করবেন।  

চট্টগ্রামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে আসা চিকিৎসকদের একটি দল নগরীর নির্দিষ্ট একটি এলাকায় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করছেন, যাকে চিকিৎসা সমীক্ষার পরিভাষায় ‘কন্টাক্ট ট্র্যাকিং’ বলা হয়। 

চট্টগ্রামের ওই এলাকা থেকেই রক্তের সেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের কমিউনিকেবল ডিজিস কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক একেএম শামসুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চট্টগ্রামে আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার করেছি।”

অবশ্য জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি। 

দেশে নতুন কোনো রোগ শনাক্ত হলে সাধারণত আইইডিসিআর-এর গবেষকরাই সে বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এক্ষেত্রে তারাও এখনই নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত তথ্য দিতে রাজি নন।

জিকার লক্ষণ

>> প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়।

>> বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

>> এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমের সামনে জিকার খবর প্রকাশ করবেন। এ কারণে আপাতত অন্য কাউকে মুখ না খুলতে বলা হয়েছে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ সরকার আইইডিসিআর-এ সংরক্ষিত রক্তের নমুনা ফের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়।

ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার ভাইরাস আছে কি না দেখতে এসব নমুনা এর আগে পরীক্ষা করা  হয়েছিল। এডিস এজিপ্টি মশা ওই দুই রোগের জীবাণুর মতো জিকা ভাইরাসেরও বাহক। 

ঠেকাতে হবে মশা

চট্টগ্রামের ৬০ বছর বয়সী যে ব্যক্তির রক্তের নমুনায় জিকা ভাইরাস পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তিনি বছরখানেক আগে ডেঙ্গুতে ভুগে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বলে কর্মকর্তারা জানান। 

এর ভিত্তিতে তারা বলছেন, জিকা নিয়ে এখনই শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ ঘটেনি। তবে তারা এখনই মশা নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে বলছেন, কেননা এটাই এ ভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র উপায়। 

মশা নিয়ন্ত্রণের এ কাজটি করতে হবে প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে; কারণ এডিস মশা ঘরের মধ্যে ফুলদানি বা পাত্রে জমানো পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে।

১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। এতে সচরাচর মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায় না। তবে এর লক্ষণও সবসময় স্পষ্ট থাকে না।

জিকা ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়। তবে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে জিকা সংক্রমণের কয়েকটি ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে সম্প্রতি ধরা পড়েছে।

এ সম্পর্কিত খবর-